ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নামসর্বস্ব দলের আবেদনের হিড়িক

নিবন্ধন-প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনুন

নিবন্ধন-প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনুন

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য বর্ধিত সময় শেষ হয়েছে গত রোববার। ইসির তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে শেষ দিনে আবেদন পড়ে ৫০টির বেশি। এ পর্যন্ত ইসিতে মোট আবেদন করেছে ১৪৭টি রাজনৈতিক দল। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

কারণ ইসির ডেসপাচ থেকে তথ্য একীভূত করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানাবে ইসি সচিবালয়। সবকিছু যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্য দলকে নিবন্ধন দেবে ইসি। শেষ দিনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধন পেতে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

আলোকিত বাংলাদেশের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর গত ১০ মাসে গঠিত হয়েছে অন্তত ৩০টি দল। এর মধ্যে প্রায় দুই মাস আগে আত্মপ্রকাশ করা দলও এবার আবেদনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এত কম সময়ে কীভাবে নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবেদনকারী দলগুলো সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের মধ্যে মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ দলের নিবন্ধনের শর্ত পূরণের যোগ্যতা রয়েছে। বাকি ৯৭ শতাংশ দলের বেশির ভাগই নামসর্বস্ব। অনেক দলের কার্যালয়ের ঠিকানা, এমনকি ফোন নম্বর পর্যন্ত ভুয়া।

আবেদনকারী অনেক দলের নেতাকর্মী দূরের কথা, বেশির ভাগেরই নেই কার্যালয়। ইসিতে দেওয়া ঠিকানায় বেশির ভাগ দলের কোনো অস্তিত্বই নেই। কমিশনে উল্লিখিত ঠিকানায় রয়েছে কারও বাড়ি বা অফিস। এসব দলের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী, সাবেক আমলা ও পেশাজীবী। এর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ছাড়া বেশির ভাগ দলের অস্তিত্ব শুধু কাগজে-কলমে। অন্তর্বর্তী সরকারের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ডিসেম্বরে ভোটের লক্ষ্য ধরে নতুন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দিতে গত ১০ মার্চ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি। সে সময় ইসিতে আবেদন করে ৬৫টি নতুন রাজনৈতিক দল। এরপর এনসিপিসহ বেশ কিছু দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দলের নিবন্ধন আবেদনের সময়সীমা ২০ এপ্রিল থেকে বাড়িয়ে ২২ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। সম্প্রতি আদালতের আদেশে ইসির নিবন্ধন স্থগিত হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আর নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলের ইসির নিবন্ধন পেতে কিছু শর্তপূরণ করতে হবে। এর বাইরে নিবন্ধনের জন্য দলের গঠনতন্ত্রের সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিধান রয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে বিদ্যমান আইনবিধি অনুযায়ী ১০টি তথ্য আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। নিবন্ধনের জন্য জমা পড়া আবেদনগুলো যাচাই-বাছাইয়ে ইসির একটি কমিটি রয়েছে। আবেদনকারীরা শর্তপূরণ করেছে কি না, কমিটির সদস্যরা সেটি দেখবেন। আইনে উল্লিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে না পারা কোনো দলকেই নিবন্ধন দেওয়া হবে না। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে মাঠে কাজ করছে। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন জরুরি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা হতে হবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে। নিবন্ধন বিধিমালার যে শর্তগুলো আছে, সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে কি না, তা নির্বাচন কমিশনকে যাচাই করতে হবে। আশা করছি, কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন-প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত