ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিশ্ব মানবতার প্রতি চরম আঘাত

বিশ্ব মানবতার প্রতি চরম আঘাত

গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও আটকের ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন। বিশ্বের ৪৪টিরও বেশি দেশের প্রায় ৫০০ সমাজকর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ বহনকারী বেসামরিক এই নৌবহর যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার জন্য জরুরি মানবিক সাহায্য, খাদ্য ও ওষুধ বহন করছে, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী দ্বারা ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠী এক বীভৎস গণহত্যার শিকার হচ্ছে। বিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে এখনও যারা বেঁচে আছেন, তারা চরম দুর্ভিক্ষের শিকার। এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণবাহী বহরকে আটকের ইসরায়েলি এ পদক্ষেপ শুধু ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা প্রদান নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর প্রতি চরম ঔদ্ধত্য প্রদর্শনের একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ।

ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন স্পষ্টই জানিয়েছে, তাদের এ অভিযান আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর অধীনে সম্পূর্ণ বৈধ ও সুরক্ষিত। জাতিসংঘের সমুদ্র আইন কনভেনশন গভীর সমুদ্রে অবাধ নৌ চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। এছাড়াও নিরাপত্তা পরিষদের রেজোলিউশন ২৭২০ ও ২৭২৮ একটি বাধ্যতামূলক আইনি দলিল, যা মানবিক সাহায্যের নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশ ও সাহায্য বিতরণে সব বাধা অপসারণের দাবি রাখে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন, যা মানবিক সাহায্যের অবাধ পথ সুনিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে এবং ত্রাণ কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ বা বেসামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করাকে নিষিদ্ধ করে। এই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত চুক্তিগুলো ফ্লোটিলার কার্যক্রমের বৈধতা প্রমাণ করে এবং ইসরায়েল যে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে তাদের আটক করেছে, তা এই আইনগুলোর সুস্পষ্টই লঙ্ঘন।

আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ইসরায়েলের এমন অবজ্ঞামূলক আচরণ নতুন নয়। এর আগে বহুবার তারা মানবিক সাহায্যবাহী নৌযান আটক করেছে। ২০১০ সালে তো ত্রাণবাহী তুর্কি জাহাজ ‘গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলায় ইসরায়েলিরা হামলা চালিয়ে ১০ জন সমাজকর্মীকে হত্যাই করে। পরিতাপের বিষয়, এ চরম অন্যায়ের কোনো বিচার আজও মেলেনি। এবার পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ও অন্যান্য সমাজকর্মীকে বহনকারী নৌবহরের আকার যেমন বড়, তেমন ত্রাণকর্মীর সংখ্যাও বেশি, যাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের শহিদুল আলমও; কিন্তু তাদের অনেকেই এখন ইসরায়েলের কাছে আটক অবস্থায় রয়েছেন। এরই মধ্যে তুরস্ক, মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের ‘অবৈধভাবে আটক’ করার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দেশে দেশে চলছে বিক্ষোভ, এমনকি ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্যও গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকট সমাধান এবং ফ্লোটিলার ত্রাণ মানবিক সংস্থাগুলোর কাছে হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছে। তা সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজায় অবিরাম বোমাবর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েই যাচ্ছে, এমনকি মৃত্যুপথযাত্রী শিশুসহ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সাহায্য পর্যন্ত আটকে দিচ্ছে।

আমরা ইসরায়েলের এমন চরম ঔদ্ধত্যের তীব্র নিন্দা জানাই। একইসঙ্গে ফ্রিডম ফ্লোটিলার সমাজকর্মীদের সাহস ও সংকল্পকে জানাই সাধুবাদ, যারা মানবতার জয়গান গেয়ে জীবনের শঙ্কা জেনেও গাজার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মহান উদ্যোগ নিয়েছেন। এই মানবতাবাদী বীরদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবশ্যই ইসরাইলের ওপর চাপ বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে তারা মানবিক সাহায্যের ওপর থেকে সবরকম বিধিনিষেধ তুলে নেয় এবং গাজার জনগোষ্ঠীর এখনও যারা অবশিষ্ট আছেন, তাদের হাতে অতি প্রয়োজনীয় খাবার, পানি ও ওষুধ তুলে দেওয়া সম্ভব হয়। বিশ্ব যদি আজ নীরব থাকে, তবে ধরে নিতে হবে, মানবতার ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত