প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
একটু ভারি বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে, যানজটের তীব্রতা বাড়ে, অফিসগামী মানুষ ও সাধারণ যাত্রীরা পড়ে সীমাহীন দুর্ভোগে। এমনকি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতি বর্ষায় প্রায় একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি আমাদের দেখতে হয় মূলত নগর ব্যবস্থাপনার চরম অক্ষমতার কারণে। এক প্রতিবেদনে সবিস্তারে উঠে এসেছে মানুষের দুর্ভোগের চিত্র। রাজধানী ঢাকায় গত রোববার রাত থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাত। গত সোমবার ভোরেই নগর জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে। কয়েক ঘণ্টার ভারি বর্ষণে মালিবাগ, শান্তিনগর, ফার্মগেট, বনানী, মিরপুরসহ নানা সড়ক ও অলিগলি হাঁটুপানি থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে যায়। গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে, যানজটের তীব্রতা বাড়ে, অফিসগামী মানুষ ও সাধারণ যাত্রীরা পড়ে সীমাহীন দুর্ভোগে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এ ধরনের প্রাকৃতিক ঘটনা খুবই স্বাভাবিক।
কিন্তু অস্বাভাবিক হলো একটি শহরের এমন চিত্র। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের অব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতা এই জলাবদ্ধতার মূল কারণ। একে তো ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম, তার ওপর প্রতিবছর সেগুলো পরিষ্কার করা হয় না। ফলে ময়লা জমে ড্রেন বন্ধ হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের দায়ও কম নয়।
যত্রতত্র পলিথিনসহ নানা ধরনের ময়লা ফেলা হয়। আবর্জনা সরানোর ব্যবস্থাপনারও দুর্বলতা রয়েছে। ফলে ময়লা-আবর্জনা গিয়ে ড্রেনে পড়ে। সহযোগী একটি দৈনিকের খবরে জানা গেছে, পুরান ঢাকার বংশালে জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আমিন (৩০) নামের এক দোকান কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে। নাজিরা বাজারের আলাউদ্দিন রোডে ঘটে যাওয়া এ দুর্ঘটনায় এক তরুণ শ্রমজীবী প্রাণ হারালেন। সকালবেলা দোকানে যাওয়ার পথে তিনি জানতেন না জমে থাকা পানিই তার মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠবে।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটির আকস্মিক মৃত্যু স্বজনদের চোখে অন্ধকার নামিয়ে এনেছে। রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকায় ১০৫ মিলিমিটার বৃষ্টির প্রভাবই এই মর্মান্তিক পরিণতির জন্ম দিয়েছে। এই মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের ট্র্যাজেডি নয়, এটি নগর অব্যবস্থাপনার নগ্ন প্রতিচ্ছবি। আমাদের শহরে বৃষ্টি মানে শুধু জলাবদ্ধতা নয়, প্রাণহানির ঝুঁকিও। ড্রেনেজ সংস্কার, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো ব্যবস্থায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জরুরিসেবা তৎপরতা- এসব কার্যকর না হলে প্রতিটি বর্ষণই হবে সম্ভাব্য মৃত্যুফাঁদ। আমরা চাই, শহরে বৃষ্টি নামুক জীবনের সজীবতায়, কোনো তরুণ শ্রমজীবীর মৃত্যু সংবাদে নয়।