ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বর্ষায় নগরীর জলাবদ্ধতায় কার্যকর পদক্ষেপ দরকার

সাফায়াত বিন নাসির
বর্ষায় নগরীর জলাবদ্ধতায় কার্যকর পদক্ষেপ দরকার

বর্ষার রিমঝিম সঙ্গীত হয়তো অনেকেরই প্রিয়; কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই মনোরম দৃশ্যপট রাজধানীতে পরিণত হয়েছে এক দুঃস্বপ্নের প্রতিচ্ছবিতে। মৌসুমের সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুসমান জল জমে নগরীর অলিগলি থেকে রাজপথ পর্যন্ত, যা রাজধানীবাসীর দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। শুধু বর্ষাকাল নয়, বর্তমানে অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিও নগরীতে জলাবদ্ধতার অভিশাপ বয়ে আনছে। সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর প্রায় ৫০ মিলিমিটার এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ছে, যা একদিকে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তাকে যেমন চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে, তেমনি নগরবাসীর অসচেতনতাকেও স্পষ্ট করে তুলছে।

বিগত সরকারগুলোর আমলে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হলেও, বাস্তবতা হতাশাজনক। দুই সিটি কর্পোরেশন গত কয়েক বছরে প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি টাকারও বেশি অর্থ খরচ করেছে; কিন্তু জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান আজও অধরা। উপকূলীয় অঞ্চলে সামান্য নিম্নচাপ সৃষ্টি হলেই তার প্রভাবে রাজধানী তলিয়ে যায়, আর দুর্ভোগে নাকাল হন নগরবাসী। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সিটি কর্পোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগের অভাব সুস্পষ্ট। একটি সুদূরপ্রসারী মহাপরিকল্পনা এড়িয়ে শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা জলাবদ্ধতাকে স্থায়ীভাবে নির্মূল করতে পারছে না। আগে জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার ওপর ন্যস্ত থাকলেও, পরবর্তীতে তা দুই সিটি কর্পোরেশনের হাতে আসে। দায়িত্ব হস্তান্তরের পর খাল, জলাশয়, নর্দমা ও লেক পরিষ্কারের দিকে নজর দিলেও, সাফল্যের দেখা মেলেনি।

ইমারত নির্মাণ নীতিমালা অনুযায়ী ভবন নির্মাণের সময় ৪০ শতাংশ ফাঁকা জায়গা থাকার কথা থাকলেও, কংক্রিটের এই শহরে প্রায় শতভাগ জায়গাজুড়ে ভবন নির্মিত হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির পানি স্বাভাবিকভাবে নিষ্কাশিত হতে পারছে না। পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম খাল, নালা ও বক্স-কালভার্টগুলো আবর্জনার স্তূপে পরিপূর্ণ। ঢাকায় প্রতিদিন উৎপন্ন প্রায় সাত হাজার টন বর্জ্য প্রতিনিয়ত গিয়ে পড়ছে এসব খাল, নালা আর ড্রেনে, যা পানিপ্রবাহে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করছে। অবৈধ দখলদারিত্ব ও অপরিকল্পিত ভরাটের কারণে খালগুলো আজ মৃতপ্রায়। জলাধার ভরাট করে ভবন নির্মাণের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা জলাবদ্ধতার সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলেছে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের প্রাথমিক নালা বা লোকাল ড্রেন ও ক্যাচপিটগুলোতে আবর্জনা জমে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিগত সরকারগুলোর আমলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর না দিয়ে বরং বড় আকারের প্রকল্প গ্রহণে বেশি আগ্রহী ছিল।

জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজন একটি সমন্বিত ও সুদূরপ্রসারী মহাপরিকল্পনা। এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হলে প্রাথমিক নালাগুলোকে নিয়মিত পরিষ্কার করে তাদের পানি ধারণ ও নিষ্কাশন ক্ষমতা বাড়াতে হবে। প্রাথমিক নালাগুলোর সঙ্গে বড় নালা এবং খাল-জলাধারের নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপন করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত