ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মন্ত্রণালয়ের এত অবহেলা কেন

মন্ত্রণালয়ের এত অবহেলা কেন

আন্তঃনগর ট্রেন এবং লোকাল ও মেইল ট্রেনের সার্ভিসে ব্যাপক পার্থক্য দেখা দিয়েছে। লোকাল ও মেইল ট্রেন সাধারণ মানুষ, তথা গরিব শ্রেণির কাছে খুব জনপ্রিয়। কারণ এই ট্রেন গ্রাম ও শহরতলি পর্যন্ত বিস্তৃত। সাধারণ মানুষের রুটি-রুজিরও অবলম্বন এই ট্রেন। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা থাকে এই ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে। এ দুই ট্রেনকে ‘গরিবের ট্রেন’ও বলা হয়। কিন্তু গরিবের ট্রেন গরিব শ্রেণির জন্য সার্ভিস দিতে পারছে না। লোকাল ও মেইল মিলিয়ে ৭০টি ট্রেনের সার্ভিস বন্ধ রয়েছে বছরের পর বছর। এগুলো চালু করার উদ্যোগও নেই। যে কয়েকটি চলছে, সেগুলোরও জীর্ণদশা।

লোকাল ও মেইল ট্রেনের যখন দুর্দশা, তখন আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর অবস্থা রমরমা। ২০১০ সালে দেশে লোকাল ও মেইন ট্রেন চলত ১১৫টি। ওই সময় আন্তঃনগর ছিল ৭৭টি। বর্তমানে আন্তঃনগরের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১১, অর্থাৎ বেড়েছে ৭৭টি ট্রেন। অন্যদিকে, দুই-তৃতীয়াংশ লোকাল ও মেইল ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে এখন ৪৫টি লোকাল ও মেইন ট্রেন চলাচল করছে। আবার নানা অজুহাতে এগুলোর কয়েকটি মাঝেমাঝেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোকাল-মেইল ট্রেনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় কাজ হারিয়েছেন অসংখ্য হকার, প্ল্যাটফর্মের দোকানদার, খুদে ব্যবসায়ী, দূর থেকে শহরে কাজে আসা শ্রমিকসহ অন্যরা। ট্রেন না পাওয়ায় তারা বাস অথবা অন্য কোনো বাহনে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এতে শুধু বেশি ভাড়াই গুনতে হচ্ছে না, সময়েরও অপচয় হচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে গত ১৬ বছরে রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরম অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি হয়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের স্বার্থে এবং রাজনৈতিক কারণে নতুন নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হয়; কিছু পরিকল্পনাহীন এসব ব্যবস্থার বিপরীতে সাধারণ মানুষের লোকাল ট্রেনের বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয়। অথচ জ্বালানি খরচ, লোকবল ও অন্যান্য খরচ হিসাব করলে আন্তঃনগর ট্রেন একটি লোকসানি খাত। ওদিকে লোকাল ও মেইল ট্রেন সবসময় লাভজনক। লাভজনক খাতকে উপেক্ষা করে অলাভজনক খাতে কেন এত মনোযোগ, তা ব্যাখ্যা করা যায় না। আমরা আশা করব, লোকাল ও মেইল ট্রেনের দিকটায় রেল মন্ত্রণালয় বিশেষ দৃষ্টি দেবে। বন্ধ থাকা ট্রেনগুলো চালু করলে আয়ের সঙ্গে সঙ্গে রেলের সেবাও বাড়বে। রেল মূলত সাধারণ মানুষ, বিশেষত গরিব শ্রেণির যানবাহন। স্বল্প খরচে দ্রুত যাতায়াতের জন্য এর ভালো বিকল্প নেই। এ খাতকে গরিববান্ধব করে তোলা দরকার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত