ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পণবন্দি মুক্তি স্থগিত করল হামাস

পণবন্দি মুক্তি স্থগিত করল হামাস

ফিলিস্তিনে ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের প্রধান খলিল আল-হাইয়্যা বলেছেন, গাজা উপত্যকা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিশ্চিতভাবে ব্যর্থ হবে। তিনি গত সোমবার ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৪৬তম বিজয়বার্ষিকীর শোভাযাত্রা শেষে রাজধানী তেহরানের আজাদি স্কয়ারে সমবেত লাখো জনতার উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ মন্তব্য করেন। হাইয়্যা বলেন, ‘আমরা তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেবে যেভাবে তাদের আগে আরো অনেক পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়েছি।’ এর আগে গত রোববার ট্রাম্প তার জন্য নির্ধারিত রাষ্ট্রীয় বিমানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তার আগের একটি দাবির পুনরাবৃত্তি করে বলেন, তিনি গাজা উপত্যকাকে কিনে এর মালিকানা নিতে বদ্ধপরিকর। গাজার কোনো কোনো অংশ পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য দেশ যাতে পুনঃনির্মাণ করে দিতে পারে তিনি সে ব্যবস্থা করে দেয়ারও আশ্বাস দেন।

ট্রাম্প গত কিছুদিন ধরে গাজা নিয়ে যে পরিকল্পনা তুলে ধরছেন তা হচ্ছে, তিনি গাজার ২৩ লাখ অধিবাসীকে এখান থেকে বিতাড়িত করে উপত্যকাটিকে একটি পর্যটন হাবে পরিণত করবেন এবং আমেরিকার মালিকানায় নিয়ে নেবেন। তার এ দুরভিসন্ধির জবাবে হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘রিয়াল স্টেট ডিলারের মতো ট্রাম্প যেসব কথাবার্তা বলছেন তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।’ হামাস নেতা ইজ্জাত আর-রিশক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে অযৌক্তিক বলে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ফিলিস্তিনসহ গোটা পশ্চিম এশিয়া অঞ্চল সম্পর্কে একজন অজ্ঞ ব্যক্তির মুখ দিয়েই এমন কথা বের হতে পারে। তিনি বলেন, গাজা কেনাবেচা করার মতো কোনো ভূখণ্ড নয়। এটি অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ

১৫ ফেব্রুয়ারির পণবন্দি মুক্তি স্থগিত করেছে হামাস : গাজা যুদ্ধবিরতির আওতায় আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী ইসরাইলি পণবন্দিদের মুক্তি দেয়ার যে পরিকল্পনা ছিল তা স্থগিত করেছে হামাস। হামাসের সামরিক বাহিনী ইজ্জাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা সোমবার রাতে এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গত তিন সপ্তাহে ইসরাইল ধারাবাহিকভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে আসার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মধ্যস্থতাকারীরা যদি আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তেল আবিবকে তার প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে বাধ্য করতে পারেন তাহলে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হতে পারে। আবু ওবায়দা সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ প্রকাশিত এক পোস্টে বলেছেন, গত তিন সপ্তাহে প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃত্ব শত্রুর চুক্তিলঙ্ঘন ও চুক্তির শর্তগুলো না মানার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে : গাজা উপত্যকার উত্তরে বাস্তুচ্যুতদের প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত করা, তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করা এবং চুক্তি অনুসারে সকল ধরনের ত্রাণ সহায়তা প্রবেশের অনুমতি না দেয়া।

হামাসের সামরিক মুখপাত্র আরো বলেন, অন্যদিকে, প্রতিরোধ আন্দোলন তাদের ওপর অর্পিত সমস্ত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে। এ কারণে, আগামী শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, মুক্তি পাওয়ার কথা থাকা সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী পণবন্দিদের মুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হলো। যতক্ষণ না দখলদার বাহিনী চুক্তির শর্তগুলো মেনে নেয় এবং বিগত সপ্তাহগুলোর ক্ষতিপূরণ আদায় করে ততক্ষণ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। বিবৃতির শেষাংশে আবু ওবায়দা আরো বলেন, আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি, যতক্ষণ দখলদার বাহিনী চুক্তির শর্ত মেনে চলে, ততক্ষণ আমরাও তা মেনে চলব।

সৌদি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার নিন্দা জানাল তেহরান ও রিয়াদ : ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘সৌদি ভূখণ্ডে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা’ করার যে আহ্বান জানিয়েছেন তার কঠোর নিন্দা করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি। তিনি বলেছেন, এটি হচ্ছে নজিরবিহীন আগ্রাসনের পরিকল্পনা যা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে হুমকিগ্রস্ত করছে। তিনি গত সোমবার সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানের সঙ্গে এক টেলিফোনালাপে এ নিন্দা জানান। নেতানিয়াহুর বক্তব্যকে ‘ভয়ঙ্কর উস্কানি’ হিসেবে উল্লেখ করে আরাকচি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এ ধরনের বাগাড়ম্বর ইহুদিবাদী ইসরাইলের সম্প্রসারণবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষার স্বরূপ উন্মোচন করে দেয়। ফিলিস্তিনি জনগণকে জোরপূর্বক তাদের অবশিষ্ট ভূখণ্ড থেকেও বিতাড়িত করা এবং অবৈধ ইহুদি বসতির বিস্তার ঘটানোর যে অভিপ্রায় তেল আবিব প্রকাশ করেছে তারও তীব্র নিন্দা জানান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি গাজা উপত্যকা নিয়ে নিজের দুরভিসন্ধি ধাপে ধাপে বর্ণনা করেছেন। প্রথমে তিনি বলেছেন, গাজা পুনঃর্নিমাণ করার জন্য সেখানকার অধিবাসীদের সাময়িকভাবে পার্শ্ববর্তী আরব দেশগুলোতে সরিয়ে নিতে হবে। এরপর তিনি বলেছেন, তিনি গাজা দখল করতে চান এবং ইসরাইলই গাজা দখল করে আমেরিকার হাতে তুলে দেবে। সর্বশেষ সোমবার তিনি বলেছেন, গাজাবাসীকে আর কখনোই এই উপত্যকায় ফিরতে দেয়া হবে না। ট্রাম্পের এসব কথাবার্তায় পুলকিত যুদ্ধাপরাধী নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে বলেছেন, সৌদি আরবে ‘বহু খালি জায়গা পড়ে আছে’ যেখানে গাজাবাসীকে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেয়া যেতে পারে এবং সেখানে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ওই বক্তব্যের পাশাপাশি ট্রাম্পের বাগাড়ম্বরেরও নিন্দা জানিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত এ ধরনের সম্প্রসারণকামী কথাবার্তা বন্ধ করার ব্যবস্থা করা। ফোনালাপে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজাবাসী ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার যেকোনো উদ্যোগের বিরুদ্ধে তার দেশের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। এর আগে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের মুখপাত্র আব্দেল-লতিফ আল-কানুয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, গাজা উপত্যকা বিক্রয়যোগ্য কোনো পণ্য নয় বরং এটি ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত