
মুন্সীগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী ও পুরোনো হাটগুলোর মধ্যে গোয়ালিমান্দ্রা হাট অন্যতম। অন্তত ২০০ বছর ধরে বসছে এই হাটটি। একসময় শুধুমাত্র গবাদি পশুর জন্য জমজমাট ছিল। জনপ্রিয়তা পেলেও এখন বহুমুখী বাজারে পরিণত হয়েছে গোয়ালিমান্দ্রা হাট। এখন থেকে ১৩০ বছর আগে লেখা যোগেন্দ্রনাথ গুপ্তের বিক্রমপুরের ইতিহাস বইতে বলা হয়- মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের এই এলাকাটির আদি নাম মান্দ্রা। ২৭০ বছর আগে তৎকালীন বিক্রমপুরের রাজা মহারাজ রাজবল্লভের শাসনামলে ভারতের বিহার রাজ্যের হিন্দু-বৌদ্ধদের তীর্থক্ষেত্র গয়া নামক স্থানে গিয়ে তিনি স্থানীয় গয়ালী পুরোহিতদের এই হাট থেকে নিস্কর ব্রম্মোত্তর দান করেছিলেন, এজন্য মান্দ্রা গ্রামের সঙ্গে পরে গোয়ালী সংযোজন হয়ে হাটের নাম হয় গোয়ালীমান্দ্রা হাট, সাপ্তাহিক এই হাট বসে প্রতি মঙ্গলবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। দূরদূরান্তের কয়েক হাজার মানুষ হাটে আসেন নিয়মিত। হাটের ৩ পাশ ঘিরে রয়েছে মৃতপ্রায় এক দিঘী। শুরুতে এই হাটে ঢুকতেই দেখা মেলে ছাগল আর ভেরা। এ সব পশু নিয়ে দুই পাশে দাঁড়িয়ে বিক্রেতারা। তাদের সঙ্গে দর কষাকষি করে সুবিধামতো পশু নিচ্ছেন ক্রেতারা। পুরুষ বিক্রেতার পাশাপাশি অনেক নারী বিক্রেতাও হাটে আসেন বাড়িতে পালন করা হাস-মুরগী বিক্রি করতে। তবে তরুণদের কাছে হাটটি জনপ্রিয় কবুতরের জন্য। বিভিন্ন জাতের মুরগীর বাচ্চা পাওয়া যায় গোয়ালিমান্দ্রায়। স্থানীয়রা এখান থেকে বাচ্চা নিয়ে লালন পালন করেন বাড়িতে। রয়েছে পেঁয়াজ, মরিচ, মিঠাই, শুটকি, তাজা মাছ, লুঙ্গি পোষাক ইত্যাদি। হাতে বানানো পাটি কিংবা কুলাও বিক্রি হয় হাটটিতে। পাওয়া যায় স্থানীয় খেতের শাকসবজি ও বিভিন্ন ফলফলাদি। হাটে ঢুকতেই যে সুউচ্চ স্থাপনাটি নজর কারে সেটি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত গোয়ালীমান্দ্রা বিজয়স্তম্ভ। ইতিহাস আর ঐতিহ্যে মিলে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের গোয়ালিমান্দ্রা হাট। হাটের দিন মনোযোগ দিয়ে পুরো হাট ঘুরতে গেলে আপনার সময় লাগবে ১-২ ঘণ্টা। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্থানীয় লোকজনের কয়েক পুরুষের আবেগ। একসময় বর্ষাকালে খুলনা, বরিশাল ফরিদপুর অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের যাতায়াত ছিল এই হাটে। তবে আশপাশের খালগুলো ভরাট হয়ে সংকুচিত হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সেই নৌপথ বাণিজ্য। হাটে গেলে বড় আকারের ছেকা রুটি আর মিষ্টি খেতে ভুলবেন না। ভোজনরসিকদের কাছে এই হাটের প্রধান আকর্ষণ যেন এটিই। এছাড়া মিষ্টি দই, দিয়ে বানানো ঘোল, ছানা কিংবা মাঠও বেশ স্বাদের। একসময়ের জনপ্রিয় গোয়ালিমান্দ্রা হাট এখনও টিকে আছে এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে। এই হাটের ইজারাদার মো. কাউসার শেখ বলেন, আমাদের এই গোয়ালী মাদ্রা হাট ২০০ বছর পুরানো একটি হাট এই হাটে কিছু সমস্যা ছিল যেমন রাস্তা, টিনের সেটের ব্যবস্থা, পানির ব্যবস্থাসহ আরও কিছু নানাবিধি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ছিল কিন্তু আমি মোহাম্মদ কাউসার শেখ এই হাটের ইজারা নেওয়ার পর থেকে এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি এবং আগের রূপে ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে দিনে দিনে এই হাটের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে কেউ কেউ দূরদূরান্ত থেকে আসে ঐতিহ্যবাহী হাটটি দেখতে। এরইমধ্যে এই হাটটি ভেতর দিয়ে যাওয়া রাস্তা এবং টয়লেট নির্মাণের কাজ চলছে। হাটে আসা ক্রেতা বিক্রেতাদের নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যমেরা বসানোর কাজটিও করা হচ্ছে।