
ধারাবাহিক ব্যর্থতার পরে রংপুরে সরকারিভাবে বোরো ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান সফল হয়েছে। ধান-চাল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সংগ্রহ হয়েছে। চালের থেকে ধান বেশি সংগ্রহ হয়েছে। রংপুর আঞ্চলিক খাদ্যনিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের আট জেলায় বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৫ হাজার ৭৫৫ মেট্রিক টন। সেখানে অর্জিত হয়েছে ৭১ হাজার ৮২২ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ হাজার মেট্রিক টন বেশি। অন্যদিকে, সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭২৮ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জন হয়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন। সংগ্রহ শুরু হয়েছিল চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল থেকে এবং সংগ্রহ অভিযান শেষ হয়েছিল ১৫ আগস্ট। ধান-চাল সরবরাহে হাস্কিং মিলার ছিলেন ২ হাজার ৯০০ জন এবং অটোমেটিক মিলার ছিলেন ২৮৩ জন। ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য ছিল প্রতি কেজি ৩৬ টাকা এবং চালের দাম ছিল ৪৯ টাকা। জানা গেছে, বিগত দিনগুলোতে সরকারি দামে বিক্রি করলে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের উৎপাদন খরচ উঠত না। সরকারের নির্ধারিত দামের তুলনায় বাজারে দাম বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও সরকারি মূল্যে চাল সরবরাহ করতে আগ্রহ পেতেন না।
খাদ্য অফিসের মতে, এবার মিলারদের বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধ করার ফলে মিলাররা ধান-চাল সরবরাহ করতে উৎসাহ পেয়েছেন। এছাড়া অনেক মিলার নিজের লাইসেন্স টিকিয়ে রাখার স্বার্থে কিছু ক্ষতি স্বীকার করে ধান-চাল সরবরাহ করেছেন। একাধিক মিলার বলেন, সরকারি গোডাউনে চাল দিয়ে খুব একটা লাভ হয়নি। সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ব্যবসার লাইসেন্সের স্বার্থে ধান-চাল সরবরাহ করতে হয়েছে। তারা বলেন, এবার সরকারি দামের সঙ্গে বাজারমূল্যের কিছুটা সামঞ্জস্য থাকায় খুব একটা লোকসানে পড়ে হয়নি।
কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মতে, বিগত দিনে এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে খরচ পড়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। এক বিঘা জমির ধান সরকারি মূল্য ছিল ১০ হাজার টাকার কিছু ওপরে। সরকারি মূলে ধান বিক্রি করলে কৃষকদের বিঘাপ্রতি লোকসান হতো এক হাজার টাকার ওপরে। অন্যদিকে, চাল ব্যবসায়ীদের প্রতি কেজিতে আর্থিক ক্ষতি হতো ৩ থেকে ৪ টাকা। এবার সরকারি মূল্য কিছুটা বেশিথাকায় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি তাদের। বিগত আমন ও বোরো মৌসুমে কৃষক ও মিলাররা ধান সরবরাহে আগ্রহ না দেখানোয় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান অনেকাটাই ব্যর্থ হয়েছিল রংপুর বিভাগে। আরেকটি কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন খাদ্য বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানির ফলে গুদামে ধান দিতে আগ্রহ দেখাতেন না অনেক মিলার। তবে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও মিলার জানান, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার খাদ্য অফিসের হয়রানি কম হওয়ায় ধান-চাল সংগ্রহ সফল হয়েছে।
রংপুর আঞ্চলিক খাদ্যনিয়ন্ত্রক জহিরুল ইসলাম বলেন, বাজারদরের সঙ্গে সরকারি দরের সামঞ্জস্য থাকায় এবং মিলার ও ব্যবসায়ীদের আন্তরিকতা থাকায় এবার ধান-চাল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্জিত হয়েছে।