কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে গত বছরের ১৯ জুলাই মিরপুর গোলচত্বরে পুলিশের গুলিতে মারা যান সাগর আহমেদ (২১)। তিনি মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বাড়ি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের টাকাপোড়া গ্রামে। ২৭ জুলাই সরেজমিন দেখা যায়, এক সপ্তাহ পরও বাড়িতে চলছে মাতম। একমাত্র ছেলে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন বাবা তোফাজ্জেল হোসেন। বেশির ভাগ সময় নির্বাক থাকছেন। স্বজনের কাছে ছেলেকে নিয়ে নিজের ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন হাতড়ে ডুকরে কাঁদছেন। মা গোলাপী বেগমের অবস্থা আরও করুণ। ছেলের শোকে মুখে তুলছেন না খাবার, প্রায়ই মূর্ছা যাচ্ছেন। কান্না থামছে না একমাত্র কলেজপড়ুয়া বোন নুশমীর। বাড়ির বাইরে চেয়ারে বসা কৃষক তোফাজ্জল। চেহারায় বড়সড় ঝড়ের ধকল স্পষ্ট। কথা বলতেই কাঁদতে লাগলেন। কিছুক্ষণ বাদে সম্বিত ফিরে বললেন, মাঠে কাজ করা দেখে সাগর প্রায়ই বলত, ‘বাবা, আর ক’টা দিন অপেক্ষা কর। তোমাকে আমি আর রোদে পুড়তে দেব না। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। কেউ কখনও এমন করে আর বলবে না।’ তবে ছেলের মৃত্যু নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই তোফাজ্জলের। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ যা ভালো মনে করেছেন, তা করেছেন। ক্ষোভণ্ডঅভিযোগ দিয়ে লাভ নেই। ধৈর্য ধরার চেষ্টা করছি। আমার বুকের মানিক যেন পরপারে ভালো থাকে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাগরের বাবা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলেকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
স্বজনরা জানান, ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাগর বাবাকে ফোন করেন। সবার খোঁজখবর নিয়ে বিকাশে এক হাজার টাকা দিতে বলেন। স্থানীয় নারুয়া বাজারে গিয়ে আধাঘণ্টা বাদেই টাকা দেন তোফাজ্জল। পেয়েছে কিনা নিশ্চিত হতে কল দেন; কিন্তু রিসিভ হয় না। কপালে চিন্তার ভাঁজ। কারণ, ঢাকায় যে গন্ডগোল চলছে, জানেন তোফাজ্জল। একটার পর একটা কল দিতেই থাকেন। মিনিট দশেক পর একবার রিসিভ হলে অপর প্রান্ত থেকে কেউ একজন বলেন, সাগর পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। তোফাজ্জল নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। আরও কয়েকবার কল দেন, রিসিভ হয় না। শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে চলে ঘামের ¯্রােত। পরিচিত অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যতক্ষণে নির্মম সত্য জানলেন, ততক্ষণে সব শেষ!
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুর গোলচত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত হন মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাগর আহমেদ। পরদিন ২০ জুলাই তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের টাকাপোড়া গ্রামে এনে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় শহীদ সাগরের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।