ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ব্যাংক কর্মচারীদের মাত্রাতিরিক্ত প্রণোদনা

ব্যাংক কর্মচারীদের মাত্রাতিরিক্ত প্রণোদনা

গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের অন্যতম কুপ্রভাব পড়েছে ব্যাংক খাতে। সীমাহীন লুটপাট আর খেলাপি ঋণের ফলে ব্যাংক খাত পড়েছে মহাসংকটে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে যখন প্রয়োজন ছিল একটা সর্বদিকবিস্তৃত পরিকল্পনায় ব্যাংক খাতকে রুগ্ণদশা থেকে সুস্থ করা, তখন দেখা যাচ্ছে উলটো প্রবণতা। ঋণের নামে টাকা পাচার ও খেলাপি ঋণের ভারে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো মূলধন সংকটে থাকলেও ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎসব বোনাসের বিলাসিতা দৃষ্টিকটু হিসাবে দেখা দিয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে বেতনের সর্বনিম্ন আড়াইগুণ থেকে সর্বোচ্চ ছয়গুণ পর্যন্ত বোনাস নিচ্ছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। স্বাভাবিকভাবেই বিলাসী উৎসব বোনাস নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেখানে সাধারণ আমানতকারীরা তাদের জমানো টাকা চেয়েও উঠাতে পারছেন না, সে অবস্থায় উৎসব বোনাসের নিয়ম কতটা ন্যায়সংগত? বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কেও ভাবাচ্ছে। বেতনের সর্বনিম্ন আড়াইগুণ থেকে ছয়গুণ বোনাস, এটা এক অবিশ্বাস্য সুবিধাবাদ। জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয় অভিন্ন বোনাস নির্দেশিকার একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এতে এমন এক বিধান যুক্ত করা হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ আদায়সহ ৫টি সূচকে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্ধারিত বোনাসের বাইরে প্রণোদনা বোনাস পাবেন না। এছাড়া অবলোপনকৃত ঋণ থেকে আদায় ও ব্যাংকের তারল্য বাড়ানোসহ নানা শর্ত নাকি থাকছে এ নির্দেশিকায়। বলা হয়েছে, প্রণোদনার বোনাস পেতে হলে এসব শর্তপূরণ করতে হবে। নির্দেশিকার বাইরে বোনাস দিতে হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে।

আমরা মনে করি, চূড়ান্ত হওয়া নির্দেশিকাটি অচিরেই বিভিন্ন ধাপ পার করিয়ে কার্যকর করা দরকার। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্ধারিত উৎসব বোনাসের অতিরিক্ত একাধিক ইনসেনটিভ বোনাস নিচ্ছেন, তা শুধু অযৌক্তিকই নয়, অনৈতিকও। ব্যাংকগুলোর প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত আমানতকারীর স্বার্থরক্ষা করা। তারল্য সংকটের কারণে আমানতকারীরা তাদের ইচ্ছামতো টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না, এতে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আমানতকারীদের আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যাংকিং খাতের সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো জরুরি।

বলা বাহুল্য, কর্মকর্তারা যে হারে বোনাস নিচ্ছেন, তাতে প্রতিষ্ঠানগুলো সবল না হয়ে বরং দুর্বল হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারে অর্থনীতির জ্ঞানসম্পন্ন একাধিক উপদেষ্টা রয়েছেন। ব্যাংক খাতে যে সংকট চলছে, তা তাদের না বোঝার কথা নয়। অথচ ব্যাংক খাত সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না! আমাদের কাছে মনে হয়, বিষয়টিতে ঠিকমতো মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এ খাতটিকে প্রাধান্য তালিকায় রাখা উচিত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত