ঢাকা বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দিনভর বিক্ষোভ, ফের যমুনার সামনে জনতা

* সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না আসায় ‘মার্চ টু যমুনা’ ঘোষণা * যারা আ.লীগ নিষিদ্ধ চায় না, তারা ফ্যাসিবাদী : হাসনাত * দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চালাবে ছাত্র-জনতা
দিনভর বিক্ষোভ, ফের যমুনার সামনে জনতা

জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। টানা তিন দিন ধরে চলা সমাবেশ জন¯্রােতে রূপ নিয়েছে। সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না পাওয়ায় গতকাল শনিবার রাতে হাজার হাজার মানুষ রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে রওনা দেয়। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ‘মার্চ টু যমুনা’ ঘোষণা দেওয়া হয়। রাত পৌনে ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে বিশাল জনতা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিল। এ সময় যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক চলছিল।

এদিকে, রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দেশের জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে গতকাল গণজমায়েত হয়েছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ ও সমাবেশ চলবে বলে জানান এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা।

গতকাল শনিবার শাহবাগে গণজমায়েতে এনসিপি নেতা আখতার হোসেন, সারজিস আলম, আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, ইনক্লাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এই গণজমায়েতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি, ইনকিলাব মঞ্চ, এবি পার্টি, লেবার পার্টি, আপ-বাংলাদেশ, জুলাই ঐক্য, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, খেলাফত মজলিশ, হেফাজত ও ইসলামী আন্দোলনের নেতারা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জুলাই মঞ্চসহ অসংখ্য ফ্যাসিবাদবিরোধী সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন সংহতি জানিয়ে সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। এসময় আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জোরালো দাবি তুলেন। সমাবেশে নেতাকর্মীরা স্লোগান দেন, ‘ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ ব্যান’ ‘২৪-এর বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই’ ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ ‘কণ্ঠে আবার লাগা জোর, আওয়ামী লীগের কবর খোঁড়’ ‘গড়িমসি বন্ধ কর, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কর’ ‘ব্যান ব্যান আওয়ামী লীগ, ‘লীগ ধর জেলে ভর’ ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর’ ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ ‘গোলামি না আজাদী, আজাদী আজাদী’ ‘নাহিদ, আক্তার আসছে, রাজপথ কাঁপছে’ ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁরিয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। শাহবাগ মোড় এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করা এবং জুলাই ঘোষণাপত্র জারিসহ তিন দাবিতে গতকাল শনিবার সারা দেশে গণজমায়েত বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। শাহবাগের এবারের আন্দোলনে বিএনপি দূরত্ব বজায় রেখেছে। জামায়াতে ইসলামীর মধ্যম সারির নেতাকর্মী বিক্ষোভে যোগ দিলেও দলটি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

গণজমায়েতে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ আজ দুইভাগে বিভক্ত। একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি, আরেকটি বাংলাদেশি শক্তি। যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় না, তারা ফ্যাসিবাদী শক্তি। আর যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় তারা বাংলাদেশি শক্তি। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আগ পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমাকে যদি কোনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কোনো শক্তি কণ্ঠরোধ করতে চায়, তবুও আপনারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না। ২০১৩ সালে শাহবাগের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ শুরু হয়েছে, আর এই শাহবাগ থেকে ফ্যাসিবাদের পতন হবে। আমাদের মত-পথ আলাদা হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে আমাদের মত ও পথ এক। নমরুদের যেভাবে পতন হয়, ফেরাউনের যেভাবে পতন হয়, হাসিনারও পতন হয়। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি বলেন, শহিদের মায়েদের চেয়ে আমাদের কষ্ট বেশি না। খুনি হাসিনার বিচার হবে, শাপলা চত্বরের ঘটনার বিচার হবে, পিলখানার বিচার হবে, জুলাইয়ের বিচারও হবে। আমার কণ্ঠস্বর থামলেও এই লাখো জনতার কণ্ঠস্বর যেন না থামে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ তিন দফা দাবিতে গতকাল মুন্সীগঞ্জে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে পদ্মা সেতুর মাওয়া এলাকায় ছাত্র-জনতার ব্যানারে ব্লকেড কর্মসূচি করা হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে এই কর্মসূচিতে পদ্মা সেতু উত্তর থানার সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে এই সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা। পরে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সেতুর দুই পাশের লেন প্রদক্ষিণ করেন। পরে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

এসময় আন্দোলনকারীরা সরকারের কাছে গণহত্যাকারী সংগঠন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধসহ হত্যাকারীদের বিচার ও জুলাই সনদ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট রোডম্যাপের দাবি জানান। পদ্মা সেতু উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন জানান, শিক্ষার্থীরা দুপুরে পদ্মা সেতু থানার সামনের সড়কে জড়ো হয়ে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ মিছিল করে সরে যান। তবে প্রধান সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন আরাফাত প্রীতম, সুলেমান হোসেন, সিয়ান আহমেদ, ইমন মাহমুদ, জাকারিয়া রানা, মোহাম্মদ ফখরুল, শ্রাবণী আক্তার ও অবন্তিকা দাস। এসময় ছাত্রদের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ছাত্রশিবিরের সদস্যরাও অংশগ্রহণ করেন।

গতকাল শনিবার বিকাল ৫টায় নওগাঁয় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণসহ তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ছাত্র-জনতা। নওগাঁ শহরের কাজীর মোড়ে দুই ঘণ্টা অবস্থান নেন তারা। এসময় সড়কের এক পাশের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভ সমাবেশে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কাজী আতিকুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নওগাঁর অন্যতম সংগঠক দেওয়ান মাহবুব হাসান সোহাগ, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন নওগাঁর সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, জাতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধ মঞ্চ নওগাঁর সভাপতি কাজী মহিউদ্দিন আলমগীর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নওগাঁর সমন্বয়ক আরমান হোসেন, ফজলে রাব্বি এবং সাদনান সাকিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নওগাঁর সমন্বয়ক আরমান হোসেন বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট হাসিনাকে দেশছাড়া করার মাধ্যমে এদেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের রায় দিয়ে দিয়েছে। আমাদের ভাইদের রক্তের ওপর পা দিয়ে যে অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা ক্ষমতায় বসিয়েছি তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের তালবাহানা করছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি নওগাঁর অন্যতম সংগঠক দেওয়ান মাহবুব হাসান সোহাগ বলেন, জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়েছি। ৫ আগস্টের পর দশ মাস পেরিয়ে গেলেও সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে এটি একটি জনদাবি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জয়পুরহাটে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। শনিবার বিকালে শহরের শহিদ ডা. আবুল কাশেম ময়দান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জিরো পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত