ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ছিনতাই ও গণপিটুনিতে অস্থিরতা বাড়ে

এসএম শামীম
ছিনতাই ও গণপিটুনিতে অস্থিরতা বাড়ে

সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির কারণে সাধারণের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। একের পর এক ছিনতাই, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি ঘটনায় আতঙ্ক ভর করছে। ফলে একদিকে যেমন অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে, তেমন সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতায় এগিয়ে আসছে। গণপিটুনির ঘটনা সম্প্রতি বেশ কয়েকটি শহরে ঘটেছে এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানেও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে গণপিটুনির খবর এসেছে। গণপিটুনি কেবল আইন ভঙ্গ করে না, এটি একটি অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া যা সমাজে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

ঢাকার বনশ্রী, উত্তরা, টঙ্গী, সিদ্ধিরগঞ্জ, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে ছিনতাই। ২৩ ফেব্রুয়ারি বনশ্রী এলাকায় সাত ছিনতাইকারী এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে বিপুল পরিমাণ সোনা ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকায় ২৫ ফেব্রুয়ারি ছিনতাইকারী সন্দেহে দুই যুবককে জনতা গণপিটুনি দেয়। টঙ্গী স্টেশন রোডে একই দিন এক যুবককে ছিনতাইকারী সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জে ছিনতাইকারী সন্দেহে এক যুবককে গণপিটুনি দেয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় দেখানো হচ্ছে, জনগণ নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়ে অপরাধীর শাস্তি দেয়ার চেষ্টা করছে, যা জনগণের মধ্যে আইন অমান্য করার প্রবণতা সৃষ্টি করছে।

অপরাধীকে তাৎক্ষণিভাবে গণপিটুনির শাস্তি আইনবিরোধী এবং সমাজের জন্য বিপজ্জনক। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সমাজে যেমন অস্থিতিশীলতা তৈরি করে তেমনি আইনের শাসনের প্রতিও অবজ্ঞা। সমাজে বিচার প্রক্রিয়ার একটি নির্দিষ্ট ধারা রয়েছে। মানুষের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বিচার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য দেশে প্রচলিত আইন আছে। গণপিটুনির মাধ্যমে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাদের বিচারিক ক্ষমতা নিজের হাতে নেয়, যা একটি অস্থির সমাজের জন্ম দেয়। সাধারণ মানুষ যদি মনে করে, তারা যে-কাউকে সন্দেহের ভিত্তিতে শাস্তি দিতে পারে, তবে এটি সমাজে ভুল বার্তা পাঠাবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে সমাজে ব্যক্তি নিরাপত্তাহীনতার শিকার হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদিভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। আইন নিজের হাতে তুলে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এ ধারা চলতে থাকলে যে কেউ যে কোনো মুহূর্তে হামলার শিকার হতে পারেন। তাই সমাজে সবার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ গড়তে আইনের শাসন অপরিহার্য।

গণপিটুনি একজন ব্যক্তির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে। প্রতিটি ব্যক্তির বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং এটি আইনি প্রক্রিয়ায় হতে হবে। আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে কোনো ব্যক্তি অপরাধী কি না তা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে শাস্তি দেয়া যাবে না। গণপিটুনি একটি অস্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া, যেখানে সন্দেহভাজনকে শাস্তি দেয়া হয় জনতার মর্জি অনুযায়ী। গণপিটুনিতে সন্দেহভাজন ব্যক্তির মৃত্যু স্পষ্ট হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন। কেউ যদি মনে করে আইন তার হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার রয়েছে, তবে সমাজে ন্যায় বিচারের দ্ষ্টৃান্ত ঝুঁকির মুখে পড়বে এবং একটি ভুল এবং বিপজ্জনক উদাহরণ সৃষ্টি করবে।

ছিনতাই, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধ রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে হবে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত, যেন অপরাধীদের সহজে আইনের আওতায় আনা যায়। সিসিটিভি ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেও অপরাধ রোধ করা যেতে পারে। অপরাধীদের দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত হলে সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে।

এ ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার; যাতে মানুষ বুঝতে পারে আইনের বাইরে গিয়ে কোনো অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া অগ্রহণযোগ্য। সেইসঙ্গে জনগণকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখানো প্রয়োজন, যাতে তারা আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। এজন্য প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, যেন কেউ আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হলে প্রতিষ্ঠিত হবে সুশাসন। তাই অপরাধ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত