ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিভেদ নেই, একক প্রার্থী নিয়ে প্রচারণা

বিভেদ নেই, একক প্রার্থী নিয়ে প্রচারণা

জুলাই বিপ্লবের পর ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের হাওয়া লেগেছে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে। আর সেই হাওয়ায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে প্রার্থীদের নির্বাচনি মাঠে নামিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সংসদীয় ৩০০ আসনে যেখানে বিভিন্ন দলের একাধিক প্রার্থী নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা, সেখানে জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থী নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে।

জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী পুরোন ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে দলীয় পদ-পদবীর পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে ভোটারদের কাছে যারা জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামিয়েছে। দলীয় নির্দেশনা মেনে জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রার্থীদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। দলটি এককভাবেও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সে হিসাবে ৩০০ আসনেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রার্থীরা। তালিকায় কোনো কোনো আসনে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম থাকলেও তাদের মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য তারা মাঠ প্রস্তুত করছেন। কোথাও কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা দ্রুত সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে দলটি।

সরেজমিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। নিজ নিজ এলাকায় নানা কৌশলে গণসংযোগ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নেতারা। বিভিন্ন ইস্যুতে করছেন সভা-সমাবেশও। ভোটারদের আস্থা অর্জনে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে কী কী উদ্যোগ নেবে সেটিও জানান দিচ্ছেন নেতারা। এছাড়া বিগত সরকারের আমলে দল ও দলটির নেতাকর্মীদের ওপর নানা দমন-পীড়নের বিষয় জনগণের সামনে তুলে ধরছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।

জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন-নিপীড়ন, হামলা-মামলা, গুম-খুনের শিকার হয়েছে জামায়াতের নেতাকর্মীরা। কারণ আওয়ামী লীগের মূল টার্গেটই ছিল জামায়াতের ওপর নির্যাতন চালানো। সেজন্য মাঠপর্যায়ে প্রকাশ্যে ঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি দলীয় নেতাকর্মীরা। তবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব ও কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ নিজ এলাকায় সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছেন। নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা উঠলে প্রস্তুতি শুরু করেন নেতাকর্মীরা। এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থীর যে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, সেটি পুরোপুরি চূড়ান্ত নয়। মাঠের পরিস্থিতি ও অন্য দলের অবস্থান বুঝে প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতাকর্মী বলেন, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে মামলা-হামলা, জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের সম্ভাব্যপ্রার্থী করা হয়েছে। প্রার্থী হতে লবিং করতে হয়টি। দলের নিজস্ব নীতি রয়েছে, যেখানে কেউ প্রার্থী হতে চাইলেও হতে পারবেন না। জামায়াত হুট করে একজনকে মনোনয়ন দেয় না। রংপুর মহানগর ও জেলা কমিটি আয়োজিত বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছিলেন, বর্তমান সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা কল্পনাও করা যায় না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। সেই সংস্কারের কথা আমরা বলেছি। আমরা মৌলিক সংস্কার করে ছাড়ব এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কথা শুনতে পাচ্ছি। আমরা সবাইকে স্মরণ করে দিতে চাই। কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলের মতো স্বপ্ন দেখে থাকেন, তাহলে বলতে চাই, মহান আল্লাহর সাহায্যে আমরা সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্ন করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এমন কিছু বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। দেশে কোনো মাস্তানতন্ত্র চলবে না, কালোটাকার খেলা চলবে না। প্রশাসনের ক্যু চলবে না। নির্বাচনের সময় কেউ যেন অপকর্ম করতে না পারে এ জন্য আমরা সজাগ রয়েছি। জনগণের ভোটে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে যারাই জয়ী হবে তাদের স্বাগত জানাতে এখন থেকেই আমরা প্রস্তুত।

এদিকে গত শুক্রবার রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত বিশেষ সদস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আগামী নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে হবে। আমরা ইতিহাসের বিশেষ একটি সময় অতিবাহিত করছি। ঢাকা মহানগরী উত্তরের সব জনশক্তিকে ১৯ জুলাই জাতীয় সমাবেশ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ত্রয়োদশ নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে হবে। শহিদের রক্তস্নাত বাংলায় ইসলামী পতাকা উত্তোলন এবং ইসলামী ঐক্যের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সবার চাওয়া-পাওয়া। জাতীয় সমাবেশ হলো তার টাার্নিং পয়েন্ট। তার সফল বাস্তবায়নে এখন থেকে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আমার জীবন, চিন্তা-চেতনা, অনুভূতি সবই আল্লাহর জন্য। সব কিছুর মালিক আল্লাহ। সব কিছু আল্লাহর নিয়ম-বিধিতে চলবে, এটাই চিরন্তন বাস্তবতা। আর শপথের মাধ্যমে আমাদের জীবনকে সেই মহান সত্তার কাছে সোপর্দ করেছি। মহান আল্লাহর নির্দেশের বাইরে যাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার-মিডিয়া সেক্রেটারি মুহাম্মদ আতাউর রহমান সরকার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক মৌলিক কাজের মধ্যে সদস্য সংগ্রহ ও কর্মী গঠনের কাজ হয়ে গেছে। আর নির্বাচন কেন্দ্র করে গণসংযোগ ও ভোটারদের সঙ্গে দেখা করার কাজ অব্যাহত আছে।’

আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইসলামি দলগুলো নিয়ে জোট গঠনেরও প্রস্তুতি আছে জামায়াতের। সেক্ষেত্রে জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিও হতে পারে। দলটির সম্ভাব্য ৩০০ প্রার্থীর তালিকায় কোনো পরিবর্তন আসতে পারে কি না এ ব্যাপারে মুহাম্মদ আতাউর রহমান সরকার বলেন, ‘প্রার্থীদের ব্যাপারে সংগঠন বলেছে- এটি প্রাথমিক বাছাই, আবারও চূড়ান্ত বাছাই হতেও পারে, নাও হতে পারে। এখানে জোটগত বিষয় আছে। সামগ্রিক রাজনীতির ওপর নির্ভর করছে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত