ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঋণনির্ভর জীবনের জটিল বাস্তবতায় মধ্যবিত্তরা

ঋণনির্ভর জীবনের জটিল বাস্তবতায় মধ্যবিত্তরা

উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং আয়বৈষম্য বাংলাদেশে এক জটিল অর্থনৈতিক চিত্র তৈরি করেছে। এই বাস্তবতায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক সময়ে ভোক্তাঋণের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের সামনে দেশের ভোক্তা খাতের এক অস্বস্তিকর চিত্র হাজির করেছে। এর প্রধানতম শিকার মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরের শেষ তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) ভোক্তাঋণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি।

অথচ এই ঋণের সুদের হার ক্ষেত্রবিশেষে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। এত উচ্চসুদেও সাধারণ মানুষের ঋণ নেওয়ার এই প্রবণতা ইঙ্গিত দেয়, দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি বর্তমানে গভীর আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই সংকটের প্রধান কারণ হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং আয়বৈষম্য। যখন গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের কাছাকাছি থাকে, তখন মানুষের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ফলে সাধারণ আয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। এতে পরিবারগুলো দৈনন্দিন খরচ মেটাতে ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো, এত ঋণ মানুষ নিচ্ছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত উচ্চসুদে। অর্থাৎ পরিবারের দৈনন্দিন জীবন টিকিয়ে রাখতে গিয়ে ভবিষ্যতের আয়কে বন্ধক রাখতে হচ্ছে।

অন্যদিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কর্মীরা একই সুবিধা পান প্রায় বিনা সুদে। এই বৈষম্য শুধু অর্থনৈতিক অসমতা নয়, সামাজিক অসন্তোষকেও উসকে দিতে পারে। ভোক্তাঋণের এই বৃদ্ধি সমাজের আর্থিক চাপ ও দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে মানুষের আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করা এবং সাধারণ মানুষের জন্য ঋণ সুবিধা আরও সহজলভ্য করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

ভবিষ্যতে যদি এই ঋণনির্ভরতা আরও বাড়ে, তাহলে তা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। তাই নীতিনির্ধারকদের দ্রুত এই বিষয়টির প্রতি নজর দেওয়া উচিত এবং সাধারণ মানুষের ওপর থেকে অর্থনৈতিক চাপ কমানোর জন্য সুদূরপ্রসারী নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় আজকের ঋণনির্ভর মধ্যবিত্ত আগামীদিনের ঋণগ্রস্ত দরিদ্র শ্রেণিতে পরিণত হতে পারে। রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়ের জন্যই তা হবে অকল্যাণকর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত