ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রোজার আগে ঊর্ধ্বমুখী বাজার

রোজার আগে ঊর্ধ্বমুখী বাজার

পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে যাচ্ছে কাল। এরই মধ্যে রাজধানীর বাজারগুলোতে সব ধরনের সবজি, মাছ ও মুরগির দাম বেড়েছে। স্বাভাবিক আছে আদা-রসুন ও পেঁয়াজের দাম। তবে এগুলো যে কোন সময় বাড়তে পারে। সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রতি বছর রমজান এলেই নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি যেন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে কাঁচাবাজারের বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বেশকিছু বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

রাজধানীর মহাখালী বাজারে দেখা যায়, মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। ফুলকপি, গাজর, টমাটো, সিম মিলছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। ভোক্তাদের এখনও ঘুরতে হচ্ছে দোকানে দোকানে। পাওয়া গেলেও, মিলছে না গায়ে লেখা দরে। আটা, ময়দা, পোলাওয়ের চাল না কিনলে, সয়াবিন তেলের সরবরাহ করছে না ডিলাররা। এমন অভিযোগ করছেন খুচরা বিক্রেতারা।

আগের চড়া দরেই স্থিতিশীল মিনিকেট ও নাজিরশাইলের দাম। ব্যবসায়ীদের দাবি, ভারত থেকে আমদানির প্রভাব পড়েনি বাজারে। কেননা, যৌক্তিক দামে একই মানের চাল আনা যায়নি। মাংসের দামও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। গত শুক্রবার প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ১৮০-২০০ টাকা ছিল। একইভাবে সোনালি মুরগির দাম বেড়ে ২৮০-৩১০ টাকা হয়েছে।

মুরগির পাশাপাশি বেড়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এই দাম সপ্তাহখানেক আগে কিছুটা কম ছিল। আর কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে খাসির মাংসের দাম। গতকাল এক কেজি খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা। এ ছাড়া ছাগলের মাংস বিক্রি হয়েছে ১০৫০-১১০০ টাকায়।

মাছের বাজারেও একই অবস্থা। চাষের চিংড়ি, কই, শিং, তেলাপিয়া, রুই ও পাঙাশ মাছের দাম কেজিতে ২০-৫০ টাকা বেড়েছে। নদীর মাছের দাম বেড়েছে আরো বেশি। মাঝারি আকারের আইড়, বোয়ালের জন্য পকেট থেকে বেরিয়ে যাবে ২ হাজার টাকারও বেশি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাল থেকে রমজান মাস শুরু, আবার এখন মাসের শেষ সময়। এই দুই কারণে ভোক্তারা বেশি করে বাজার করছেন। বাড়তি চাহিদার কারণে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। কারণ, চাহিদার তুলনায় পণ্যের সরবরাহ কম।

এদিকে গত ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ দামে লেবু বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে সাধারণ মানের লেবুর হালি ছিল ২০-৪০ টাকা, যা গতকাল ৪০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর বড় লেবু বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার আশপাশে। অন্যদিকে বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৪৫ থেকে ৬৫ টাকা, হাইব্রিড শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও দেশি শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে বেগুন ও শসার দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কম ছিল। তবে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে খেজুর, ছোলা, চিড়া, মুড়ি, গুড় প্রভৃতি পণ্যের দাম। এ বছর রমজানের আগে সরকার খেজুর আমদানিতে শুল্ক-কর কমিয়েছে; যার ফলে আমদানি বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, কম শুল্ক ও সরবরাহ বেশি থাকায় গত এক মাসের মধ্যে মানভেদে খেজুরের দাম কেজিতে ২০ থেকে ২০০ টাকা কমেছে। আর চিড়া, মুড়ি, গুড় প্রভৃতি পণ্যের দাম আগের মতোই রয়েছে। মানভেদে প্রতি কেজি চিড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা, আখের গুড় ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, খেজুরের গুড় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ও মুড়ি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কাওরান বাজারের মুদি দোকানি শফিকুল ইসলাম বলেন, ডালজাতীয় পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। আগের বছর রমজানেও এমন দাম ছিল। মাঝে মসুরের দাম কিছুটা বেড়েছিল, এখন সেটা কমেছে।

মাস দুই আগে চিনির দাম উঠেছিল ১২৫-১৩০ টাকায়। এখন তা কিছুটা কমে ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এ বিক্রেতা।

অন্যদিকে রমজানের আগেই চড়া হতে শুরু করেছে ফলের বাজার। এরই মধ্যে বিভিন্ন ফলের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। দাম আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা বলছেন, রমজানে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিছু বলার নেই, দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিমাণে কম কিনতে হবে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, আগের সরকারও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সরকারও পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। আসলে সাধারণ মানুষ ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সরেজমিন মূল্য বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া গেছে। রাজধানীর রামপুরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আপেল বর্তমানে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, মাল্টা ২৮০ টাকা, পেয়ারা ৮০-১০০ টাকা, তরমুজ সাইজ ভেদে ৪৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ী মাসুদ বলেন, প্রতিটি ফলের দাম বাড়তির দিকে। আপেল ও মালটার দাম আরও বাড়বে।

তিনি বলেন, একশ্রেণির আড়তদার মাল স্টক করে ফেলছে, ফলে পর্যাপ্ত পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। দাম বেশি দিয়ে কিনে সীমিত লাভ করে আমরা ছেড়ে দিচ্ছি। মাসুদ জানান, সব ধরনের ফলের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে বেড়েছে। ফল ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া বাংলা বলেন, তার দোকানে হরেক রকমের আপেল রয়েছে। সর্বনিম্ন ৩৬০ টাকা থেকে ৪২০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, বাজার এখন চড়া হয়ে গেছে। কদিন আগেও এই একই আপেলের দাম কম ছিল। অথচ এখন প্রতিকেজি ৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, পেয়ারা আগে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো। এখন ১২০ টাকা প্রতি কেজি। পেঁপে প্রায় ২০০ টাকা কেজি। আর তরমুজ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

রুবেল মিয়ার জানান, শনিবার থেকে আবারও দাম বাড়বে। এই দাম বাড়ার প্রবণতা পুরো রমজানজুড়েই থাকবে। তার অভিযোগ, মালামাল স্টক হয়ে গেছে। সংকট দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে দাম বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের মতো সাধারণ বিক্রেতাদের করার কিছুই নেই। এদিকে ফল কিনতে আসা ক্রেতা আব্দুর রহমান বলেন, দাম বাড়ার ভয়ে একদিন আগেই তিনি কিনতে এসেছেন। কিন্তু এসে দেখেন গত সপ্তাহ থেকে ফলের দাম কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তার অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের কাছে আমরা আগেও জিম্মি ছিলাম, এখনও জিম্মি। কোনও সরকারই ব্যবসায়ী, যারা বিভিন্ন সুযোগ খুঁজে দাম বাড়িয়ে দেয়, এদের দমাতে পারল না। আরেক ক্রেতা ইয়াসিন আহমেদ বলেন, আমরা কোথায় যাব। কার কাছে বলব। সব সহ্য করেই চলেছি। তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়গুলো বারবার বললেও কেউ কানে নেয় না। বাজারে আসা লোকজন বলছেন, এখনই কঠোর মনিটরিং না করলে যে পরিস্থিতি দেখছি, তাতে রমজানে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত