ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মাগুরায় ৪০ বছরেও চালু হয়নি উপকারাগার

মাগুরায় ৪০ বছরেও চালু হয়নি উপকারাগার

উঁচু দেয়াল আর লোহার মোটা শিকের ফটক দেখেই যে কেউ সহজে বলে দিতে পারবে, স্থাপনাটি একটি কারাগার। উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চার দশক আগে তৎকালীন সরকার মাগুরার মহম্মদপুরে তৈরি করেছিল এই কারাগারটি। কিন্তু নির্মাণের পর চালু না হওয়ায় কারাগারটিতে কখনই রাখা হয়নি কয়েদি। উপজেলা সদরের বাওইজানি গ্রামে এই উপ-কারাগারটি নির্মাণ করা হয়। দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ হলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে প্রকল্পটির কাজ থমকে গেলে কারাগারটি আর চালু হয়নি।

দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় স্থাপনাটি বর্তমানে ‘ভুতুড়ে বাড়িতে’ পরিণত হয়েছে। সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদর পর্যন্ত আসামি আনা-নেওয়ার ঝামেলা কমিয়ে স্থানীয় বিচারিক কার্যক্রমকে গতিশীল করতে ১৯৮৫ সালে তৎকালীন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকার উপ-কারাগারটি নির্মাণ করে। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে প্রকল্পটির পরবর্তী কার্যক্রম আর আলোর মুখ দেখেনি। উদ্বোধনের আগেই তালা পড়ে যায় ফটকে। ২ দশমিক ৭১ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত উপকারাগার কমপ্লেক্সে পুরুষ কয়েদিখানা, নারী কয়েদিখানা, রান্নাঘর, কার্যালয় ভবন, নিরাপত্তা প্রহরীদের থাকার জায়গা, পাম্প হাউস ও কর্মকর্তাদের একটি আবাসিক কোয়ার্টার আছে। ২০ জন পুরুষ ও পাঁচজন নারী কয়েদির থাকার উপযোগী করে উপ-কারাগারটি বানানো হয়েছিল। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় চার দশক আগে নির্মিত স্থাপনার বেশির ভাগের জরাজীর্ণ অবস্থা।

ভবনগুলোর পলেস্তারা খসে পড়েছে। দরজা-জানালার কাঠামো নেই। ভবনটি দেখভালের জন্য প্রশান্ত কুমার নামে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের একজন কর্মচারী আছেন। প্রশান্ত কুমার বলেন, ‘উপ-কারাগারে কর্মকর্তাদের জন্য বানানো কোয়ার্টারে আমি পরিবার নিয়ে থাকছি। ভবনগুলো পরিত্যক্ত হলেও ঝুঁকি নিয়েই থাকছি এবং দেখভাল করছি।’ মাগুরার গবেষক (ইতিহাস ও ঐতিহ্য) বিধ ডা. কাজী তাসুকুজ্জামান বলেন, প্রায় চার দশক আগে বিচারিক প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্দেশে নির্মিত হলেও এক দিনের জন্যও চালু হয়নি উপ-কারাগারটি। ১৯৮৫ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে এটি নির্মিত হয়। নির্মাণের পর থেকেই তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকায় কারাগারটি এখন স্থানীয়দের কাছে ‘ভুতুড়ে বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, স্থাপনাটি কোনো কাজে আসছে না।

শুধু শুধু জায়গা দখল করে আছে। সরকারি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। মহম্মদপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আবদুর রব বলেন, স্থানটি অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হলেও সংস্কার ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও জনবল তাদের নেই। এটি সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়। এখানে অসহায় দুস্থ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ অভিভাবকহীন ছিন্নমূল পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। যদিও স্থাপনার বেশিরভাগই এখন পরিত্যক্ত হয়ে গেছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে এমন ২৩টি উপ-কারাগার রয়েছে, যেগুলোর একটিও এখন কার্যকর নেই। পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণী অচলাবস্থা এবং অবহেলার কারণে এসব সরকারি স্থাপনা ধীরে ধীরে ধ্বংসের মুখে। জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, মহম্মাদপুর উপ-কারাগারটি বর্তমান সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন আছে, সেখানে আমাদের একজন কেয়ারটেকার আছেন। তিনি সেখানটা দেখভাল করেন। তবে সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র করার জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত