ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পাঠাভ্যাস ছাড়া জ্ঞানভিত্তিক সমাজ কল্পনাতীত

পাঠাভ্যাস ছাড়া জ্ঞানভিত্তিক সমাজ কল্পনাতীত

জ্ঞানার্জনের যেসব মাধ্যম রয়েছে বই তার মধ্যে অন্যতম। তাই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে পাঠাভ্যাস বাড়ানোর বিকল্প নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- বিশ্বে বইপড়ায় বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। সম্প্রতি সিইও ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের পাঠাভ্যাস-সংক্রান্ত এক জরিপে এই হতাশাজনক তথ্য জানা গেছে। জরিপ অনুযায়ী, বইপড়ায় ১০২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৭তম। গড়পড়তা একজন বাংলাদেশি পুরো বছরে ৬২ ঘণ্টা বই পড়েন, সংখ্যার দিক থেকে এর পরিমাণ তিনটির কম। অন্য দিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বইপড়ুয়া দেশের শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির নাগরিকরা বছরে গড়ে ৩৫৭ ঘণ্টা বই পড়েন, অর্থাৎ- সপ্তাহে প্রায় সাত ঘণ্টা। খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে ভারত, ৩৫২ ঘণ্টা। বইপড়ায় বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের অন্য আটটি হলো- যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন ও নেদারল্যান্ডস।

অতীতের চেয়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ধীরে হলেও শিক্ষায় অগ্রগতি দৃশ্যমান; কিন্তু পাঠাভ্যাসের এমন করুণ হাল আমাদের একটি বড় রকমের দুর্বলতার নির্দেশক। এতে স্পষ্ট, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে আমরা বেখবর। অথচ কোনো দেশের টেকসই উন্নয়নে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন অত্যাবশ্যক। কারণ জ্ঞান মানুষকে প্রশান্তি প্রাপ্তিতে সাহায্য করে। খ্যাতনামা ইংরেজ দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকন বইপড়া সম্পর্কে বলেছেন, ‘একাকিত্ব ও বিশ্রামে আনন্দ, আলাপে অলঙ্কার, বিষয়কর্ম অনুধাবন ও সম্পাদনে দক্ষতাণ্ড এই হচ্ছে বইপড়ার তিন প্রধান ফায়দা।’ স্মরণযোগ্য, বাংলাদেশে পাঠাভ্যাসে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ আমাদের শাসকগোষ্ঠীর বইপড়ার বিষয়ে গুরুত্ব অনুধাবনের ব্যর্থতা। সেইসঙ্গে বেশির ভাগ মানুষ সচ্ছলতা পেতে শুধু আর্থিক বিষয়-আশয় প্রাধান্য দেওয়ায় এ দেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের বিষয়টি এখনও উপেক্ষিত।

যদিও পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে দেশে ‘জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র’ নামে আমাদের বইকেন্দ্রিক একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে- নাগিরকদের বইয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রন্থাগার স্থাপন ও সর্বোপরি একটি জ্ঞানসমৃদ্ধ জাতি গঠনে কাজ করা; কিন্তু এর কর্মকাণ্ড কিছু গ্রন্থাগারে সরকারি অর্থ ও বই প্রদান এবং কয়েকটি জেলায় বইমেলা করার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এছাড়া গ্রন্থাগারগুলোর জন্য বই কেনার বেলায় এমন সব নিম্নমানের বই কেনা হয়; যেগুলোর প্রতি পাঠকের আগ্রহ থাকে না। পাঠকের চাহিদার আলোকে বই না কেনাও পাঠাগারে পাঠক কমে যাওয়ার একটি কারণ। তবে এটিও অস্বীকার করার উপায় নেই, মানুষজন এখন মাত্রাতিরিক্ত ডিভাইসে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তাদের মধ্য থেকে পাঠাভ্যাসের মাধ্যমে জ্ঞানচর্চা লোপ পেয়েছে। তবে আমাদের এ কথাও মনে রাখা দরকার, কারো মধ্যে পাঠাভ্যাস একবার তৈরি করা গেলে ডিভাইস ছেড়ে বইপড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে।

আমরা মনে করি, আজকের সমস্যা-জর্জরিত বাংলাদেশে মানুষের মধ্যে পাঠাভ্যাস বাড়াতে পারলে অনেক সমস্যা আপনাআপনি সমাধান হয়ে যেত। এজন্য দেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করা বর্তমান সময়ে অপরিহার্য। সঙ্গত কারণে বাংলাদেশের মানুষের পাঠাভ্যাস বাড়াতে নীতিনির্ধারকদের মনমানসিকতার পরিবর্তন দরকার। তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে- তারা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ চান, নাকি ভোগবাদী সমাজ চান, যেখানে সামাজিক অস্থিরতা ও অশান্তি নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত