ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় বিএনপি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক আজ
নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় বিএনপি

গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভোটের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করলেও দুটি সম্ভাব্য ডেটলাইন ঘোষণা করেছেন। চলতি বছরের ডিসেম্বরে কিংবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন হবে বলে জানানো হয়েছে। শুধু প্রধান উপদেষ্টা নয়, তার দফতর থেকেও নির্বাচন নিয়ে এমন কথাই বলে আসছেন। তবে এ রকম সময়সীমায় পুরোপুরি আশ্বস্ত নয় বিএনপি। তাই সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দলটি আজ বুধবার বৈঠক করবে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দুপুর ১২টায় বৈঠকটি হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে, বিএনপির নেতারা বলছেন, বৈঠকে আশ্বস্ত হলে ভোটের লড়াইয়ের কৌশল ঠিক করবে দলটি আর ফলাফল অন্যরকম হলে রোডম্যাপ চেয়ে কর্মসূচিতেও যেতে পারে বিএনপি।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গোষ্ঠী আবদার করছেন, তারা ৫ বছর ক্ষমতায় দেখতে চান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারজিস আলমও সম্প্রতি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসকে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। এছাড়া স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও কথাচ্ছলে বলেছেন, জনগণ চায় এ সরকার ৫ বছর থাকুক। বিষয়গুলো আরও অস্বস্তি তৈরি করেছে বিএনপি শিবিরে। যা সরকারের প্রেস নোটেও কাটেনি। পরিস্থিতি যখন এই, তখন বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভোটের সুনির্দিষ্ট সময় ইস্যুতে তারা জানতে চাইবেন প্রধান উপদেষ্টার কাছে। হতাশা-অবিশ্বাস দূর করতেই আজ বৈঠকে বসছেন তারা। আগামী ডিসেম্বরের আগেই প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিএনপি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ চাইবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সম্প্রতি গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটা জানান তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, নির্বাচন নিয়ে নানা মহলে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তাই ডিসেম্বরের আগে নির্বাচনি রোডম্যাপ চাইতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সময় চেয়েছে বিএনপি।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে বুঝাতে চেষ্টা করব। কারণ তার প্রতিশ্রুতি মতো আগামী ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন দেয়ার জন্য বিএনপি ও জাতিকে যে আশ্বাস তিনি দিয়েছিলেন, সেই কথাগুলো তিনি যেন যথাযথ প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে ঘোষণা দেন। এছাড়াও নির্বাচন কমিশনকে তিনি যেন আদেশ দেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করার জন্য।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এক থেকে দেড় বছর আগেই বিএনপি ৩১ দফা জাতির সামনে উত্থাপন করেছিল। জাতির কাছে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু সংস্কারের নামে কারও এজেন্ডা বাস্তবায়ন হতে দিতে চাই না।

দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, যারা ড. ইউনূসকে ৫ বছর রাখার চেষ্টা করছে, তারাই তাকে প্রিয় জায়গা থেকে নামিয়ে দেবে এবং তার সব অর্জন নষ্ট করে দেবে। পাশাপাশি দেশটাও শেষ করে দেবে। কারণ একটা সরকার নির্বাচন ছাড়া থাকতে পারে না। যদি থাকতেই হয়, তাহলে যথাযথ নির্বাচনের মাধ্যমে সেটি হতে হবে। মির্জা আব্বাস আরও বলেন, হয়তো ড. ইউনূস নির্বাচন দেয়ার জন্য যথেষ্ট সচেষ্ট আছেন। কিন্তু উনার আশপাশে আওয়ামী বাহিনী এখনও লুকায়িত আছে। তারা প্রধান উপদেষ্টাকে অন্য পথে পরিচালিত করতে পারেন। এ রকম সম্ভাবনা থেকেই ড. ইউনূসের সাথে কথা বলতে চায় বিএনপি।

গত সোমবার চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছেন, নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার যে দাবি তারা জানিয়ে আসছেন, সেটা ১৬ এপ্রিল (আজ বুধবার) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে সমাধান হবে বলে আশা করছেন তারা। এছাড়া ঐক্যের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান আসবে বলে মনে করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আলোচনা ও ঐক্যের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপসহ সব সমস্যার সমাধান হবে। নিঃসন্দেহে ঐক্য সম্ভব হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন যাতে বিলম্বে হয়, সেজন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপিসহ অন্যান্য দল ও গণতন্ত্রকামী জনগণ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়। ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি। সেখানে নির্বাচনের সময়সহ অন্য বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট জানতে চাওয়া হবে।

এদিকে, গত শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দুই সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকের পর রাত ৮টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নিতে প্রধান উপদেষ্টা তাগিদ দিয়েছেন। পরে রাত সোয়া ৯টার পর বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে প্রেস উইং। সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতঃপূর্বে ঐকমত্য কমিশনের দেয়া প্রেস নোটে ভুলবশত কেবল ডিসেম্বর মাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দেন।

তবে এ সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদের সঙ্গে একমত নয় বিএনপি। দলটি এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়।

দলটির শীর্ষ নেতাদের মতে, ভোটের অধিকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি গণআকাঙ্ক্ষাও। এটা সরকারকে বুঝতে হবে। দ্রুত নির্বাচন দিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে হবে। সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

সূত্রমতে, আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের পরদিন আগামীকাল সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করবে দলটি। এরপর সরকারের মনোভাব বুঝে করণীয় ঠিক করবে বিএনপি। মিত্র দলগুলো বলছে- নির্বাচন ইস্যুতে আন্দোলন কর্মসূচি এখন সরকারের ওপর নির্ভর করছে। দ্রুততম সময়ে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে বিএনপিসহ মিত্র দলগুলো কর্মসূচির দিকে যাবে। নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গত শনিবার রাতে একাধিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ কেউ নির্বাচন পিছিয়ে ফায়দা লুটতে চায় বলেও মনে করছেন নেতারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত