ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির বিষয়ে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা করছে ব্রিটিশ সরকার। দ্য গার্ডিয়ানের বরাতে আরব নিউজ জানিয়েছে, জুন মাসে জাতিসংঘের একটি সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, এখন পর্যন্ত ১৬০টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই তালিকায় সম্প্রতি স্পেন, নরওয়ে এবং আয়ারল্যান্ডও যোগ দিয়েছে। যদি নতুন আলোচনার ফল ভালো হয়, তাহলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য, বিশেষ করে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ মিত্ররাও এই তালিকায় যুক্ত হবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি হাউস অফ লর্ডসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্বাচন কমিটিকে বলেন, যুক্তরাজ্য যখন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়, তখন কারও ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা নেই।
তবে ল্যামি বলেন, একটি কার্যকর রাষ্ট্রের অধীনে গাজায় হামাসের ক্ষমতা থাকতে পারে না এবং অঞ্চলটির সম্পূর্ণ অসামরিকীকরণ প্রক্রিয়া গ্রহণ করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য হুমকি। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা মর্মান্তিক। তিনি গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, গাজায় প্রয়োজনীয় ত্রাণের অবরোধ ভয়াবহ, দুর্ভোগ ভয়াবহ, চাহিদা বিশাল, প্রাণহানি চরম। এর আগে গত ৯ এপ্রিল ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন, মিশরে একটি সরকারি সফরের পর ফ্রান্স সম্ভবত আগামী জুনে একটি সম্মেলনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ হবে জি-৭-এর কোনো রাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রথম পদক্ষেপ। এর উদ্দেশ্য হলো অন্যান্য স্বীকৃতির একটি সিরিজ শুরু করা, যার মধ্যে রয়েছে- ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া।
আরব নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, সৌদি আরব স্পষ্ট জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে তারা সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায়, তবে তা দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান অর্জন হলে।
ইসরায়েলের গাজা অবোরোধকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জাহাজটি সেখানে পাঠাচ্ছিল ‘দ্য ফ্রিডম ফ্লোটিল্লা কোয়ালিশন’ নামের একটি আন্তর্জাতিক এনজিও।
মাল্টা উপকূলে গাজাগামী ত্রাণবাহী জাহাজে ড্রোন হামলা : গাজার জন্য মানবিক ত্রাণ ও কর্মীবাহী একটি জাহাজ শুক্রবার মাল্টা উপকূলের কাছে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ড্রোন থেকে বোমা হামলার শিকার হয়েছে। এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দোষারোপ করেছেন জাহাজ যাত্রার আয়োজকরা। ইসরায়েলের গাজা অবোরোধকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ত্রাণবাহী এই জাহাজটি সেখানে পাঠাচ্ছিল ‘দ্য ফ্রিডম ফ্লোটিল্লা কোয়ালিশন’ নামের একটি আন্তর্জাতিক এনজিও। তারা জানায়, দ্য কনসায়েন্স নামের এই জাহাজটিতে রাতে হামলা হয় এবং হামলার পরপরই জাহাজ থেকে জরুরি সংকেত আসে। ভিডিও ফুটেজে অন্ধকারের মধ্যে জাহাজে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
শোনা গেছে বিস্ফোরণের শব্দও। মাল্টা সরকার জানায়, জাহাজের আগুন পরে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং জাহাজটিতে যারা ছিল তারা সবাই নিরাপদে আছে। তবে এনজিও এবং সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ বলেছেন, জাহাজের বিপদ এখনও কাটেনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে থুনবার্গ বলেন, তিনি মাল্টায় ছিলেন এবং ফ্রিডম ফ্লোটিল্লার পরিকল্পিত এই যাত্রায় তারও গাজাগামী জাহাজটিতে চড়ার কথা ছিল।
মাল্টা সরকার জানিয়েছে, মধ্যরাতের কিছু পর সমুদ্র কর্তৃপক্ষ একটি জরুরি সংকেত পায়। সে সময় তাদেরকে একটি জাহাজে আগুন লাগার খবর জানানো হয়। জাহাজটি মাল্টার আঞ্চলিক জলসীমার বাইরে ছিল এবং এতে ১২ জন ক্রু ও চার জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। যদিও ফ্রিডম ফ্লোটিল্লা বলছে, জাহাজে ছিলেন ৩০ কর্মী। জাহাজের আগুন নেভাতে মাল্টা সরকার একটি টাগবোট পাঠানোর পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
দ্য ফ্রিডম ফ্লোটিল্লা আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ, গাজা অবরোধ এবং আন্তর্জাতিক জলসীমায় বেসামরিক পরিবহনে হামলার মতো অপরাধের জন্য জবাবদিহি চেয়ে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করার আহ্বান জানিয়েছে। ওদিকে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, তারা জাহাজে হামলার খবরটি খতিয়ে দেখছে। ইসরায়েল জাহাজে হামলা চালিয়েছে বলে ফ্রিডম ফ্লোটিল্লা যে অভিযোগ করেছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।