ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কাজ ফেলে ঠিকাদার উধাও

কুষ্টিয়ায় আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ অনিশ্চিত

কুষ্টিয়ায় আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ অনিশ্চিত

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কুষ্টিয়ায় আধুনিক মানের পশু জবাইকেন্দ্র বা কসাইখানা (স্লাটার হাউজ) নির্মাণ কাজ শুরু হলেও রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছেন ঠিকাদার। নির্মিতব্য এ প্রকল্পটি অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় শহরের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন আশঙ্কা।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে পৌরসভা ৫০ শতক জমি হস্তান্তর করে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রাণিসম্পদ পরিষেবা বিভাগ বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় কুষ্টিয়ায় এই আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। মেসার্স ইলেকট্রো গ্লোব নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলেও মাঝপথেই তা বন্ধ করে পালিয়ে যায়।

জানা গেছে, হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করে দেয়। কাজ বন্ধ থাকায় সুশীল সমাজ ও পৌরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। নির্ধারিত সময়সীমা পার হলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে পারেনি। বরং কাজ অসমাপ্ত রেখেই গা ঢাকা দিয়েছে। ফলে নির্মাণাধীন স্থাপনা বর্তমানে অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে শুরু হওয়া এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এখন ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে প্রাণিসম্পদ পরিষেবা বিভাগ। আট কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৬ টাকা ব্যয়ে এই কেন্দ্রটিতে অত্যাধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ, উন্নত বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাংস সংরক্ষণাগার, নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসম্মত জবাই পদ্ধতিসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করার কথা ছিল। এছাড়াও সেখানে পশু জবাইয়ের পর হাতের স্পর্শ ছাড়াই পশুর মাংস প্রক্রিয়াজাত, পশুর বিশ্রামাগার ও জবাইয়ের আগে-পরে পরীক্ষণ কক্ষ নির্মাণের কাজ করার কথা ছিল।

কসাইখানার নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইলেকট্রো গ্লোব, এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার মো. আসাদুজ্জামান। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের জুন মাসে, কিন্তু তার আগেই কাজ শেষ না করে পালিয়ে যায় ঠিকাদার। নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত অল্প কিছু প্রাথমিক কাজ ছাড়া দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

কুষ্টিয়া পৌর ২১নং ওয়ার্ডের লাহিনী পশ্চিমপাড়া ক্যানাল সংলগ্ন রাস্তার সঙ্গে নির্মাণাধীন কসাইখানার অবকাঠামো অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। সন্ধ্যার পর সেখানে মাদকের আড্ডা বসে বলেও জানান এলাকাবাসী।

শহরে বর্তমানে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পশু জবাই করা হয়। এতে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমনি পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আধুনিক পশু জবাই কেন্দ্রটি চালু হওয়া খুবই জরুরি বলে মনে করেন সচেতন মহল। বর্তমানে কসাইরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পশু জবাই করতে বাধ্য হচ্ছেন।

কুষ্টিয়া শহরের বাসিন্দা মাসুদ ইকবাল বলেন, আমরা ভেবেছিলাম শহরে আর অস্বাস্থ্যকরভাবে যত্রতত্র পশু জবাই হবে না। আমরা নিশ্চিন্তে গুণগত ও মানসম্মত মাংস কিনতে পারব কিন্তু সেই আশাও ভেস্তে যাচ্ছে।

কুষ্টিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান লাকী বলেন, এটা কুষ্টিয়া শহরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। সরকারের উচিত দ্রুত নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কাজ সম্পন্ন করা। নইলে শহরের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়বে।

স্থানীয় কসাই ফারুক হোসেন বলেন ‘আমরা বহুদিন ধরে একটি আধুনিক কসাইখানার দাবি জানিয়ে আসছি। শহরে প্রতিদিন যত্রতত্র পশু জবাই হয়, কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় আমাদের যেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়, তেমনি সাধারণ মানুষকেও নানা সমস্যা ভোগ করতে হয়।

ঠিকাদার মো. আসাদুজ্জামানের মুঠোফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায় না। কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, এই প্রকল্পটি কুষ্টিয়ার মানুষ এবং পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাস্তবায়ন হলে একদিকে মানুষ যেমন নিরাপদ এবং মানসম্মত মাংস খেতে পারবে পাশাপাশি রোগ বালাই ঝুঁকি থেকে মানুষ অনেকটা পরিত্রাণ পাবে।

প্রকল্পের কনসালটেন্ট প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, কসাইখানার কাজ শুরু করার পরেই মেসার্স ইলেক্ট্রো গ্লোব এর ঠিকাদার মো. আসাদুজ্জামান কাজ বন্ধ রেখে উধাও হয়ে যায়, আমরা অনেকবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এই প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার পলাতক থাকায় কাজটি অসম্পন্ন থেকে যায়।

তিনি বলেন প্রকল্পটি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে হচ্ছে তাই আমরা রিটেন্ডারের জন্য সেখানে ফাইল পাঠাব। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারব। তিনি বলেন বিশ্ব ব্যাংক থেকে নির্দেশনা আসলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। তবে কবে নাগাদ আবার কাজ শুরু হবে, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত