
আলু বিক্রিতে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না আগের তুলনায় আলু কেনাবেচায় পড়েছে ভাটা। দেশের অন্যতম বৃহৎ উৎপাদনকারী এ জেলায় সরকার নির্ধারিত ২২ টাকা দরে আলু বিক্রি হচ্ছে না। আলু বিক্রিতে সাড়া পাওয়া যায়নি সরকার নির্ধারিত দামে। আগের তুলনায় আলু কেনাবেচায় পড়েছে ভাটা। জেলার হিমাগারগুলোতে কমেছে আলু বিক্রি। কৃষক ও পাইকার উভয়ের মধ্যেই আলু কেনাবেচায় হাত গুটিয়ে বসে আছে। কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য অনুযায়ী জেলার সচল হিমাগারগুলোতে প্রায় ৪ লাখ টন আলু মজুদ রয়েছে। এমতাবস্থায় কৃষককুল দেশের বাইরে আলু রপ্তানির উপর জোর দিয়েছেন। পাইকাররা বলছেন, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী দাম না থাকায় সরকারের নির্ধারিত দামে আলু কেনাবেচা সম্ভব হচ্ছে না।
হিমাগার কর্তৃপক্ষও জানিয়েছেন, আলু মজুদ থাকলেও সরকারি দামে বাজারজাত করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তাই বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের বিকল্প কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন। এদিকে, সরকার ২২ টাকা দর নির্ধারণ করে দিলেও খুচরা বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। জেলার সর্বত্র খুচরা বাজারে এখনও প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দরে। আর হিমাগার থেকে এখনও কেজি প্রতি আলু কেনাবেচা হচ্ছে ১২ টাকা ১৪ টাকা দরে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেও আলুতে লোকসানই গুণতে হচ্ছে কৃষকদের। তবে সামনে আলুর দাম কিছুটা হলেও বাড়বে- এমন আশায় কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু ছাড়ছেন না কৃষক। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলার ৬টি উপজেলায় ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়।
এ থেকে উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৮২ টন আলু। গত বছর আলু উৎপাদন হয়েছিল ১০ লাখ ৩০ হাজার টন। কাজেই এ বছর ৫২ হাজার টন বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে এ জেলায়। আলু সংরক্ষণে এ জেলার ৭৪টি হিমাগারের মধ্যে সচল রয়েছে ৫৮টি হিমাগার। সচল থাকা এসব হিমাগারের আলু সংরক্ষণের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ৫ লাখ মেট্রিক টন। এতে এ জেলায় উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি তথা ৫ লাখ ৮২ হাজার টনের মতো আলু সংরক্ষণের অভাবে রয়েছে। আর হিমাগারে সংরক্ষণ করতে না পেরে আলু কৃষক তার বাড়িতে মাঁচার মধ্যে সংরক্ষণ করেছেন। অন্যদিকে, কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর এক কেজি আলু উৎপাদনে ১৬ থেকে ১৮ টাকা খরচ পড়েছে তাদের। আর হিমাগার পর্যন্ত আলু নেওয়ার জন্য পরিবহন ও শ্রমিকের পারিশ্রমিকের সঙ্গে হিামাগার ভাড়া যোগ করলে তা দাঁড়াবে ২৬ টাকা থেকে ২৮ টাকায়। এরমধ্যে গত বছর হিমাগারে আলু সংরক্ষণে ৫০ কেজির বস্তা প্রতি ভাড়া পড়ত ২১০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা।
এ বছর সেই বস্তার ভাড়া পড়ছে ৩০০ টাকা করে। মুন্সীগঞ্জ সদরের এক আলু চাষি জানান, শহরের উপকণ্ঠ পঞ্চসার ইউনিয়নের দেওয়ান কোল্ড স্টোরেজে ৫০০ বস্তা আলু সংরক্ষণ করেছি। প্রতি আলুতে খরচ পড়েছে ২২ টাকা। অথচ খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ২০ টাকা ও পাইকারিতে প্রতি কেজি ১২-১৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই লোকসানের মুখে আলু ছাড়ছি না। সরকার বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করলেও লাভ পাব না। গজারিয়া উপজেলার একাদিক কৃষক বলেন, সরকার হিমাগারে আলুর দাম কেজিপ্রতি ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও পাইকার বা আড়তদাররা সেই দামে কিনছে না। যদি নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করতে পারতাম, তাহলে অনেকটা লোকসান থেকে রক্ষা পেতাম। জেলার সিরাজদীখান উপজেলার ইছাপুরা এলাকার আনাম কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার শহীদুল ইসলাম পারভেজ বলেন, আমার হিমাগারে বর্তমানে ১ লাখ ৫৬ হাজার বস্তা আলু মজুদ আছে। এরমধ্যে মাত্র ১২ হাজার বস্তা বের হয়েছে। বাকি আলু এখনও পড়ে আছে। সরকার ২২ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে। আবার বলেছে ৫০ হাজার বস্তা আলু কিনে নেবে। এ কারণে অনেক কৃষক বেশি দামের আশায় আলু ধরে রেখেছেন, আবার কেউ কেউ ২২ টাকাতেই বিক্রি করতে চাইছেন। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে আলুর দাম কম থাকায় পাইকাররা সেই দামে কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
হিমাগারের ভাড়া খুব বেশি। সেই ভাড়া যদি কমানো যেত, তাহলে কৃষকরা লোকসান ছাড়াই কম দামে আলু বিক্রি করতে পারতেন। কিন্তু ভাড়া না কমিয়ে শুধু দাম বেঁধে দিলেই বা সরকার কিছু আলু কিনে নিলেও সংকট পুরোপুরি কাটবে না। তিনি আরও বলেন, আলু রপ্তানি না হলে এই সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান হবে না। খোলা বাজারে এরইমধ্যে মানুষ ২০ টাকা কেজি দরে আলু কিনে খাচ্ছে। জেলা আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, দেশের চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি আলু উৎপাদন করা হয়েছে। হিমাগারের বাইরে যে পরিমাণ আলু বাজারে রয়েছে- তা খেয়ে শেষ করতে আগামী বছরে ফেব্রুয়ারি মাস এসে পড়বে। আর মার্চে এসে পড়বে নতুন আলু। কাজেই আলুতে কৃষকের লোকসান পোষাতে হলে বিদেশে রপ্তারি বিকল্প নেই।
সরকার সরাসরি আলু কিনে তা দেশের বাইরে রপ্তানির পদক্ষেপ নিলেই কেবল কৃষক বাঁচবে। জাতীয় সংস্কার পার্টির চেয়ারম্যান কৃষক বান্ধব নেতা কামরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, আলু চাষিদের রক্ষায় জরুরিভিত্তিতে সরকারের উচিত উৎপাদিত আলু বিদেশে রপ্তানি করার ব্যবস্থা নেওয়া। হিমাগারে মজুদ থাকা বিপুল পরিমাণ আলুতে সয়লাব। নিধার্রিত দামে এসব আলু বিক্রি করতে না পেরে এখন কৃষকের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, গত বছর সারাদেশে আলু উৎপাদন হয় ১ কোটি ৬ লাখ মেট্রিক টন। এ বছর উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ টন। গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৪ লাখ মেট্রিক টন বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে দেশে। চাহিদার তুলনায় বেশি আলু উৎপাদন হওয়ায় সারাদেশেই আলুর দামে প্রভাব পড়েছে।