প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১২ অক্টোবর, ২০২৫
মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রধান ভিত্তি হলো শিক্ষা। কিন্তু শুধু বইয়ের জ্ঞান অর্জন করলেই একজন মানুষ পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে ওঠে না। সমাজে আমরা প্রায়ই দেখতে পাই, অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি অমানবিক, অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। এর সবচেয়ে জঘন্য উদাহরণ হলো ধর্ষণ, যা শুধু একজন নারী বা শিশুর ওপর নয়, পুরো সমাজ ও মানবতার ওপর আঘাত। প্রশ্ন ওঠে, আসলে কি সুশিক্ষার অভাব ধর্ষকদের জন্ম দেয়, নাকি নৈতিক মূল্যবোধের অভাবই মানুষকে নরপিশাচে রূপান্তরিত করে?
সুশিক্ষা মানে কেবল ডিগ্রি অর্জন নয়, বরং মানবিকতা, সহমর্মিতা, শ্রদ্ধাবোধ, দায়িত্বশীলতা ও সামাজিক সচেতনতা অর্জন করা। আজকের বাস্তবতায় দেখা যায়, অনেক উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি নৈতিকতার পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়। শুধুমাত্র ডিগ্রিধারী হয়ে কেউ যদি মানবিক গুণাবলি ধারণ করতে না পারে, তবে তার শিক্ষা কেবল কাগজে জ্ঞান হিসেবেই থেকে যায়। তাই বলা যায়, শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধই মানুষকে প্রকৃত মানুষ করে তোলে। ধর্ষকরা যেভাবে নিষ্ঠুরভাবে একজন মানুষকে ধ্বংস করে দেয়, তা থেকে বোঝা যায়, তাদের মধ্যে মানবিক বোধ বা নৈতিকতার অস্তিত্ব নেই। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শিক্ষিত পরিবার বা সমাজ থেকে আসা ব্যক্তিরাও এ ধরনের অপরাধ করে। এর কারণ হলো, শৈশব থেকে সঠিক নৈতিক শিক্ষা না পাওয়া, নারীর প্রতি অসম্মানজনক মনোভাব, অশ্লীলতা, বিকৃত মানসিকতা এবং আইনের দুর্বল প্রয়োগ। অর্থাৎ সুশিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধ গঠন না হলে শিক্ষিত ব্যক্তিও নরপিশাচে পরিণত হতে পারে।
অন্যদিকে, একজন নিরক্ষর মানুষও যদি নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ ধারণ করে, তবে সে কখনওই ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধে জড়াবে না। তাই মূল সমস্যা হলো নৈতিকতার অভাব। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র যদি শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সঠিক নৈতিক শিক্ষা, নারী-পুরুষ সমতা এবং মানবিকতা শেখাতে পারে, তবে এ ধরনের অপরাধ অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।
সর্বোপরি বলা যায়, সুশিক্ষা আর নৈতিকতা একে অন্যের পরিপূরক। শিক্ষা যদি হয় শরীর, তবে নৈতিকতা হলো তার প্রাণ। শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জন করলেই সমাজ থেকে ধর্ষকের জন্ম রোধ করা সম্ভব নয়, বরং নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশই ধর্ষকদের মতো নরপিশাচের জন্ম থামাতে পারে। তাই শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, পরিবারে সন্তানদের মধ্যে মানবিকতা গড়ে তোলা এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই হতে পারে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান।