প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ০২ অক্টোবর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক প্রবীণ ব্যক্তি দিবস প্রতি বছর অক্টোবরের ১ তারিখে পালন করা হয়, যা ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত একটি সিদ্ধান্ত। এই দিনটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো- প্রবীণ নাগরিকদের সুরক্ষা, অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যাগুলো সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। এই দিবসটি প্রবীণদের অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে, যাতে তারা সমাজে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে। আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্যবিষয় হলো- “Older Person Driving Local and Global Action : Our Aspiration, Our Well Being, Our Rights”। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাংলা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়- ‘একদিন তুমি পৃথিবী গড়েছ, আজ আমি স্বপ্ন গড়ব, সঙ্গে তোমায় রাখব আগলে’।
২০২৫ সালের প্রবীণ দিবসের জন্য বাংলাদেশ সরকার-এর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক র্যালি, আলোচনা সভা, প্রবীণদের স্বাস্থ্য ও অধিকার নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রবীণ নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অসহায় প্রবীণদের জন্য সাংবিধানিক অঙ্গীকার সন্নিবেশিত করা হয়েছে। ‘পিতা-মাতা ভরণপোষণ আইন, ২০১৩’ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন এবং দারিদ্র্য-পীড়িত প্রবীণদের জন্য কৃষি ঋণ বা আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের মতো পদক্ষেপগুলোও অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে বয়স্কভাতা কর্মসূচি প্রবর্তনের মাধ্যমে প্রবীণদের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।
বাংলাদেশে প্রবীণরা প্রধানত চারটি নিপিড়নের শিকার হন : মানসিক নির্যাতন, শারীরিক নির্যাতন, আর্থিক নির্যাতন এবং অবহেলার শিকার হন। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৮৮% প্রবীণ মানসিক নির্যাতনের, ৮৩% অবহেলার, ৫৪% আর্থিক নির্যাতনের এবং ৪০% শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। মানসিক নির্যাতন- প্রবীণদের হেয় করা, অপমান করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা এবং তাদের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা এর অন্তর্ভুক্ত। শারীরিক নির্যাতন-প্রবীণদের শারীরিক কষ্ট দেওয়া বা আঘাত করা। আর্থিক নির্যাতন-প্রবীণদের অর্থ বা সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা বা তাদের আর্থিক সুবিধা থেকে দূরে রাখা। অবহেলা- প্রবীণদের মৌলিক চাহিদা, যেমন খাবার, বস্ত্র, ও চিকিৎসার প্রতি উদাসীন থাকা বা তাদের প্রয়োজনীয় যত্ন না নেওয়া। দুর্ভাগ্যবশত হলেও সত্য অনেক পরিবারেই সন্তানরা তাদের বাবা-মায়ের প্রতি অবহেলা করে থাকেন, যা মানসিক ও অর্থনৈতিক বঞ্চনার কারণ হয়। এই অবহেলার মধ্যে রয়েছে বাবা-মাকে বোঝা মনে করা, তাদের প্রতি চরম নিষ্ঠুরতা দেখানো এবং তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া।
লেখক : ড. মো. আনোয়ার হোসেন, প্রাবন্ধিক, কথা সাহিত্যিক এবং প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী সংগঠন ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এন্টি অ্যালকোহল