
কোটি টাকা চাঁদার দাবিতে অপহরণ করে নির্যাতনের অভিযোগে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহ উদ্দীন, সদর থানার সাবেক ওসি, গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ওসি ও সাবেক পিপিসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সাতক্ষীরার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিলাস মন্ডলের আদালতে গতকাল বুধবার মামলাটি করেন দেবহাটা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আল ফেরদাউস আলফা। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ মামলার আসামিরা হলেন- সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহ উদ্দীন, সদর থানার সাবেক ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ওসি মহিদুল ইসলাম, সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ ও তার ছেলে মো. রাসেল।
মামলার বিবরণীতে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁকাল চেকপোস্টে বাদীর দেড় কোটি টাকার ভারতীয় সামুদ্রিক মাছ জব্দ করে বিজিবি। পরে বাদীর বৈধ কাগজপত্র বিজিবির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু বিজিবি কাগজপত্র যথাযথ বুঝতে না পেরে সেই মাছ সাতক্ষীরা সদর থানায় প্রেরণ করেন। বৈধ কাগজ পাঠালেও মাছ ছাড়া হবে না, এমন হুমকি দিয়ে সদর থানার তৎকালীন ওসি মোস্তাফিজুর রহমান ফোনে বাদীর কাছে দেড় কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন।
একপর্যায়ে বাদী ফোনের সুইস অফ করতে বাধ্য হন। এরপর ওইদিন মধ্যরাতে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহ উদ্দীন ও ডিবির ওসি মহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০-১২ জন সাদা পোশাকধারী পুলিশ বাদীর পলাশপোলস্থ বাড়িতে গিয়ে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। সে সময় বাড়িতে থাকা ১৫ লাখ টাকা দিয়েও রক্ষা পাননি তিনি।
বাদীর ভাই আব্দুল আলিম ও বাদীকে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে তুলে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন চালায় পুলিশ। চাঁদা না দেওয়ায় সাতক্ষীরা সদর থানায় মাছ আটকের ঘটনায় করা মামলায় তাদের অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। এদিকে পরস্পর যোগসাজসে জব্দকৃত দেড় কোটি টাকার মাছ মাত্র ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় বিক্রি দেখিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন আসামীরা।
মামলার বিবরণীতে আরও বলা হয়, এ মামলায় জামিন করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বাদীর কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা চাঁদা নেন সাতক্ষীরা জজ আদালতের তৎকালীন পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ ও তার ছেলে মো. রাসেল। আসামিদের শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারে বাদী তার দৃষ্টিশক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলেছেন, আর্থিক এবং সামাজিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এমতাবস্থায় আরজীতে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেছেন বাদী। তৎকালীন সময়ে মামলার অনুকূল পরিবেশ না থাকায় মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে আরজীতে আরও উল্লেখ করা হয়।