ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রেডিওথেরাপির সংকট

ক্যান্সার চিকিৎসার গুরুত্ব অনুধাবন করা উচিত
রেডিওথেরাপির সংকট

দেশের স্বাস্থ্য খাতে একটি নীরব কিন্তু ভয়াবহ সংকট এখন গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর সেটি হলো ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য অত্যাবশ্যকীয় রেডিওথেরাপি মেশিনের চরম অপ্রতুলতা। সম্প্রতি এক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, ক্যান্সারের রোগীদের অন্তত ৮০ শতাংশের জন্য রেডিওথেরাপির প্রয়োজন। অথচ রোগীর সংখ্যা অনুপাতে দেশে কমপক্ষে ১৭০টি রেডিওথেরাপি মেশিনের দরকার হলেও সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে আছে মাত্র ৩৫টি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে সচল মেশিনের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। এমনকি বর্তমানে দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা কত, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোথাও নেই। এই সংকটের ভয়াবহতা শুধু সংখ্যাতেই সীমাবদ্ধ নয়, এর মানবিক প্রভাবও সুদূরপ্রসারী। দীর্ঘ সিরিয়াল, চিকিৎসার জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা, মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হওয়া-এসবই যেন এখন ক্যান্সার রোগীদের নিয়তি। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মতো কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানেও দেখা গেছে, প্রতিদিন ২০০ রোগী রেডিওথেরাপির জন্য এলেও পুরোনো মেশিন অকেজো থাকায় এবং নতুন মেশিনের অপ্রতুলতায় সঠিক চিকিৎসা মেলে না। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরাও অসহায়বোধ করেন। এ চিত্র শুধু ক্যান্সার হাসপাতালেরই নয়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকা দেশের সব হাসপাতালেরই।

আমরা মনে করি, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য এমন গুরুত্বপূর্ণ মেশিনগুলো দীর্ঘদিন ধরে অকেজো পড়ে থাকা এক চরম গাফিলতির উদাহরণ। এছাড়া রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালেই এ চিকিৎসাব্যবস্থা না থাকাটা দেশের প্রান্তিক মানুষের প্রতি এক ধরনের উপেক্ষা। চিকিৎসার অভাবে ওইসব অঞ্চলের মানুষ হয় ঢাকায় ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন, নয় তো ব্যয়বহুল বেসরকারি চিকিৎসার ফাঁদে পড়ছেন। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আধুনিক লিনাক মেশিনের ব্যবস্থা থাকলেও এর চিকিৎসা ব্যয় সরকারি হাসপাতালের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি, যা সাধারণ রোগীর আয়ের সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আকাশছোঁয়া ব্যয়ের কারণেই প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী মাঝপথে চিকিৎসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সরকার যদিও আটটি বিভাগে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ক্যান্সার ইউনিট নির্মাণের একটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ১৮০ করার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে, তবে এর বাস্তবায়নের গতি অত্যন্ত শ্লথ।

জানা গেছে, ২০২১ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ এরইমধ্যে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যা হতাশাজনক। এমন অবস্থায় সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালগুলোয় রেডিওথেরাপি চিকিৎসায় অচল মেশিনগুলোকে সচল করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয়সংখ্যক আধুনিক লিনাক মেশিন স্থাপন করা। শুধু তাই নয়, এসব মেশিন সচল ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত মেডিকেল ফিজিসিস্ট ও রেডিওথেরাপি টেকনোলজিস্টের পদ সৃষ্টি ও নিয়োগ নিশ্চিত করা। ভুলে গেলে চলবে না, ক্যান্সার চিকিৎসাকে সাধারণ মানুষের নাগালে আনা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। জীবন রক্ষাকারী এই চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে যেন আর কোনো রোগীকে মাসের পর মাস সিরিয়ালের জন্য ঘুরতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ক্যান্সার চিকিৎসায় রোগীদের দুর্ভোগ লাঘবে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত