জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহতের ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। কূটনীতিক বহিষ্কার, বিমান চলাচলের জন্য আকাশপথ বন্ধ করাসহ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে দুই দেশের মধ্যে। দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সাঁজোয়া যানের বহর সীমান্তের দিকে এগিয়ে চলেছে। আকাশে যুদ্ধবিমান ছুটে বেড়াচ্ছে। শীর্ষ নেতারা সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিচ্ছে। এমন উত্তেজনার মধ্যেই পর পর দ্বিতীয় দিনের মতো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে পাকিস্তান। গতকাল সোমবার ১২০ কিলোমিটার পাল্লার ‘ফাতাহ’ সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে পাক সেনারা। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে, এই উৎক্ষেপণের লক্ষ্য ছিল সৈন্যদের অপারেশনাল প্রস্তুতি নিশ্চিত করা এবং ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম ও নির্ভুলতাসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত সক্ষমতা যাচাই করা। এর আগে গত শনিবার ৪৫০ কিলোমিটার (২৮০ মাইল) পাল্লার একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কথা জানায় ইসলামাবাদ। তবে পরীক্ষাগুলো কোথায় করা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই উৎক্ষেপণের লক্ষ্য ছিল সেনাদের অপারেশনাল প্রস্তুতি যাচাই এবং ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত ন্যাভিগেশন সিস্টেম ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করা।’ এ প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা এখন শক্ত হাতে রয়েছে। সফল এই প্রশিক্ষণ উৎক্ষেপণ জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি সেনাবাহিনীর পূর্ণ প্রস্তুতির প্রমাণ।’
নিয়ন্ত্রণরেখায় আবার গোলাগুলি : পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর থেকেই দুই ভারত-পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর একে অপরের বিরুদ্ধে বিনা উসকানিতে গুলিবর্ষণের অভিযোগ তুলেছে। গত রোববার দিবাগত রাতেও দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, দেশটির বিভিন্ন সেনাচৌকি লক্ষ্য করে বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এর উপযুক্ত জবাব দিয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি। পাকিস্তানি সূত্র আরও জানায়, নিয়ন্ত্রণরেখার পার্নিকিয়াল, খই রাট্টা, শারদা, খেল, নীলম ও হাজি পীর সেক্টরে ভারতীয় সেনারা কোনো রকম উসকানি ছাড়াই গুলি চালিয়েছে।
অন্যদিকে গতকাল সোমবার ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছে, জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর একাধিক স্থানে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। দ্য হিন্দুর এক খবরে বলা হয়েছে, পেহেলগাম হামলার পর সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে। মস্কোয় নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সহায়তা চেয়েছেন। গত শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি ও ১৯৯৯ সালের লাহোর ঘোষণার আলোকে দ্বিপক্ষীয় উপায়ে বিরোধ নিরসনের আহ্বান জানান। তিনি পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন। এসময় ইসহাক দার ভারতের ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ ও উসকানিমূলক বক্তব্য’ প্রত্যাখ্যান করেন। ভারত অভিযোগ করেছে, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর টানা ১১ দিনের মতো পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী বিনা উসকানিতে গুলিবর্ষণ করেছে। ৪ ও ৫ মে গভীর রাতে কুপওয়ারা, বারমুল্লা, পুঞ্চ, রাজৌরি, মেন্ধার, নওশেরা, সুন্দারবনি এবং অখনুর এলাকার বিপরীত পাশে পাকিস্তানি সেনাচৌকি থেকে ছোট আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালানো হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, তারা সঙ্গে সঙ্গেই ওই গুলির জবাব দিয়েছে।
পাকিস্তানের ওপর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ : গত রোববার থেকে নিজেদের সীমানায় স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথ দিয়ে ভারতের তৈরি পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে পাকিস্তান। একই সঙ্গে তৃতীয় কোনো দেশ থেকে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি। পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেছে। পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এরই মধ্যে যেসব পণ্যের ঋণপত্র (এলসি) ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না। সিদ্ধান্তটি ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থে’ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, পাকিস্তানের ভূমি, সাগর ও আকাশ ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে ভারতীয় পণ্য আমদানি এবং তৃতীয় কোনো দেশ থেকে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার রাতে পাকিস্তানের বন্দরগুলোতে ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে ভারতও দেশটির বন্দরগুলোতে পাকিস্তানি পতাকাবাহী জাহাজ প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। পাকিস্তানের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের পোর্টস অ্যান্ড শিপিং উইং এক আদেশে জানায়, ‘প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সাম্প্রতিক সামুদ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পাকিস্তান তার সামুদ্রিক সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য কিছু ব্যবস্থা কার্যকর করছে। এগুলো হলো ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজগুলো কোনো পাকিস্তানি বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না, পাকিস্তানি পতাকাবাহী জাহাজগুলো কোনো ভারতীয় বন্দরে যেতে পারবে না, কোনো রকম ব্যতিক্রম বা বিশেষ ছাড়ের আবেদন আলাদা আলাদা ভিত্তিতে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ভারতের দুঃসাহসের জবাব দিতে প্রস্তুত পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনী : ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে, যা কেবল কূটনৈতিক নয়, বরং সামরিক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কাও বাড়িয়ে তুলেছে। এমন উত্তপ্ত প্রেক্ষাপটে ভারতকে কড়া হুঁশিয়ারি দিল পাকিস্তানের সশস্ত্রবাহিনী। গত রোববার গভীর রাতে ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব এক কণ্ঠে জানিয়ে দেয় ভারতের যে কোনো দুঃসাহসিক পদক্ষেপের মুখে পাকিস্তান ঐক্যবদ্ধভাবে জবাব দিতে প্রস্তুত। পাকিস্তান টেলিভিশনের সদর দপ্তরে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এবং তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার। সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে আয়োজিত এই সম্মেলনে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সামনে তুলে ধরা হয় সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি এবং ভারতের সম্ভাব্য আগ্রাসনের জবাবে সরকারের অবস্থান। তবে পিটিআই (পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ) এই বৈঠকে অংশ নেয়নি, কারণ তারা ইমরান খানের মুক্তিকে বৈঠকে যোগদানের পূর্বশর্ত হিসেবে রেখেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল আহমেদ শরীফ বলেন, পাকিস্তান একটি শান্তিপ্রিয় দেশ এবং এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেই তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু যদি কেউ আগ্রাসী হয়ে ওঠে, তবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে উপযুক্ত জবাব দেবে। তিনি সংসদ সদস্যদের আশ্বস্ত করেন যে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত। একই সঙ্গে তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তুলে ধরেন পাকিস্তানের কূটনৈতিক কৌশল ও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি।
যদিও ভারত এখনও পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ী করেনি, তবুও তারা কয়েকটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে- পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল, কূটনীতিক বহিষ্কার এবং সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি স্থগিত। এই পদক্ষেপগুলো পাকিস্তানে গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে এবং তা যুদ্ধাংদেহী বক্তব্যে প্রতিফলিত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছে। জাতিসংঘ, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এরইমধ্যে দুই পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না চলে যায় এবং কূটনৈতিক পথে সমাধানের পথ খোলা থাকে, সেজন্য আন্তর্জাতিক চাপ এখন সময়ের দাবি। শান্তি যেন অস্ত্রের গর্জনে হারিয়ে না যায়- বিশ্ব এখন সেই দিকেই তাকিয়ে। তথ্যসূত্র: দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল
ভারতকে কড়া বার্তা দিলেন খালিস্তান নেতা : পাঞ্জাবের খালিস্তান আন্দোলনের নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুন নতুন এক ঘোষণায় বলেছেন, পাঞ্জাব থেকে ভারত পাকিস্তানে হামলা চালালে শিখরাই হবে পাকিস্তানের প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে থাকা শিখরা জানেন যে, তাদের আসল শত্রু পাকিস্তান নয় বরং ভারতীয় সিস্টেম। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের ‘জিরগা’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। গুরপতবন্ত সিং পান্নুন বলেন, ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ হবে কি হবে না, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। এখন পর্যন্ত ভারত পাকিস্তানকে আক্রমণ করেনি, তবে পাকিস্তানের নিশ্চিন্তে বসে থাকা উচিত নয়।
তিনি বলেন, পাঞ্জাব থেকে ভারত পাকিস্তানে হামলা চালালে শিখরাই হবে পাকিস্তানের প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন। আর পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী শিখ ও পাঞ্জাবকে সমর্থন করলে ভারতীয় ট্যাঙ্কগুলোকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। গুরপতবন্ত সিং আরও বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে থাকা শিখরা জানেন যে, তাদের আসল শত্রু পাকিস্তান নয়, বরং ভারতীয় সিস্টেম। আর তারা মোদির যুদ্ধ লড়তে চায় না, তারা পাঞ্জাবের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে চায়। এমনকি যদি কোনো শিখ সৈন্য পাকিস্তানকে আক্রমণ করার চেষ্টা করে তবে তাকে পরাজিত করা হবে। গুরপতবন্ত দাবি করেন, স্বাধীন পাঞ্জাব অর্থাৎ খালিস্তানই পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান। কারণ খালিস্তান সৃষ্টির পর পাকিস্তানেও উন্নয়নের দরজা খুলবে। বেলুচিস্তানে ভারতীয় হস্তক্ষেপকে একটি উন্মুক্ত বাস্তবতা হিসাবে অভিহিত করে তিনি বলেছেন, পাকিস্তান চাইলে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা জাতিসংঘে নিয়ে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান আজ দাঁড়িয়ে আছে শুধুমাত্র তাদের সেনাবাহিনীর কারণে।
এর আগে ভারতের যে কোনো সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের গোটা শিখ সম্প্রদায় পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াবে বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন এ খালিস্তানি নেতা।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সীমান্তে বিএসএফের ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’ করবে ভারত : ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) আরও ১৬টি ব্যাটালিয়ন গঠন সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এসব ব্যাটালিয়নে থাকবে প্রায় ১৭ হাজার জওয়ান। পাশাপাশি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সীমান্তে পশ্চিম ও পূর্ব কমান্ডের জন্য দুটি ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’ স্থাপন করা হবে। সরকারি সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে। পরিকল্পনাটি এরইমধ্যে নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। অনুমোদন চূড়ান্ত হলে এটি বিএসএফের জন্য বড় সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। গত বছর বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পূর্ব সীমান্তে আর ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তান সীমান্তে নতুন করে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ ঘিরে নজরদারি জোরদার করছে বিএসএফ। নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইকে বলেছে, বিএসএফ শিগগিরই নতুন করে ১৬টি ব্যাটালিয়ন গঠনের চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এসব ব্যাটালিয়ন গঠন করা হবে। সূত্রগুলো জানায়, এখনও কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের মতো কয়েকটি চূড়ান্ত অনুমোদন বাকি আছে। তবে খুব শিগগির তা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সীমান্তের এই দুই ফ্রন্টে বর্তমানে এই আধা সামরিক বাহিনীর ১৯৩টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। বিএসএফের প্রতিটি ব্যাটালিয়নে রয়েছে এক হাজারের বেশি সেনা। নতুন ১৬টি ব্যাটালিয়নে প্রায় ১৭ হাজার সদস্য যুক্ত হবেন। সূত্রগুলো জানায়, বিএসএফের রূপরেখা অনুযায়ী নতুন ব্যাটালিয়নগুলো পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সীমান্ত পাহারার মতো প্রাথমিক দায়িত্ব পালনে এই বাহিনীকে সহায়তা করবে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, বিএসএফের জন্য দুটি ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টারও (ফিল্ড কমান্ড ঘাঁটি) অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে জম্মু ও পাঞ্জাবে ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদারে জম্মুতে একটি ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার হবে। বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি আরও উন্নত করতে অপর ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টারটি হবে মিজোরামে।
জম্মু সীমান্তে বিএসএফের বর্তমানে চারটি সেক্টর রয়েছে। এগুলোর নেতৃত্বে রয়েছেন ডিআইজি (ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল) পদমর্যাদার কর্মকর্তা। রাজৌরি, সুন্দরবনি, জম্মু এবং ইন্দ্রেশ্বর নগরে এসব সেক্টর অবস্থিত। অন্যদিকে আসামভিত্তিক মিজোরামণ্ডকাছার ফ্রন্টিয়ার হেডকোয়ার্টারের অধীনে সেক্টরগুলো রয়েছে শিলচর, আইজল এবং মণিপুরে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, নতুন এই ব্যাটালিয়নগুলোতে পুরুষ ও নারী সদস্য নিয়োগপ্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু করবে বিএসএফ। এরপর শুরু হবে তাদের প্রশিক্ষণ। আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে এই ইউনিটগুলো গঠিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে বিএসএফের সদস্যসংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার। এই বাহিনী কয়েক বছর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ২০ থেকে ২১টি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রস্তাব পাঠায়। অবশেষে সরকার ১৬টি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনে সম্মতি দিয়েছে।
পাক-ভারত উত্তেজনার মাঝে ইসলামাবাদে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী : এদিকে পাকিস্তান ও ভারতের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝেই এক দিনের সফরে ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। গতকাল সোমবার ইরানের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন বলে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পর প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে।