ঢাকা সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

‘সুদিনেও’ কাউন্সিলের খবর নেই বিএনপির

‘সুদিনেও’ কাউন্সিলের খবর নেই  বিএনপির

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে রাজনীতি করেছে বিএনপি। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেকটা অনুকূল পরিবেশে রাজনীতি করছে দলটি। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মামলার জাল থেকে মুক্ত হয়ে বর্তমানে লন্ডনে চিকিৎসাধীন আছেন। একটি মামলা ছাড়া অধিকাংশ মামলায় খালাস পেয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মীরা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি করছেন এখন। যদিও বিএনপি এখন সুদিন অতিবাহিত করছে তবুও দলটির ভেতরে-বাইরে আলোচনায় নেই জাতীয় কাউন্সিলের কথা।

বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। এরপর ৯ বছর অতিবাহিত হলেও জাতীয় কাউন্সিল হচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী ৩ বছর পরপর কাউন্সিল করার কথা। তবে জাতীয় কাউন্সিল ছাড়াই তারা দলের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখনও বিভিন্নজনকে বিভিন্ন পদের দায়িত্ব দিচ্ছেন। এতোদিন দলটির নেতারা বলে আসছিলেন- প্রতিকূল পরিবেশের কারণে কাউন্সিল করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন অনুকূল পরিবেশ পার করলেও দলটি আপাতত জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে তেমন কর্মকাণ্ড চোখে পড়ছে না। এখন তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। দলটির একাধিক সূত্র থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বেশ কয়েকদফা জাতীয় কাউন্সিল করার কথা দলীয় শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হলেও শেষ পর্যন্ত আর তা করেনি বিএনপি। অবশ্য এর পর করোনাকালে নির্বাচন কমিশন থেকে জাতীয় কাউন্সিল করতে সময় বাড়িয়ে নেয় তারা। তবে করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে জাতীয় কাউন্সিল করবে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানালেও পরে সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকার পরও আর জাতীয় কাউন্সিল করেনি বিএনপি।

বিএনপির গঠনতন্ত্রেও ৩ বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল করার কথা উল্লেখ রয়েছে। সে হিসাবে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ আগের কাউন্সিল হওয়ায় পরবর্তী কাউন্সিল ২০১৯ সালের ১৯ মার্চের মধ্যে হওয়ার কথা থাকলেও তারা তা করেনি। এরপর আরও ৬ বছর অতিক্রম হলেও এখন পর্যন্ত কাউন্সি করতে পারেনি দলটি। বিএনপির বিভিন্ন স্তরের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর সবাই আশা করেছিলেন জাতীয় কাউন্সিল করে দলের সর্বস্তরে কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আগের জাতীয় কাউন্সিলের পর ৯ বছর পার হলেও আমরা জাতীয় কাউন্সিল করতে পারছি না। এ কারণে, অনেক যোগ্য নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারছে না। জানা যায়, দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে শূন্য থাকা অনেক পদ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কোনো কোনো পদে এখনও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দলের ত্যাগী নেতারা চান জাতীয় কাউন্সিলর পর শূন্যপদগুলো পূরণ করা হোক এবং যারা দলে নিষ্ক্রীয় তাদের বাদ দিয়ে সক্রিয় নেতাদের সম্পৃক্ত করা হোক।

সূত্রমতে, ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ৪২ বছরে বিএনপিতে কাউন্সিল হয়েছে ছয়বার। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর পর কাউন্সিল করার বিধান রয়েছে। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় ৫০২ সদস্যের ‘ঢাউস’ কমিটি ৬ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। আপাতত কাউন্সিল করারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হচ্ছে দলের গঠনতন্ত্র। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি, দলকে আরও সুসংঘঠিত ও গতিশীল করতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব জরুরি। এক্ষেত্রে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিও পুনর্গঠন করতে হবে। ঢাউস কমিটি থেকে বাদ দিতে হবে অযোগ্য ও বিতর্কিতদের। কমিটির আকার ছোট করতে হবে। আন্দোলন সংগ্রামে পরীক্ষিত যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের নিয়ে ঢেলে সাজাতে হবে কেন্দ্রীয় কমিটি। এ জন্য ছোট পরিসরে হলেও কাউন্সিল করার তাগিদ মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের।

এবিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আশা করি খুব শিগগিরই কাউন্সিল হবে। এবিষয়ে আমাদের কাজ চলছে।

দলের কাউন্সিলের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট আহমেদ আযম খান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিএনপি গত ১৭ বছর যে প্রতিকূল পরিবেশ পার করেছে সেই প্রতিকূলতা এখনও শেষ হয়নি। তবে এখন কিছুটা স্বস্তি আছে। আশা করি, আগামী ৬ মাসের মধ্যে দলের ১০টি বিভাগীয় অঞ্চলের মহানগর-জেলা, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সব ইউনিটের কাউন্সিল সম্পন্ন হবে। এরপর জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।

এবিষয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, কাউন্সিলের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া আছে। হবে, যেকোনো সময় কাউন্সিল করা যাবে। আপাতত দেশের মানুষ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার দেখতে চায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত