ঢাকা সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিদ্যুৎ খাতে দেনার পাহাড়

বিদ্যুৎ খাতে দেনার পাহাড়

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ৩৭ হাজার ৭০ কোটি টাকার বিশাল দেনার বোঝা দেশের বিদ্যুৎ খাতের স্থিতিশীলতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এ বিপুল অঙ্কের বকেয়া শুধু অর্থনৈতিক সংকট নয়, বরং আমাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। সরকারি-বেসরকারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, গ্যাস সরবরাহকারী পেট্রোবাংলা, গ্রিড কোম্পানি-সবাই আজ পিডিবির পাওনাদার। এক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ দেনার বেশিরভাগই বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আইপিপি) প্রাপ্য (২১,৩০৩ কোটি টাকা), যেখানে গ্যাস বিল বাকি ১১,০২৫ কোটি টাকা। এ পরিস্থিতি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ক্রয়-বিক্রয়ের মডেলটিতে বড় ধরনের সমন্বয় প্রয়োজন।

বিশেষত, স্থানীয় আইপিপিগুলোর বকেয়া দ্রুত হারে বাড়া (১৮,২৯৩ কোটি টাকা থেকে ২১,৩০৩ কোটি) অত্যন্ত শঙ্কার বিষয়। বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সংগঠন বিপ্পার সভাপতি ডেভিড হাসনাতের মন্তব্য অনুযায়ী, বর্তমান সরকার আমলে আন্তর্জাতিক সরবরাহকারী যেমন ভারত এবং আদানি-তাদের বকেয়া আদায়ে সক্ষম হলেও স্থানীয় কোম্পানিগুলো বিল পাচ্ছে না। ফলে তারা ব্যাংকের দেনায় জর্জরিত। এ বৈষম্যমূলক পরিশোধ প্রক্রিয়া দেশীয় বিনিয়োগকারীদের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করছে, বিদ্যুৎ খাতে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছে।

সমস্যার মূলে রয়েছে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রয়মূল্যের বিশাল ব্যবধান। পিডিবির হিসাবে, প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ও ক্রয়মূল্য ১১ টাকা ৮৩ পয়সা, আর বিতরণ পর্যন্ত খরচ ১২ টাকা ৩৫ পয়সা। অথচ ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে এর অনেক কম দামে। ফলে প্রতি ইউনিটে গড়ে প্রায় ৫ টাকা ৭২ পয়সা লোকসান গুণতে হচ্ছে পিডিবিকে। এ লোকসান পুষিয়ে নিতে যে ভর্তুকি দরকার, তা সরকার পর্যাপ্ত মাত্রায় দিচ্ছে না। গত অর্থবছরে যেখানে লোকসান হয়েছে ৫৫ হাজার কোটি টাকা, সেখানে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৮ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্যাস সংকটের কারণে ব্যয়বহুল তেল ও কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র চালানোর বাধ্যবাধকতা, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং জ্বালানি আমদানির উচ্চ ব্যয়।

বকেয়া পরিশোধে জরুরি ভিত্তিতে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের আবেদন পরিস্থিতি কতোটা গুরুতর তা তুলে ধরে। আগামী নির্বাচনের আগে এ বিল পরিশোধ না হলে নতুন সরকারকে বড় ধরনের সংকটে পড়তে হতে পারে। বিদ্যুৎ খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে, সরকারকে অবশ্যই দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর কৌশল গ্রহণ করতে হবে। শুধু ভর্তুকি বাড়িয়ে সাময়িক সমাধান না খুঁজে, বরং বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) শর্তাবলি এবং উৎপাদন খরচ কমানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে, দেশীয় আইপিপিগুলোর বকেয়া তাড়াতাড়ি পরিশোধ করে তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা দরকার। এ দেনার পাহাড় শিগগির না কমালে, দেশের অর্থনীতির ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব অনিবার্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত