ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জাতীয় সংস্কার ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ

আবু আহমেদ
জাতীয় সংস্কার ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ

বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতি যে তিলে তিলে বিধ্বস্ত হয়েছে, সেটা ৫ আগস্ট ২০২৪-এর আগে কেউ হয়তো বুঝতে পারেনি। যতই দিন গেছে, ততই অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, সেটা সবার কাছে এখন পরিষ্কার। যা হোক, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে। স্বেচ্ছাচারিতার হাত থেকে জাতি মুক্তি পেয়েছে। হতাশার গ্লানি থেকে মুক্ত হওয়া এ জাতিকে সামনে এগিয়ে নিতে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। অনেক সংস্কার কার্যক্রম তারা হাতে নিয়েছেন। এ সরকারের এক বছরেরও অধিক কাল অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। প্রশ্ন আসতে পারে, এ সরকার কী কী সংস্কার বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছে? হ্যাঁ, আপাতদৃষ্টিতে সংস্কার দৃশ্যমান না হলেও কিছু কিছু জায়গায় সংস্কার হয়েছে, বলাই বাহুল্য। আসলে হুট করেই সবকিছু হয়ে যায় না, যে কোনো কাজ এগিয়ে নিতে হলে সময়ের প্রয়োজন। সংস্কার প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়েছে, এগুলোর ইমপ্লিমেন্টেশনের ব্যাপার আছে।

ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা ৫ আগস্ট পেয়েছি। সুতরাং জুলাই সনদকে একটা আইনি স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। কারণ জুলাই সনদের যদি আইনি ভিত্তি না থাকে, তাহালে এর কোনো মূল্য থাকে না। এটা শাসনতন্ত্রের একটা অংশে জায়গা পেলে সবচেয়ে ভালো হতো। এ ব্যাপারে রাজনীতিকদের একমত হওয়া উচিত। কিন্তু তারা একমত হতে পারছে না। কেন পারছেন না, সেটা আমার জ্ঞানের সীমায় নেই। জুলাই সনদ একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। সুতরাং দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসাবে এ ব্যাপারে বিএনপির উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল।

অর্থনীতির কিছু কিছু জায়গায় সংস্কার হয়েছে। অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় সংস্কার হতো যদি কয়েকটি দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা যেত। ব্যাংক একীভূত করার কার্যক্রমটি বেশ ধীরে এগোচ্ছে। এটা কবে কখন বাস্তবে রূপ নেবে, সেটা আমাদের অজানা। তবে এদেশে ব্যাংক একীভূতকরণের উদাহরণ খুব একটা নেই বললেই চলে। আরেকটি পথ আছে সেটা হলো, না চলতে পারা দুর্বল ব্যাংকগুলো বন্ধ করে দেওয়া। ব্যাংক ও অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাদের নিজেদের চলার সক্ষমতা নেই, তাদের জোর করে চালানোর কোনো দরকার নেই। এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া উচিত। সারা বিশ্বে শত শত লিজিং কোম্পানি, ব্যাংকিং কোম্পানি, বিমা কোম্পানি সক্ষমতা না থাকার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের দেশে কোনোটিই বন্ধ হতে দেওয়া হবে না, এটা তো ঠিক নয়। এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হওয়া উচিত। যারা তাদের ব্যবসায় ফেল করেছে, তাদের নিজেদেরই সেটা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আসলে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়ার আগে কতগুলো পলিসি ঠিক করা উচিত ছিল। যেমন, কোনো কারণে যদি ব্যাংক, বিমা ও লিজিং কোম্পানির মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়, তাহলে যারা এসব প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ক্রোক করা যাবে। আমি জানি না এ ব্যাপারে এ ধরনের আইন আছে কি না। আসলে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা অনেকেই ব্যাংক-বিমা খোলার জন্য খুব সহজেই অনুমতি পেয়ে যায়। আর এ সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে অনেকে সাইনবোর্ড টানিয়ে নামসর্বস্ব আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত