প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল হিসাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায়। গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর একটু একটু করে লোকালয়ে প্রবেশ করছে সমুদ্র। এরইমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিম প্রান্তের বিস্তীর্ণ এলাকা। জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব প্রান্তেও জনপদের দিকে এগোচ্ছে সাগর। গত ৩৬ বছরে সাগরের পেটে গেছে পর্যটনকেন্দ্রের বহু স্থাপনাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা; যার আয়তন প্রায় তিন বর্গকিলোমিটার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বিধ্বংসী হচ্ছে ভাঙনের ভয়াবহতা। চলতি বছরও উত্তাল ঢেউয়ের ঝাপটায় বিলীন হয়েছে সৈকত ঘেঁষে থাকা ১ হাজার ৩০০ মিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ; স্থাপনাসহ আরও অনেক কিছু গিলে খেয়েছে সাগর। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দুই যুগের বেশি সময় ধরে ভাঙনের তাণ্ডব চললেও তা ঠেকাতে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে নেওয়া সৈকত রক্ষা প্রকল্প পরপর তিনবার ফেরত পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। সৈকত রক্ষায় সম্প্রতি আরও একটি প্রকল্প জমা হয়েছে ঢাকায়। তবে এ প্রকল্পের ভাগ্য নিয়েও সন্দিহান কুয়াকাটাবাসী। বস্তুত কেবল কুয়াকাটা নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট নানা সংকটে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব সংকটের সমাধানে সরকারকে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষত উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণসহ মজবুত অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি উপকূলীয় বনায়ন এবং সামুদ্রিক পরিবেশ সংরক্ষণেও নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ। একই সঙ্গে গবেষণা ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকায় মানুষের ক্ষয়ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে।
আলোচিত সমস্যার টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে, যাতে দ্রুত ক্ষতিপূরণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পাওয়া যায়। জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে প্রতিবছর উন্নত দেশগুলো নানা সমস্যার সমাধানে প্রতিশ্রুতি দিলেও বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর কাছে সেই সহযোগিতা পৌঁছায় না; সহযোগিতার কিছু অর্থ পৌঁছালেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও উন্নত দেশগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবই এক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বস্তুত জলবায়ু ন্যায়বিচার কেবল নীতি-নৈতিকতার বিষয় নয়, এটি বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও এ সমস্যার টেকসই সমাধান অত্যন্ত জরুরি। যদি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় পর্যাপ্ত সহায়তা না পায়, তবে ভবিষ্যতে অভিবাসনসহ নানাসংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করবে। উন্নত দেশগুলোকে এখনই বুঝতে হবে, এ বিষয়ে তারা দায়িত্বশীল না হলে সৃষ্ট ক্ষতি ভোগ করতে হবে পুরো বিশ্ববাসীকে।