প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১১ নভেম্বর, ২০২৫
ইংরেজি ‘Democracy’ শব্দের বাংলা অর্থ গণতন্ত্র। গণতন্ত্র শব্দটি গ্রীক শব্দ Demos থেকে উৎপন্ন হয়েছে। Demos শব্দের অর্থ হচ্ছে জনগণের শাসন। গণতন্ত্র বলতে জনগণের শাসন বা জনগণের ক্ষমতাকে বুঝায়। সুতরাং, জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী দেশের শাসনকার্য পরিচালনার নামই গণতন্ত্র। অন্যদিকে, ইসলামি শাসনব্যবস্থা হচ্ছে আল্লাহর প্রণীত শাসনব্যবস্থা। ইসলামী বিধিবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় প্রশাসন পরিচালনার ব্যবস্থাকে ইসলামি শাসনব্যবস্থা বলে। অর্থাৎ, ইসলামী শরীয়া তথা কোরআন হাদীস অনুযায়ী ব্যক্তি জীবন, সমাজ জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনা করার নামই হচ্ছে ইসলামি শাসনব্যবস্থা।
১. ইসলামি শাসনব্যবস্থা কোরআন ও সুন্নার ভিত্তিতে ইসলামি শরীয়া মোতাবেক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত। আর গনতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আইনসভার সদস্যদের নিজস্ব মতামত ও শাসকদের ইচ্ছা অনুযায়ি পরিচালিত।
২. ইসলামিক শাসনব্যবস্থায় সকল ক্ষমতার মালিক আল্লাহ এবং আল্লাহর প্রেরিত কোরআন ও রাসূলের হাদিস মোতাবেক শাসনের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। জনগণের মতামতের ভিত্তিতে শাসনব্যবস্থা কায়েমের কথা বলা হয়েছে। বাস্তবে সর্বক্ষেত্রে জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না।
৩. গণতন্ত্র একটি মানবরচিত ধর্মহীন সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা। অন্যদিকে, ইসলামি শাসনব্যবস্থা হচ্ছে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা। এখানে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করে।
৪. ইসলামি শাসনব্যবস্থায় কোরআন ও সুন্নার ভিত্তিতে আইন তৈরি হয় এবং কোরআন সুন্নার ভিত্তিতে আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করা হয়। অন্যদিকে, গণতন্ত্রে বিভিন্ন আদর্শ অনুসারি আইনসভার সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে আইন তৈরি হয় এবং বাস্তবায়ন করা হয়।
৫. গণতন্ত্র যেহেতু জনগণের শাসন সেখানে বিভিন্ন মতের লোক বসবাস করে তাই তাদের প্রত্যকের মতামত আলাদা আলাদা। অনেক সময় শাসক জনগণের মতের বাইরে নিজস্ব আইন তৈরি করে। অন্যদিকে, ইসলামি শাসনব্যবস্থা হচ্ছে শুধুমাত্র আল্লাহর আইন। এখানে কারও নিজস্ব মনগড়া আইন তৈরির সুযোগ নেই।
৬. গণতন্ত্রে আইনবিভাগ ও বিচারবিভাগের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে; কিন্ত বাস্তবে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়না। ঘুষ ও ক্ষমতা দিয়ে ন্যায় বিচারকে প্রভাবিত করা হয়। কোনো অনিয়মের জন্য জনগণ সরাসরি রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে কাছে গিয়ে নালিশ করতে পারে না।
অন্যদিকে, ইসলামি শাসনব্যবস্থায় বিচারক কোরআন -সুন্নাহ ও ইজমা-কিয়াসের ভিত্তিতে বিচারকার্য পরিচালনা করে বিদায় এখানে সবার জন্য আইন সমান। বিচারক স্বাধীনভাবে কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক বিচারকাজ পরিচালনা করে। এখানে পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নেই। ইসলামি শাসনব্যবস্থায় ধনীর জন্য যে আইন, একজন মিসকিনের জন্য সেই একই আইন।
৭. ইসলামি শাসনব্যবস্থায় কোরআন ও সুন্নার আদর্শে জীবন গড়ার কথা বলা হয়েছে। আর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নেতাদের আদর্শ অনুসরণ করে জীবন পরিচালনার কথা বলা হয়েছে।
৮. ইসলামি শাসনব্যবস্থায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার অধিকার সমান। কিন্ত গণতন্ত্রে সকলের সমান অধিকারের কথা বললে ও বাস্তবে শাসকের ক্ষমতা বেশি। শাসকের ইচ্ছার বাইরে অনেক সময় কথা বলা যায় না।
৯. গণতন্ত্রের জনক এরিস্টটল, গ্রিসের সলোন ও খ্রিস্টান জন লক। আর ইসলামের জনক স্বয়ং আল্লাহ। মহান আল্লাহ তার প্রেরিত রাসূলের মাধ্যমে ইসলামকে পরিপূর্ণতা দান করেছেন।
১০. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় শাসকরা নিজেদের ইচ্ছামত আইন তৈরি করে এবং ইচ্ছামতো সে আইন প্রয়োগ করে। ইসলামি শাসনব্যবস্থায় শাসকরা কোরআন সুন্নার বাইরে শাসকের ইচ্ছামতো মনগড়া আইন তৈরি করতে পারে না।
১১.গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় শাসনবিভাগের সদস্য সংখ্যা বেশি, শাসনবিভাগের সদস্যরা নানা রকম দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে পরে। একসময় তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আর ইসলামি শাসনব্যবস্থায় খলিফা প্রধান একজন তিনি প্রত্যেক প্রদেশে একজন করে শাসনকর্তা নিয়োগ করে। তাদের মধ্য কোরআন সুন্নার বাইরে কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে দলীয় প্রধান সঙ্গে সঙ্গে তাকে অপসারণ করে।
১২. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় শাসকরা একবার ক্ষমতায় বসলে আর নামতে চায় না। তারা তখন স্বৈরাচারি কার্যকলাপ চালু করে। আর ইসলামি শাসনব্যবস্থায় শাসক যদি স্বৈরাচার হয় তাহলে বেশিদিন ক্ষমতায় ঠিকে থাকতে পারে না।
১৩. ইসলামি শাসনব্যবস্থা যেখানে বিদ্যমান সেখানে চুরি-ডাকাতি, খুন-ধর্ষণ, টাকা পাচার, ঘুষ অনিয়ম অত্যন্ত কম। যেহেতু সেখানে কোরআনের শরীয়া আইন চালু হওয়ায় মানুষ শাস্তির ভয়ে সহজেই কোনো অপকর্মে লিপ্ত হয় না। আর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এগুলো সব বিদ্যমান, শাসকরা নিজেরাই অনেক সময় আইনের তোয়াক্কা করে না। তারা ঘুষ দুর্নীতি, টাকা পাচার ও নানারকম অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে।
১৪. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিভিন্ন উৎস থেকে এবং মানুষের মনগড়া মতামত থেকে আইন তৈরি হয়। যেমন- ভারত, আমেরিকা, ব্রিটেনকে নকল করে আমাদের সংবিধান তৈরি করা হয়েছে। অন্যদিকে, ইসলামি শাসনব্যবস্থায় কোরআন হাদিস ও ইজমা-কিয়াস অনুসরণ করে আইন তৈরি হয়। কোরআন হাদিসের বাইরে কোনো আইন ঠিকতে পারে না।
১৫. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় যখন তখন আইনের পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংশোধন সম্ভব। কিন্তু ইসলামি শাসনব্যবস্থায় কোরআন হাদিসের বাইরে যখন তখন আইন পরিবর্তন পরিমার্জন করা যায় না।
১৬. ইসলামি শাসনব্যবস্থা মূলত আল্লাহর আইন ও শাসন শাসনব্যবস্থা। আর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা হচ্ছে মানুষের (এরিস্টটল, সলোন ও জন লক) তৈরি শাসনব্যবস্থা।
১৭. ইসলামি শাসনব্যবস্থায় ঈমানদার, এলমধার, তাকওয়াবান, লোভহীন নৈতিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিকে শাসক বানানোর কথা বলা হয়েছে। আর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণ যাকে ইচ্ছা, তাকে শাসক হিসেবে নিয়োগ করে। অধিকাংশ সময় শাসক নিজেই নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে।
১৮. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা একজন রাষ্ট্রদার্শনিকের ব্যক্তিগত মতামত। অন্যদিকে, ইসলামি শাসনব্যবস্থা সৃষ্টিকর্তার মতামত।
১৯. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় অনেকগুলো পদ বিদ্যমান। ফলে তারা যার যার অবস্থান থেকে নানারকম দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে।
মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন
প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট