প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভয়াবহ সহিংস ঘটনা দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার নৈতিক ও কাঠামোগত দুর্বলতাকে স্পষ্ট করেছে। শিক্ষাঙ্গনে এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীদের ওপর এমন হামলা, কর্তৃপক্ষের অসহায়ত্ব এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় এ প্রশ্ন সামনে আসে- দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অঙ্গনগুলো আদৌ নিরাপদ কি না। চবির শিক্ষার্থী ও স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শিক্ষার্থীদের নির্মমভাবে পেটানো, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের ওপর হামলার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতাই স্পষ্ট হয়। এ ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন হলো, নিষিদ্ধ সংগঠন কীভাবে সক্রিয় হলো, কে তাদের পৃষ্ঠপোষক? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন ব্যর্থ হলো, এটাও এক প্রশ্ন। তারা শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় কী ভূমিকা রেখেছে, তার তদন্ত হওয়া দরকার।
অন্যদিকে বাকৃবিতে সমন্বিত ডিগ্রির দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে উপাচার্যসহ দুই শতাধিক শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং পরে বহিরাগতদের হামলায় আন্দোলনকারীদের আহত হওয়ার ঘটনা একইভাবে উদ্বেগজনক। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ-প্রশাসনের ইন্ধনেই বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে এসেছে। এমন অভিযোগ যদি মিথ্যাও হয়, তবুও এটি প্রশাসনের প্রতি শিক্ষার্থীদের আস্থাহীনতারই বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষার পরিবেশ যাতে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ থাকে, তা নিশ্চিত করা প্রশাসনেরই দায়িত্ব।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যে সহিংসতা চলছে, তা শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, পুরো সমাজের জন্য অশনিসংকেত। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা পেশিশক্তি, প্রশাসনিক দুর্বলতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেরিতে সাড়া দেওয়া, শিক্ষক-প্রশাসনের অদূরদর্শিতাণ্ডসব মিলিয়েই এ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। উচ্চশিক্ষাঙ্গনে যদি আতঙ্ক, সহিংসতা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করে, তবে পুরো জাতিকেই এর খেসারত দিতে হবে। আমরা চাই, শিক্ষাঙ্গন হোক জ্ঞানচর্চা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সব পক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক, শান্তি ফিরে আসুক শিক্ষাঙ্গনে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের সংকট-ক্ষোভণ্ডদাবির প্রতি মনোযোগ বাড়ানো। নিয়মিত সংলাপই সহমর্মিতার পরিবেশ বজায় রাখে। সমস্যা যখন ছোট, তখনই তা চিহ্নিত করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোগত ভিন্নতা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের নানা দাবি সামনে রেখেও আন্দোলন দানা বাঁধে। যেমন, প্রকৌশলীদের বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের পুরোনো বৈষম্য ও মর্যাদাজনিত দ্বন্দ্ব আজও মীমাংসা হয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একাধিক কর্মসূচি পালন করেছেন। এতে সড়কে তীব্র যানজটসহ জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়। কর্তৃপক্ষের উচিত এ ধরনের পুরোনো ও মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধানে সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া।