ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নদীতে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ

দক্ষিণাঞ্চলের জেলেরা হতাশ
নদীতে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ

ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েই প্রতি নিয়ত নদীতে জাল ফেলছে জেলেরা কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্খিত ইলিশের দেখা। ভরা মৌসুমেও পিরোজপুরের ভান্ডারিয়াসহ নদীগুলোতে দেখা মিলছে না ইলিশের, হতাশায় দিন কাটছে জেলেদের। স্থানীয় জেলেরা বলছে ঝাটকা ও অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরার কারণেই ইলিশ শূন্য হয়ে পড়েছে নদীগুলো। সঠিক ভাবে যদি জাটকা রক্ষা করা না যায় তাহলে আগামীতে ইলিশের ঐতিহ্য হারাবে এই অঞ্চলের।

পিরোজপুরের নদনদীর মধ্যে বড় নদী কঁচা, পোনা, কালিগঙ্গা ও বলেশ্বর। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সারি সারি নৌকা নিয়ে জেলেরা ইলিশ আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছে, ঝাকে ঝাকে ধরা পড়ছে কচা ও বলেশ্বরের সুস্বাদু ইলিশ, কিন্তু জেলেদের কাছে গেলেই ফুটে উঠে বাস্তব চিত্র। দু তিন দিন ধরে জেলেরা জাল ফেললেও দেখা মিলছে না প্রত্যাশিত ইলিশের। মাঝেমধ্যে দু একটা ইলিশের দেখা মিললেও আকারে খুবই ছোট হাওয়ায় জেলেদের কপালে যেন চিন্তার ভাঁজ। একমাত্র সম্বল নৌকা ও জাল নিয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য কাংখিত ইলিশের আশায় জাল ফেললেও হতাশা নিয়েই বাড়ি ফেরেন জেলেরা। দক্ষিণের জেলা পিরোজপুরে কঁচা, বলেশ্বর , কালিগঙ্গা ও সন্ধ্যাসহ বেশ কয়েকটি নদী রয়েছে। কয়েক বছর আগেও এই নদীগুলোতেই ধরা পড়তো ঝাকে ঝাকে ইলিশ কিন্তু বর্তমানে জেলেদের জালে দেখা মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশের।

কচা নদীর মোহনায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা ইলিশ আহরণে দীর্ঘসময় জাল ফেলে ইলিশের আশায় নির্দিষ্ট সময় পরে জাল উঠালেও দেখা পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশের। কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে এভাবেই জাল ফেলছেন জেলেরা কিন্তু তাদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ হতাশায় দিন কাটছে তাদের। এদিকে দু-একজন কাঙ্খিত মাছ না পেয়ে বলেন, পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয় তার উপরে আছে আবার এনজিওর কিস্তি ও মহজনের দাদনের চাপ। কিছু জেলেরা অবৈধ ভাবে মাছ ধরায় নদীতে এখন ইলিশ কমে গিয়েছে। তবে মৎস্য কর্তৃপক্ষ যদি সঠিক উদ্যোগ নেয় তাহলে আবার নদীতে মাছ পাওয়া সম্ভবনা রয়েছে।

ইলিশের বাজার খ্যাত চড়খালী ফেরি ঘাটের দুই প্রান্তে বিকাল হলেই বসে ইলিশের বাজার। অন্য দিকে বেকুটিয়া সেতু সংলগ্ন বাজারে পাওয়া যায় নদীর তাজা ইলিশ স্থানীয়রা, ঢাকা, খুলনা বরিশাল? গামী যাত্রীরা ইলিশের বাজার দেখে লোভ সামলাতে না পেরে ক্রয় করে থাকেন ইলিশ। বর্তমানে ইলিশ শূন্য হওয়ার কারণে এ বাজারেও দেখা মেলে না পর্যাপ্ত ইলিশের। ক্রেতারা ইলিশ কিনতে এসে প্রায়ই ফিরে যান শূন্য হাতে। এখানে কিছু ইলিশ পাওয়া গেলেও দাম আকাশচুম্বী। ১ থেকে দেড় কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হয় ২৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩২০০ টাকা পর্যন্ত। ৫০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত ওজনের ইলিশ বিক্রি হয় ১৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৪০০ টাকা পর্যন্ত। যা কি না সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ না থাকায় এবং অতিরিক্ত দামের কারণে ইলিশের স্বাদ নিতে পারছে না এ জেলার মানুষেরা। সঠিকভাবে জাটকা সংরক্ষণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং ইলিশের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার কারণ খতিয়ে দেখার দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় আ. বারেক হাওলাদার বলছে অবৈধ জাল এবং জাটকা মাছ ধরার কারণে ইলিশ শূন্য হয়ে পড়েছে এ জেলার নদীগুলো। জেলা মৎস্য বিভাগ ইলিশ সংরক্ষণে যে পদক্ষেপ নিয়ে থাকে তা যথেষ্ট নয়। কয়েক বছর আগেও যে পরিমাণ মাছ জালে ধরা পড়তো এখন তার দেখা মিলে না। সারাদিন জাল ফেলেও দেখা মিলছে না ইলিশের। বাজারে কিছু ইলিশ পাওয়া গেলেও দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে। শুধু দামের কারণেই এই জেলার অধিকাংশ মানুষ ইলিশের স্বাদ থেকে দূরে রয়েছে।

কঁচা নদীতে ইলিশ ধরতে আসা মো. সালাম হাওলাদার বলেন, আগে আমরা অনেক মাছ পেতাম, কয়েক বছর হল আগের মতো মাছ পাই না। মাছ না পাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে বাঁধা জাল, চরগড়া, কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন অবৈধ জাল। যা দিয়ে মাছ ধরার কারণে বর্তমানে ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। সারাদিন জাল বেয়ে মাছ না পেয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। প্রায়ই পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। এর উপরে আবার এনজিওর কিস্তি। ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া এখন কোন উপায় নেই। জাটকা সংরক্ষণে সরকার কঠিন পদক্ষেপ না নিলে এই নদীতে আর মাছ হবে না।

জেলে মো. সামসুল হক জানান, বাধা জালে মাছ মেরে ফেলে, এ কারণেই আমরা ইলিশ পাই না। বর্তমানে ইলিশের ভরা মৌসুম কিন্তু জালে ইলিশ ধরা পড়ছে না। নদীতে এখন আর আগের মত ইলিশ নেই।

চরখালী ফেরীঘাটে ইলিশ বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছেন একজন শিক্ষক মিনতি দাস বলেন, ভেবেছিলাম এবছর ভালো ইলিশ পাওয়া যাবে এবং দামটা নাগালের মধ্যেই থাকবে কিন্তু সেরকমটা হয়নি। একে তো ইলিশ বাজারে কম তার উপরে গতবছরের তুলনায় দাম অনেক বেশি। গত বছর যে মাছ ১০০০ টাকায় কিনেছি এবছর একই ওজনের মাছ কেজি প্রতি ৬ থেকে ৭০০ টাকা বেশি। যা সাধারণ মানুষের কয় ক্ষমতার বাইরে। ইলিশ বাজারে মাছ কিনতে আচ্ছা অন্য ক্রেতা বলেন, বর্তমানে মাছের দাম অনেক বেশি। দুটি মাছ কিনেছি এক কেজি ৬০০ গ্রাম ওজন হয়েছে। দাম রেখেছে ২৭০০ টাকা। মাছের দাম বেশি মনে হচ্ছে।

ইলিশ বিক্রেতা মো. সোবাহান হোসেন বলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার কথা, সে পরিমাণে মাছ পাচ্ছে না জেলেরা। তাই মাছের দাম একটু বেশি। মধ্যবিত্ত এবং গরিব মানুষের ক্রয় ক্ষমতা মধ্যে মাছের দাম নেই। বাজারে মাছ কম এ কারণে দামটা একটু বেশি। কত বছর কেজির ওজনের মাছের দাম ছিল ১৬০০ টাকার মতো কিন্তু এবছর দাম বেড়ে প্রায় ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতা মামুন হোসেন বলেন, ভরা মৌসুমেও জেলেরা ইলিশ পাচ্ছে না। যাও দু একটি ওঠে আকারে ছোট। মাঝেমধ্যে কয়েকটি মাছ পাওয়া যায় তাও তো সামান্য। গতবছর এই সময়ে যে পরিমাণ মাছ দেখেছি এবছর তা দেখছি না। তাই দামটাও একটু বেশি। সিনিয়র উপজেলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নজরুল ইাসলাম বলেন, পূর্বে পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ারসহ দক্ষিণঅঞ্চলেরর নদনদী গুলোতে নাব্যতা সংকট ছিল না, এ কারণে পর্যাপ্ত ইলিশের দেখা মিলতো। বর্তমানে নদীগুলোতে নাব্য সংকট দুবোচর দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত