ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নাসিরনগরে হাওরের খালে পানি নেই

১৯ হাজার বিঘা জমির বোরো আবাদ অনিশ্চিত
নাসিরনগরে হাওরের খালে পানি নেই

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়ন হাওর বেষ্টিত এলাকা। মেঘনার পূর্ব পাড়ে এর অবস্থান। ওপারে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের বাঙালপাড়া ইউনিয়ন। মাঝখানে মেঘনার শাখা চিকনদিয়া ও কাইঞ্চার খাল। বছরের অর্ধেক সময় এখানকার মানুষ নৌকায় চলাচল করে, বাড়ির পাশের খালেই থাকে পানি। একসময় এই দুটি খালের পানিতেই সেচ দিত ওই এলাকার প্রায় ১৯ হাজার বিঘা জমি। কিন্তু এখন খালের বুক পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানি সেচের অভাবে হাজারও কৃষক পরিবার বোরো মৌসুমে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, কাইঞ্চার খালের পানিতে গোয়ালনগর, নোয়াগাঁও, মাছমা, আশানগর, দক্ষিণদিয়া ও রামপুর-এই ছয়টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার বিঘা জমিতে চাষ হয়। অন্যদিকে চিকনদিয়া খালের পানিতে সোনাতলা, ঝামারবালি, কদমতলী ও মাইজখলা গ্রামের প্রায় চার হাজার বিঘা জমি আবাদ হয়। চলতি বোরো মৌসুমে খাল দুটিতে পানি না থাকলে এসব জমি অনাবাদি থেকে যাবে। নাসিরনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন জানান, গোয়ালনগর ইউনিয়নে এ বছর ১৬ হাজার বিঘা জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু খাল দুটির নাব্যতা না ফিরলে অন্তত ১০-১৪ হাজার বিঘা জমি অনাবাদি থেকে যাবে। এতে প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার মণ ধানের উৎপাদন কমবে।

স্থানীয়দের ভাষায়, মেঘনা নিজের পথ হারাইছে। গত এক দশকে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম এলাকায় নির্বিচারে বালু তোলায় নদীর প্রবাহ সরে গেছে। ফলে চিকনদিয়া আর কাইঞ্চার খালের মুখে জমেছে পলি, ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেছে পানির প্রবাহ।

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, নভেম্বর মাসের মধ্যে খাল দুটো খনন না করা হলে এক ফসলি হিসেবে পরিচিত গোটা হাওর অঞ্চলে ধান আবাদ সম্ভব হবে না। গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক জানালেন, এই এলাকার কৃষকদের পক্ষ থেকে গত কয়েক বছর ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএডিসি) লিখিত আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ সাড়া দেননি, মাঠে আসেননি। তিনি নিজেও বছরের পর বছর পাউবো ও বিএডিসির অফিসে ঘুরেছেন জানিয়ে বলেন, কর্মকর্তাদের বারবার জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। গত বছর অর্ধেক জমি অনাবাদি ছিল, এ বছর সবই বন্ধ হয়ে যাবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চার কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৩০ ফুট প্রস্থ চিকনদিয়া খাল খননের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে আট লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই বরাদ্দের বিপরীতে কোনো কাজ হয়নি; বরং বরাদ্দের টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়ে গেছে।

গোয়ালনগর থেকে আশানগর পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে কাইঞ্চার খাল পলিতে ভরাট হয়ে আছে। কোথাও কোথাও চরও উঠেছে। একইভাবে সোনাতলা থেকে ঝামারবালি পর্যন্ত চার কিলোমিটার চিকনদিয়া খালও প্রায় শুকিয়ে গেছে। পানির প্রবাহ নেই বললেই চলে। এখন মাঠে চাষিরা চারা রোপণ বা পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকার কথা, কিন্তু মাঠজুড়ে নীরবতা, কোথাও চাষাবাদের কোনো চিহ্ন নেই।

নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক সঞ্জিব দাস বলেন, কাইঞ্চার খালই আমাদের জীবিকার ভরসা। পানি না থাকলে ধান চাষ হয় না, মাছও পাওয়া যায় না। গোয়ালনগর গ্রামের ফাইজুল ইসলাম জানান, এ বছর অন্তত ১৪ হাজার বিঘা জমিতে চাষ করা সম্ভব হবে না। ১০-১২ হাজার কৃষক পরিবার এই ফসলের ওপর নির্ভরশীল।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনা নাছরিন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। শিগগিরই এর সমাধান হবে বলে আশা করছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আকাশ দত্ত বলেন, বরাদ্দ পাওয়া গেলে খনন কাজ শুরু করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত