প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
একাদশ শ্রেণিতে যারা ভর্তি হয়েছ, তাদের জন্য রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। একরাশ স্বপ্ন ও সুনির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য নিয়েই তোমরা কলেজে ভর্তি হয়েছ। তোমাদের সে স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণ হোক- আমরা সেই প্রত্যাশা করি। প্রতিকূল পরিবেশ যেন তোমাদের সে স্বপ্ন ও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে না পারে, সেদিকে তোমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আর যারা এখনও নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখনি, জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করনি, তারাও একরাশ স্বপ্ন নিয়ে নিজের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করবে। সেই লক্ষ্য পূরণের স্বপ্ন দেখবে। কেননা, স্বপ্ন মানুষকে ভালো অবস্থানে যেতে সহায়তা করে। অন্তরের লালিত স্বপ্ন মানুষকে পরিশ্রমী করে তোলে। তার প্রচেষ্টাকে করে গতিশীল। স্বপ্নপূরণের সাধনায় তারা হয় অনড় ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাই জীবনে বড় কিছু হতে হলে, ভালো কিছু করতে হলে বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা টঙ্গী শাখার সহকারী অধ্যাপক, আমার প্রিয় শিক্ষক ইসহাক স্যার ক্লাসে প্রায়ই বলতেন, ‘চাঁদকে ধরার স্বপ্ন দেখো, চাঁদকে তুমি ধরতে না পারলেও তারা তোমার হস্তগত হবে।’ অর্থাৎ তুমি বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখো।
সুনির্দিষ্ট সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলেও তার কাছাকাছি অবস্থানে নিশ্চিত যেতে পারবে। আর শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না। স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রম ব্যতীত কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছা প্রায় অসম্ভব। আর স্বপ্ন মানুষকে নিরলস পরিশ্রমে অনুপ্রাণিত করে। এ বিষয়ে ভারতের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এবং দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের বিখ্যাত একটি উক্তি আছে, ‘স্বপ্ন সেটা নয়, যেটা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে, স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরণের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।’
একাদশ শ্রেণিতে যারা ভর্তি হয়েছ, তাদের মনে রাখা দরকার, ছাত্রজীবনে এসময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যৎ জীবন গঠনের প্রস্তুতি গ্রহণের উপযুক্ত সময়। এ সময়টা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে সারাজীবন এর সুফল পাওয়া যাবে। আর এসময় ভালোভাবে কাজে লাগাতে না পারলে, জীবনে ভালো কিছু করার স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাবে। সহপাঠীদের উন্নতি দেখে, নিজের ব্যর্থতার অনুশোচনায় সারাজীবন দগ্ধ হতে হবে। এখন ভালোভাবে পড়াশোনা না করলে এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা যাবে না। এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের উপর নির্ভর করে পরবর্তী গন্তব্যস্থল কোথায় হবে। মেধাবী ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থীদের গন্তব্যস্থল ভার্সিটি। তাই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে এখন থেকেই ভার্সিটিতে ভর্তির স্বপ্ন দেখতে হবে। আর সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য এখন থেকেই পরিকল্পিত ও নিরলসভাবে পড়াশোনা করতে হবে। আত্মকে করতে হবে নিয়ন্ত্রণ। মন যা চায় তা করা যাবে না। একটি প্রবাদ আছে, ‘সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।’ তাই ভালো কিছু করতে হলে সময়কে কাজে লাগাতে হবে। যে মানুষ সময়ের মূল্য দিতে জানে না, সে জীবনে উন্নতি করতে পারে না। তাই এখন থেকেই সময়ের মূল্য দিতে হবে। অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না। সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে।
জীবনে সফল হওয়ার নেপথ্যে ভার্সিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভার্সিটি শুধু জ্ঞানার্জনের তীর্থস্থান নয়, বরং ভবিষ্যৎ দেশচালকদের সূতিকাগার। ভার্সিটিতে অগাধ জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি নিজেকে জানা, জ্ঞানীদের সান্নিধ্যলাভ, পাখির চোখে বিশ্বকে দেখার পাণ্ডিত্য অর্জন, ভালো ক্যারিয়ার গঠন, ভিন্ন মত সহ্য করার মনমানসিকতা লালন, ভিন্ন প্রান্তের ভিন্নমতের বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ, উল্লাস উপভোগ করার সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া যায়। কাজেই এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল ও ভালো ভার্সিটিতে চান্স পেতে হলে, এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। কঠোর পরিশ্রম ও পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে পড়াশোনায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। এসময়টা উদ্দেশ্যহীনভাবে অবহেলায় নষ্ট করা যাবে না। এমন হলে ভালো ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া যাবে না।
জ্ঞানার্জন ও ভালো ফলাফলের জন্য পাঠ্যবইয়ে লেগে থাকার বিকল্প নেই। তথাপি মুসলিম হিসেবে পাঠ্যবই পড়ার পাশাপাশি ধর্মীয় বিষয়েও পড়াশোনা করতে হবে। কেননা, ধর্ম মানুষকে সৎকাজে উৎসাহিত করে এবং অসৎ কাজে নিরুৎসাহিত করে। হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে শোনায় সান্ত¡নার বাণী। নতুন করে কর্মে আত্মনিয়োগে অনুপ্রাণিত করে। তাই পাঠ্যবই পড়াশোনার পাশাপাশি ধর্মীয় বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হবে। নিজের জীবনে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
একটি কলেজে কর্মরত আছি। সেই সুবাদে কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে। শ্রুতিকটু হলেও সেগুলো না বললেই নয়। উপজেলা পর্যায়ের কতিপয় শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েই নিজেদের ‘মুক্ত বিহঙ্গ’ মনে করে। শ্রেণিকক্ষে তাদের মন বসে না। উড়ু উড়ু ভাব বিরাজ করে তাদের দেহ-মনে।
বাইক নিয়ে এদিক সেদিক অযথা ঘুরাঘুরি করে। ক্লাস না করে সহপাঠীদের নিয়ে যেখানে-সেখানে আড্ডা দেয়। মেয়েদের পেছনে অনর্থক সময় নষ্ট করে। নিজ কর্তব্য সম্পর্কে তারা থাকে উদাসীন।’ তারা যে ছাত্র, এটা তাদের আচার-আচরণে বোঝা দুষ্কর।
ভালোছাত্রের বৈশিষ্ট্য এমন হতে পারে না। আশা করি, তোমরা এমন হবে না। যারা এমন করে তাদের এড়িয়ে চলবে। তাদের সঙ্গ বর্জন করবে। পরিশেষে, হে পথিক, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করো। সতর্ক হও, আবেগ যেন তোমাকে বিপথগামী করতে না পারে।
লেখক: প্রভাষক, ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজ, গাজীপুর সদর, গাজীপুর।