জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে গুলি করে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিবসহ আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল সোমবার দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন- চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। আসামি পক্ষে ছিলেন- আইনজীবী সিফাত মাহমুদ শুভ।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, এ মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন বাতিল করা হলো। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হলো। যে আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ছাড়া অন্যরা হলেন সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
এরমধ্যে গ্রেপ্তার চার আসামি ইন্সপেক্টর আরশাদ, কনস্টেবল মো. সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল। পলাতক চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে গত ৩ জুন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়। তবে তারা হাজির না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল গতকাল এই আদেশ দেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে গুলি করে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম (ফরমাল চার্জ) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গত ২৫ মে আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওইদিন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর তা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে অভিযোগটি আমলে নেওয়ার আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এরপর ট্রাইব্যুনালের অভিযোগটি (কগনিজেন্সে নেওয়ার) আমলে নেয়ার আদেশ দেন। এর আগে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনের অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় আসামি কর্তৃক নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে শহিদ শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহিদ মো ইয়াকুব, শহিদ মো. রাকিব হাওলাদার, শহিদ মো. ইসমামুল হক এবং শহিদ মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তদন্ত সংস্থা এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর চিফ প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত সংস্থার দেওয়া এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটি ৯০ পৃষ্ঠার। তদন্ত করতে তদন্ত সংস্থার সময় লেগেছে ৬ মাস ১৩ দিন। তদন্ত প্রতিবেদনে ৭৯ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ১৯টি ভিডিও, পত্রিকার ১১টি রিপোর্ট, ২টি অডিও, বই ও রিপোর্ট ১১টি এবং ৬টি ডেথ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে আসামি করা হয় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনকে। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার আছেন ইন্সপেক্টর আরশাদ, কনস্টেবল মো. সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম। গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। এসব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।