ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

এই শহরে বেঁচে থাকাটাই ভয়!

রানা সরকার
এই শহরে বেঁচে থাকাটাই ভয়!

২০২২ সালে ঢাকায় নির্মাণাধীন একটি ফ্লাইওভারের কংক্রিটের গার্ডার ভেঙে পড়ে এক পরিবারের পাঁচজন সদস্য প্রাণ হারিয়েছিলেন। সেই ভয়াবহ দৃশ্যের পর পুরো দেশ কেঁপে উঠেছিল। মনে হয়েছিল, এবার হয়তো কিছু শিক্ষা হবে, নিরাপত্তা মানদ-গুলো পুনর্বিবেচনা করা হবে। কিন্তু না! সময় গড়িয়েছে, স্মৃতি মুছে গেছে, আর অব্যবস্থাপনা আরও গভীর শিকড় গেড়েছে। সাম্প্রতিক এক ঘটনায় আবারও সেই ভয়াবহতা ফিরে এসেছে। রাজধানীর মেট্রোরেল প্রকল্পের একটি পিলারের বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ নিচে পড়ে নিহত হয়েছেন একজন পথচারী। এর আগেই বিমানবন্দর এলাকায় ফুটপাথে হাঁটতে থাকা তিনজনের ওপর উঠে যায় একটি প্রাইভেটকার, ঘটনাস্থলেই তিনজনই মারা যান। গত জুলাইয়ে টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় ফুটপাতে হাঁটার সময় ঢাকনাবিহীন ম্যানহলে পড়ে এক নারী পথচারীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনাগুলো আর ‘দুর্ঘটনা’ নয়, এগুলো আমাদের প্রশাসনিক ব্যর্থতা, অব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহিতাহীনতার নির্মম প্রতিচ্ছবি। এখন নাগরিক নিরাপত্তা যেন ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছে। রাস্তায় হাঁটা, গাড়িতে ওঠা, এমনকি নিজের ঘরেও থাকা- সবকিছুই অনিশ্চয়তায় ঘেরা। একজন তরুণ নাগরিক ও অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে যখন প্রতিদিন এসব মৃত্যুর খবর দেখি, মনে হয় আমরা এক অনিরাপদ বৃত্তে আটকে আছি। প্রকল্পনির্ভর উন্নয়ন হয়েছে; কিন্তু সেই উন্নয়নে মানুষের নিরাপত্তার স্থান হয়নি। নির্মাণকাজের মান নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, নগর পরিকল্পনা- সবকিছুই যেন এক ধরনের প্রদর্শনী; বাস্তব প্রয়োগ নেই। এ দেশে এখন মৃত্যু এতটাই সহজ হয়ে গেছে যে কখন, কোথায়, কীভাবে প্রাণ হারাতে হবে- তা হয়তো স্বয়ং আজরাইলও জানেন না! কেউ ফ্লাইওভারের নিচে পড়ে মারা যাচ্ছেন, কেউ ফুটপাথে হাঁটতে গিয়ে, কেউ আবার রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে। অথচ প্রতিটি মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য ছিল, যদি সামান্য দায়িত্ববোধ থাকত, যদি কেউ জবাবদিহি করত।

রানা সরকার

ইয়ুথ অ্যাক্টিভিস্ট ও শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত