
বরগুনার পাথরঘাটায় ঝুঁকিপূর্ণ ৩৯টি সেতু দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে হাজার হাজার মানুষ। এসব সেতুর ওপর হালকা যানবাহন উঠলেই কেঁপে ওঠে, সৃষ্টি হয় দুর্ঘটনার আশঙ্কা। ২৮ বছরেও কোনো সংস্কার হয়নি এই ব্রিজগুলোতে। প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হচ্ছে ছোট শিশু শিক্ষার্থীসহ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। সংস্কারের অভাবে পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক নির্মিত সেতুগুলোর মধ্যে ৩৯টি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি সেতু ভেঙে খালে পড়ে আছে। ফলে এসব এলাকায় চলাচল করতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারীরা।
ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোতে সতর্কবার্তা দেওয়ার জন্য নেই কোনো সাইনবোর্ড। ফলে মানুষ ও যানবাহন প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাচনাপড়া বাজারে উত্তরপাশে মঠবাড়িয়া ও পাথরঘাটা উপজেলার সংযোগ সড়ককে কাঠের ব্রিজটি দীর্ঘদিন আগে ভেঙে গেলে এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে একটি সাঁকো নির্মাণ করে চলাচল করছিলেন। কিন্তু গতকাল সোমবার সকালে জোয়ারের চাপে সেটিও ভেঙে যায় ফলে দুই পাড়ের মানুষ এখন বাধ্য হয়ে খেয়া নৌকায় পারাপার করছেন। অন্যদিকে নাচনাপাড়া বাজারের দক্ষিণপাশে বেড়িবাঁধ জোয়ারের পানির চাপে ভেঙে যাওয়ায় দুই মাস আগে নৌ-বাহিনী ও উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মিলে একটি অস্থায়ী সাঁকো নির্মাণ করে করেছিলেন কিন্তু সেটিও গত ১৪ সেপ্টেম্বর আবারও প্রবল জোয়ারের স্রোতে পানিতে ভেঙে পড়ে। এতে তিন ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগে চরম আকার ধারণ করেছে। সেখানে দ্রুত স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
পাথরঘাটা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় লোহার ও পাকা মিলিয়ে প্রায় শতাধিক সেতু রয়েছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ৩৯টি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব সেতু ১৯৯৭ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছিল। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর মোট দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৩৫৮ দশমিক ৫ মিটার। রূপধন এলাকার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট সোহেল রানা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এই সেতুটি ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নির্মাণের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। পরে স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে পারাপারের জন্য বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছি। এখানে প্রচুর আলু উৎপাদন হয়। যদি সেতুটি দ্রুত নির্মাণ না করা হয়, তবে কৃষকদের কম দামে আলু বিক্রি করতে হবে এবং লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তাই আমাদের দাবি দ্রুত এই সেতুটি নির্মাণ করা হোক।
চরদুয়ানীর বাসিন্দা জামান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু দিয়ে রোগী পারাপার করতে গিয়ে আমাদের প্রচণ্ড ভোগান্তি পোহাতে হয়। প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমাদের আবেদন, হয় সেতুটি ভেঙে ফেলা হোক নয়ত দ্রুত সংস্কার করা হোক। এসব সেতু দিয়ে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয়। পাথরঘাটা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরন মন্ডল জানান, উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ ৩৯টি সেতুর তালিকা করা হয়েছে। এগুলো পুনর্নির্মাণের জন্য বাজেট আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা হবে।
এই সব সেতুতে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে কোনো সতর্কবার্তা টানানো আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, তার যোগদানের পর থেকে এসব সেতুতে কোনো সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া হয়নি। তবে তার আগে হয়ত কিছু সেতুতে সাইনবোর্ড দেওয়া ছিল।