ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জনভোগান্তি নিরসনে কঠোর পুলিশ

জনভোগান্তি নিরসনে কঠোর পুলিশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এরপর রাজধানী ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন স্থানে দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নামতে শুরু করে বহু সংগঠন। এতে জনভোগান্তি বাড়তে থাকে। এই জনভোগান্তি নিরসনে পুলিশের ভূমিকা এতোদিন কিছুটা শীতল দেখা গেলেও গতকাল কঠোর হয়েছে।

জানা গেছে, পদযাত্রা করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাওয়ার সময় জাতীয়করণের প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লাঠিপেটা করে এবং জলকামান ব্যবহার করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। বুধবার বিকালে কদম ফোয়ারা কাছাকাছি এলাকায় এ ঘটনায় পাঁচজন শিক্ষক আহত হয়েছেন; কয়েকজনকে পুলিশ আটক করেছে।

বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে তারা পদযাত্রা করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। শিক্ষকদের মিছিলটি কদম ফোয়ারা কাছাকাছি গেলে সেখানে অবস্থানে নিয়ে থাকা পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এসময় শিক্ষকরা সড়কে বসে পড়লে পুলিশ জলকামান থেকে পানি ছিটিয়ে এবং লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ উদ্দিন বলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ২৫ দিন অবস্থান করেও দাবি আদায়ের বিষয়ে ন্যূনতম আশ্বাস না পাওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে পদযাত্রা নিয়ে যাচ্ছিলাম। পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে, জলকামান থেকে পানি মেরে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। আমাদের পাঁচজন শিক্ষক আহত হয়েছেন। বেশ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করেছিল, তাদের মধ্যে তিনজনকে এখনো ছাড়া হয়নি। আমরা প্রেস ক্লাবের সামনে ফের অবস্থান নিয়েছি।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালে সারা বাংলাদেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করলেও সমযোগ্যতা থাকার পরেও শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সারা বাংলাদেশের যোগ্য ৪ হাজারের বেশি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়ে যায়। ২০১৫ সাল থেকে আমরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছি। আন্দোলনের ফলে গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে একটি চিঠি মন্ত্রণালয়ের ইস্যু করা হয়। এই চিঠি দ্রুত বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের কাছে কদম ফোয়ারা মোড়ে থেকে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এতে প্রায় ৪০ মিনিট বন্ধ থাকার পর যান চলাচল শুরু হয় রাস্তায়। সরেজমিন দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১২টা থেকেই পুলিশ রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করছিলেন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের। পুলিশ তাদের এও বলেছিল আপনারা কয়েকজন প্রতিনিধি হয়ে আমাদের সঙ্গে আসুন। আমরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে আপনাদের স্মারকলিপি পৌঁছে দেব। কিন্তু এতে কোনোভাবেই রাজি হননি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এদিকে রাস্তায় যানজট বাড়তে থাকে এবং তীব্র আকার ধারণ করে। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করে তাদের ধাক্কা দিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশকে কোনও লাঠিচার্জ করতে দেখা যায়নি। পরে যান চলাচল শুরু হয়।

হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে এক দফা দাবি পূরণ হলেও বাকি চার দফা দাবি আদায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা করেন চিকিৎসকরা। তাদের এই পদযাত্রা দোয়েল চত্বরে যেতেই বাধা দেয় পুলিশ। তবে সেখান থেকে বাধা উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগুতে থাকেন চিকিৎসকরা। পরে হাইকোর্ট মোড় হয়ে শিক্ষাভবনের সামনে গেলে সেখানে আগে থেকেই দেয়া পুলিশের ব্যারিকেডে আটকে যায় আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পদযাত্রা। আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা বলেন, আমরা যৌক্তিক দাবি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা করি। কিন্তু পুলিশ আমাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আজ যদি চিকিৎসকদের সঙ্গে খারাপ কিছু হয়, এর দায়ভার ডা. সাইদুর রহমান এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে নিতে হবে। বাকি চার দফা দাবি পূরণ না হলে আমরা ঘরে যাবো না। বুধবার দুপরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রা শুরু করেন চিকিৎসকরা। দোয়েল চত্বরে এলে পুলিশ তাদের অনুরোধ করে, সবাই না গিয়ে প্রতিনিধি পাঠাতে। কিন্তু চিকিৎসক এবং মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে দোয়েল চত্বর পার হয়ে যান। পরে শিক্ষাভবনের সামনে চিকিৎসকদের পদযাত্রা আটকে দেয় পুলিশ।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার গ্লোবাস কারখানায় শ্রমিক নির্যাতনের প্রতিবাদ ও বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে গতকাল বুধবার সকালে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তখন পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাদের সরিয়ে দেয়।

শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার মৌচাক এলাকায় গ্লোবাস ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় এক নারী শ্রমিককে নির্যাতনের প্রতিবাদ করেন তার সহকর্মীরা। এ সময় শ্রমিকেরা কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ সেগুলো বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দেয়। তবে পরদিন থেকে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর শ্রমিকরা গত মঙ্গলবার মহাসড়ক অবরোধ করেন। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ নোটিশ টাঙিয়ে দেয়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘শ্রম আইনের ১৬ ধারা অনুযায়ী, ১২ মার্চ থেকে গ্লোবাস কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত