নিজের যা আছে, দিনশেষে আপনি বা আমি তাতে তৃপ্ত থাকতে পারলেই প্রকৃত সুখের আশা করা যায়। নিজ নিজ অবস্থানে আমরা প্রত্যেকেই ভালো আছি- এই উপলব্ধি জন্ম নিলেই অন্তরের শান্তি আসে।
আমার সঙ্গে অন্যের তুলনা করতে গেলেই মন্দ প্রভাত দলাপাকিয়ে এগিয়ে আসে। জীবনের, অবস্থানের কিংবা প্রাপ্তির নামে অভিযোগ কমলে তবেই ভালো থাকা সহজ হয়। মানুষের পরিচয় পদণ্ডপদবি কিংবা চেয়ারের চেয়েও বেশি তার মনুষ্যত্বে ফুটে ওঠে।
শারীরিক সুস্থতার মতো দ্বিতীয় কোনো বড় নেয়ামত নেই। ছোটখাটো একটি পরিচয়, বৈধভাবে উপার্জিত দু’পয়সা, আর প্রিয়জনদের সঙ্গে একসঙ্গে থাকতে পারা- এই একজীবনে এ-ই হোক সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত চাওয়া। দুর্বার ক্ষমতা, বিপুল অর্থ ও অসীম লোভ মানুষকে মানুষের পথ থেকে পশুর পালে ঠেলে দেয়। অল্পে তুষ্ট থাকতে পারাটা একটি নেয়ামত; কৃতজ্ঞতা ও বিনয় সেই নেয়ামতের বারাকাহ বাড়িয়ে দেয়।
হা-হুতাশে, অস্থিরতায় বা শুধু অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ালে মানুষ জীবিতাবস্থাতেই হারিয়ে যায়। অথচ যারা এর বিপরীত মেরুতে, তারা মরেও বেঁচে থাকে।
বেঁচে থাকার জন্য ভালোবাসা, বিশ্বাস ও ত্যাগ অতি প্রয়োজনীয়। আত্মলোভে মত্ত মানুষ জীবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে না। বলতে জানার চেয়ে থামতে জানার শিক্ষা অনেক বেশি জরুরি। আমরা একবার ছুটতে শুরু করলে আর পেছনে তাকাতে চাই না! একা মরুতে হারিয়ে গেলে বাঁচা কঠিন হয়ে পড়ে। মহীরুহও একা বাঁচে না; তাকেও দল-সমাজের মাঝে টিকে থাকতে হয়।
আমার গাত্রবর্ণ, আমার গোত্র কিংবা উত্তরাধিকারসূত্রে অপেক্ষমাণ সম্পদের ওপর আমার কর্তৃত্ব যৎসামান্য। কিন্তু সুশিক্ষা, সচ্চরিত্র ও সদাচারে আমার সক্রিয় ভূমিকা এবং কৃতিত্বপূর্ণ কর্তৃত্ব আছে। মানুষ হতে হলে সততা, মহানুভবতা ও বিনয় থাকতেই হবে। সহমর্মিতা ও সহনশীলতা ছাড়া কেউ বড় হয়নি, ভালোবাসা ছাড়া কেউ সম্মান কুড়ায়নি, আর যত্ন ছাড়া কেউ আপন হয়নি- এমন দৃষ্টান্ত আশপাশে খুবই বিরল।
আত্মতৃপ্তি অর্জনের শপথেই হোক জীবন কল্যাণমুখী। ভালো থাকা এবং অন্যকে ভালো রাখার সংকল্পই হোক আমাদের শ্রেয়তর প্রত্যয়।