প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। দেশে জনসংখ্যা প্রায় ২০ কোটি। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে অষ্টম দেশ। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে জনসংখ্যাকে এখনও জনসম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ-২০২৪-এর তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে প্রায় ৯ লাখ গ্র্যাজুয়েট বা উচ্চশিক্ষিত বেকার আছে। এ ছাড়া দেশে মোট বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৫-২৭ লাখ (যদিও ভিন্ন পরিসংখ্যানে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে উল্লেখ রয়েছে)। ফলে শিক্ষিত একটা বড় জনগোষ্ঠী কাঙ্ক্ষিত চাকরি না পেয়ে বেকারত্বের অভিশাপে দিনযাপন করছে। বেকারত্বের অভিশাপ কাঁধে নিয়ে অনেক সময় হতাশায় অনেক চাকরিপ্রত্যাশী চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেওয়ার ঘটনাও কম নয়। কেননা, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার মূল লক্ষ্য যতটা না জ্ঞান অর্জন করা, তার চেয়ে বেশি সার্টিফিকেট অর্জন করা। সর্বশেষ একটা চাকরি।
তাত্ত্বিকভাবে আমাদের দেশে যেসব বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় ডিগ্রি দেওয়া হয়, সেসব বিষয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাবজেক্টভিত্তিক কোনো চাকরি নেই। উদাহরণস্বরূপ, বিসিএস কিংবা সরকারি বেশিরভাগ চাকরিতেই চাকরি পেতে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, গণিত, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি। শিক্ষকতা পেশা ছাড়া সাবজেক্টটিভ বিষয়ের তেমন মূল্য নেই বললেই চলে। তবে সেখানেই আছে সীমাবদ্ধতা। কেননা তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর দেশে প্রায় সাত লাখ স্নাতক ডিগ্রিধারী জব সেক্টরে আসে। অথচ সেখান থেকে সাত হাজারও শিক্ষক নিয়োগ হয় না। ফলে বেকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ভয়ানকভাবে। এমতাবস্থায় সাবজেক্টটিভ মূল্যায়নে নতুনভাবে হাজির হয়েছে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিষয়টি। শারীরিক সুস্থতা, মানসিক সুস্থতা, নেতৃত্ব গঠন, দক্ষ নাগরিক কিংবা বৌদ্ধিক চর্চা শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য। এ ছাড়া ক্রীড়া বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা অধ্যয়নের মাধ্যমে দেশের ক্রীড়াকে এগিয়ে নিতে কাজ করে চলেছে এ বিষয়টি। ফলে দেশে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিষয়টি ক্রমেই খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
বর্তমান শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে পড়ালেখা করে কেউ বেকার আছে এমন দৃষ্টান্ত বিরল। দেশে বর্তমানে চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া) এবং একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স চালু রয়েছে। এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ওই বিভাগের ভর্তির সুযোগ অর্জন করতে হয়। পক্ষান্তরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশে ছয়টি সরকারি শারীরিক শিক্ষা-কলেজ এবং বিশটি বেসরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ ও ঢাকায় উত্তরা ইউনিভার্সিটি রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্নাতক ও সমমান পাস করার পর এক বছরের ডিগ্রি ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল এডুকেশন (বিপিএড) কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়। এটাকে প্রফেশনাল ডিগ্রি বলা হয়। মূলত সরকারি-বেসরকারি চাকরির সার্কুলারে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক, প্রশিক্ষক কিংবা ক্রীড়া কর্মকর্তা পদে শারীরিক শিক্ষায় অনার্স-মাস্টার্স অথবা স্নাতক বা স্নাতকোত্তরসহ বিপিএড ডিগ্রি চাওয়া হয়ে থাকে। ফলে এ বিষয়ে পড়ালেখা করলে কোনো প্রকার বসে থাকার সুযোগ নেই। চাকরি বাজারে আছে এর বেশ কদর। এ ক্ষেত্রে যেসব ডিগ্রিধারী শিক্ষাজীবনে শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন, তাদের জন্য চাকরি পাওয়া আরও সহজ। তথ্যমতে, সম্প্রতি শেষ হওয়া ১৮তম নিবন্ধন পরীক্ষায় শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে স্কুল-কলেজে শূন্যপদ ছিল প্রায় ৪ হাজার ৬০০টি। তবে চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭০০-এর মতো। অর্থাৎ, এখনও শূন্যপদের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। আবার সরকারি স্কুল-কলেজের পদগুলো তো আছেই। সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে পদ সৃষ্টি করা হয়। সুতরাং বলাই যায়, শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে পড়ালেখা করে চাকরি বাজারে খুব সহজেই চাকরি পাওয়া যায়, যা বেকারত্ব দূর করতে সহায়তা করছে।
শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে পড়ালেখা করলে যেসব চাকরিবাজার আপনার জন্য উন্মুক্ত হবে তা হলো- স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরচর্চা বিভাগের প্রশিক্ষক এবং কর্মকর্তা, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ একাডেমিতে শারীরিক প্রশিক্ষক থেকে পরিচালক পদ পর্যন্ত, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৬৪ জেলায় জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা পদে এবং দেশের অসংখ্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে স্পোর্টস টিচার ইত্যাদি। সুতরাং আমরা বলতেই পারি, শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে পড়ালেখা করে কেউ বেকার থাকে না। বেকারত্ব দূরীকরণে শারীরিক শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
লেখক : প্রভাষক, সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ, বরিশাল