ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দিল্লিকে দাঁতভাঙা জবাবের হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের

দিল্লিকে দাঁতভাঙা জবাবের হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের

জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। সীমান্তে টানা ১২ দিন ধরে গোলাগুলি চলছে, এতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নিয়ন্ত্রণ রেখা। দুই দেশের উত্তেজনা সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। এর আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যুদ্ধাবস্থা নিরসনের আলোচনা হয়। এতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে বলে ধারণা করা হলেও, বাস্তবে তা হয়নি। উল্টো দ্বিপক্ষীয় সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এ অবস্থায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

এমন অবস্থায় নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর সম্ভাব্য ভারতীয় হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ এই সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। একইসঙ্গে পাকিস্তানে হামলা চালালে নয়াদিল্লিকে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। গত সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সোমবার সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ভারত যে কোনো সময় নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি)-তে সামরিক হামলা চালাতে পারে। কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যেই তিনি এ মন্তব্য করলেন। ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর আছে, ভারত যে কোনো মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর হামলা চালাতে পারে (তেমন কিছু হলে) নয়াদিল্লিকে তার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। এদিকে কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিফ বলেন, এ ধরনের তদন্তে প্রমাণ হবে, আসলে ভারত নিজেই বা কোনো অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী এতে জড়িত কি না। দিল্লির ভিত্তিহীন অভিযোগের আসল সত্যও উন্মোচিত হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার নিজের রাজনৈতিক ফায়দার জন্য এই অঞ্চলকে পরমাণু যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন বলে খাজা আসিফ অভিযোগ করেন এবং ভারতের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসবাদে মদত দিচ্ছে ভারত।

আসিফ আরও বলেন, আমরা ২০১৬ ও ২০১৭ সালে জাতিসংঘকে ভারতের সন্ত্রাসে অর্থায়নের প্রমাণসহ ভিডিও দিয়েছিলাম। তিনি আরও বলেন, সমতি খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানে যে সন্ত্রাসী হামলা বেড়েছে, তার সঙ্গে আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত গোষ্ঠীগুলোর সংশ্লিষ্টতা আছে, যাদের প্রতি ভারতের সমর্থন রয়েছে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। অধিকৃত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের এই হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এছাড়া ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।

এই পরিস্থিতির মধ্যে পাকিস্তান গত শনিবার ‘আবদালি’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে। ভারতের কর্মকর্তারা এটিকে ‘খোলামেলা উসকানি’ বলে মন্তব্য করেছেন। ৪৫০ কিমি রেঞ্জের এই ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তান ‘সিন্ধু মহড়ার’ অংশ হিসেবে পরীক্ষা করেছে বলে জানিয়েছে। এছাড়া ভারতের সঙ্গে চলমান তীব্র উত্তেজনার মাঝে সোমবার ফের আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায় পাকিস্তান।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলামাবাদের আহ্বানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে আলোচনা চললেও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর টানা ১২তম রাত গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। এর জবাবে ভারতীয় সেনারাও পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা, বারামুল্লা, পুঞ্চ, রাজৌরি, মেন্ধার, নওশেরা, সুন্দরবানি এবং আখনুর সেক্টরের বিপরীতে পাকিস্তান সেনারা গুলি চালালে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা প্রতিরোধে অংশ নেয়। এই পরিস্থিতিতে দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘর্ষ আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে আন্তর্জাতিক মহলে।

জাতিসংঘ মহাসচিব ও শাহবাজ শরিফের ফোনালাপ : দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে ফোনে আলোচনা করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে এটি ছিল দুই নেতার দ্বিতীয় ফোনালাপ। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ জাতিসংঘ মহাসচিবের ধারাবাহিক সম্পৃক্ততা ও যোগাযোগ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান ও সংঘাত এড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর তার গুরুত্বারোপকে স্বাগত জানান। ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ স্বাধীন, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেন এবং উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ভারত এখনও পর্যন্ত কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি, তবুও উসকানিমূলক ভাষণ ও যুদ্ধোন্মাদনা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

সিন্ধু পানি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ : ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আসিম ইফতিখার বলেছেন, এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দক্ষিণ এশিয়ায় টেকসই শান্তির জন্য নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন অপরিহার্য। সংলাপই শান্তির একমাত্র টেকসই পথ।

পাকিস্তান-ইরানের বৈঠক : পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে বৈঠক করলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। এআরওয়াই নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সহযোগিতা আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইরান-পাকিস্তান সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে তেহরান আগ্রহী। এটি দুই ভ্রাতৃপ্রতিম জাতির পারস্পরিক কল্যাণে সহায়ক হবে। এছাড়া, গাজা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয় এবং উভয় পক্ষ গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বাহিনীর চলমান দমন-পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কঠোর নিন্দা জানান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত