প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫
‘একজন বন্ধু হারালে একটি করে বই কিনে নিও।’ বহু আগে বলে আসা এ কথায় যেন বন্ধুহীন ব্যক্তির নিঃসঙ্গতার সঙ্গী। যান্ত্রিকতার এই যুগে এসেও বই পড়ার প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না। দেখা আছে, এখনও অনেক পাঠক বইমেলার অপেক্ষায় থাকে। পাঠচক্র কিংবা বই আড্ডায় শরিক হয়। এইসব পাঠচক্রের মাধ্যমে আমাদের পাঠ্যভ্যাস তৈরি হয়। কোন বিষয় নিজস্ব অভিমত প্রকাশের সক্ষমতা তৈরি হয়। পাশাপাশি বই নিয়ে নানা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ-এর মাধ্যমে পড়ুয়াদের মধ্যে সেতুবন্ধন রচিত হয়। আবার অনেক তরুণ-তরুণী দেখা যাচ্ছে নানাভাবে বই পড়া বৃদ্ধির লক্ষ্য মানুষের মধ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। আমার হাতে যখন একটি বই থাকে তখন মনে হয়, আমি অকারণে বসে নেই আমার একটা কাজ আছে। তীব্র মন খারাপে আমার মন খারাপের সঙ্গী বইয়ের মধ্যে থাকা চরিত্রগুলো। কিন্তু বই নিয়ে এই আবেগগুলো আজ হারাতে বসেছে চিন্তা-চেতনার আমূল পরিবর্তনে। এখন একটা বই পড়ার চেয়ে সেই বই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেওয়াতে আমরা বেশি উৎসাহী। হাতে হাতে ডিভাইস আমাদের এই চিত্রের পেছনের একটা কারণ বলা যায়। বই আত্নার মহাঔষধ জানা সত্ত্বেও আমরা কজন তা রোজ নিয়ম করে পড়ছি? প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে হয়তো এখন খুব সহজে একটা বইয়ের পিডিএফ নামিয়ে পড়া যায়। কিন্তু বই হাতে নিয়ে পড়ার আনন্দ; বইয়ের মলাটের স্পর্শে তৈরি হওয়া ভালো লাগার অনুভূতি কখনও কি মোবাইলে পড়ে সেই আনন্দ পাওয়া যায়? কেউ কেউ তো বইয়ের ঘ্রান নিয়ে মনকে তৃপ্ত করে। এই অনুভূতিগুলো শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ইহা উপলব্ধির বিষয়। বই পড়া নিয়ে শত হতাশার মধ্যেও কিছু দৃশ্য মনকে আন্দোলিত করে। তেমনি একটি অনুভূতি হয় চট্টগ্রামের জামালখান প্রেসক্লাবের নিচে বাতিঘরে গেলে। সেখানে কচি-কাঁচা বই পড়ুয়াদের দেখা মেলে। ক্লাস শুরু আগে কিংবা অবসরে বাবা-মায়ের সঙ্গে তাদের দেখা মেলে বাতিঘরে। ছোট ছোট হাত দিয়ে তারা গল্প, কবিতা ও কল্পকাহিনী বই নেড়ে দেখে আবার কখনও বা কৌতুকের বই পড়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। তাদের এই দৃশ্য আমাকে বেশ মুগ্ধ করে। এজন্য আমাদের অভিভাবকদের উচিত ছোট থেকেই সন্তানদের বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া।
সুন্দর ছবিযুক্ত পছন্দের বই দেওয়ার মাধ্যমে সন্তানদের ছোট থেকেই বইমুখী করা যায়। এর পাশাপাশি সন্তানের সঙ্গে বই নিয়ে সময় কাটালে সন্তানের বইয়ের সঙ্গে দৃঢ় বন্ধন গড়ে ওঠে। বাবা-মা যদি ছোট থেকেই সন্তানদের একটি ছোট ব্যাংকে টাকা জমিয়ে বইয়ের সঞ্চয় তাদের মানসপটে গেঁথে দিতেন তবে তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ছড়িয়ে যেতো। নিজ পরিবারে অন্তত একদিন ছুটির দিনেও যদি বই নিয়ে আসর করা যেত তবে সন্তান নিত্যদিনের আবশ্যক কাজের ন্যায় বইকে আঁকড়ে ধরার কৌশল রপ্ত করতে পারতো। মূলত সন্তানদের মনে বই নিয়ে ভালো লাগার চিত্র ফুটিয়ে তোলার ব্যর্থতা থেকে বর্তমান প্রজন্ম বই বিমুখ হচ্ছে। সর্বশেষে বলি, সব প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে আগামীর প্রজন্ম বইমুখী হলে তবেই সমৃদ্ধ হবে জ্ঞানের আঙিনা।