ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পাকিস্তানকে উড়িয়ে বাংলাদেশের দুরন্ত সূচনা

পাকিস্তানকে উড়িয়ে বাংলাদেশের দুরন্ত সূচনা

আত্মবিশ্বাসটা তৈরি হয়েছিল শ্রীলঙ্কাতেই। লঙ্কানদের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে দেশে ফিরেছিল বাংলাদেশ দল। কলম্বো থেকে মিরপুর, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের বোলিং পারফরম্যান্স একই থাকল। পাকিস্তানি ব্যাটারদের কাঁপিয়ে তাসকিন-মোস্তফিজদের সাফল্যে উজ্জ্বল হলো বাংলাদেশের বোলিং। সেই বোলিং পারফরম্যান্সেই পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দাপট দেখালো দল। সফরকারীরা নির্ধারিত ওভারে মাত্র ১১০ রানে অলআউট হলে। টাইগারদের জয়ের মঞ্চটা তৈরি হয়ে যায়। যে সংস্করণে সবচেয়ে দুর্বল মনে করা হয় টাইগারদের। তরুণ এই দলটি যে নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে বদ্ধপরিকর, তা আরও একবার বুঝিয়ে দিল। এবার পাকিস্তানকেও ধরাশায়ী করেছে লিটন দাসের দল। গতকাল রোববার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

নিয়মিত অধিনায়ক হওয়ার পর লিটন দাসের প্রথম মিশন ছিল পাকিস্তান সফর। যদিও এর আগে হুট করেই সেই সিরিজের প্রস্তুতি হিসেবে পরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি সিরিজ খেলে টাইগাররা। তবে পাকিস্তানে রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচই হেরে হোয়াইটওয়াশ। মাস দেড়েক যেতেই এবার উল্টো চিত্র দেখল পাকিস্তান। মূলত পাকিস্তান চিত্র দেখেছে মিরপুরের। চিরাচরিত মন্থর গতির উইকেট। আর এমন উইকেটে যার সবচেয়ে বেশি জ্বলে ওঠার কথা, তিনিই জ্বলে উঠলেন। ভীষণ কৃপণ বোলিংয়ের সঙ্গে মিডল অর্ডার ধসিয়ে দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার সঙ্গে তাসকিন আহমেদের গতিতে দিশেহারা পাক দল। লড়াইয়ের পর্যাপ্ত পুঁজিও মেলেনি তাদের। পারভেজ হোসেন ইমন ৫৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। জয়সূচক ৪ মেরে ১৫ রানে খেলছিলেন জাকের আলী। ৭ রানে ২ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন ইমন-হৃদয়। ৩৬ রানে হৃদয়ের আউটে ভাঙে জুটি। পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন সালমান।

এর আগে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে পাকিস্তানকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান লিটন দাস। ১৯.৩ ওভারে সফরকারীরা অলআউট হয়ে গেছে মাত্র ১১০ রানে। টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের ২৩ বারের দেখায় এই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে অলআউট হলো দলটি। বাংলাদেশের হয়ে ২২ রানে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন তাসকিন। ভীষণ আঁটসাঁট বোলিংয়ে মোস্তাফিজ ২ উইকেট পান স্রেফ ৬ রানে। টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের কোনো বোলারের ৪ ওভারের কোটা পূর্ণ করে সবচেয়ে কম রান দেওয়ার রেকর্ড। একটি করে শিকার ধরেন শেখ মাহেদী হাসান ও তানজিম হাসান সাকিব। বাকি তিনটি রানআউট। পাকিস্তানের মাত্র তিন ব্যাটার পৌঁছান দুই অঙ্কের ঘরে। দুবার জীবন পাওয়া ফখর করেন সর্বোচ্চ ৪৪ রান। ৩৪ বল মোকাবিলায় তার ব্যাট থেকে আসে ছয়টি চার ও একটি ছক্কা। সাতে নামা খুশদিল একটি করে চার ও ছয়ে ২৩ বলে করেন ১৭ রান। আটে নামা আব্বাস তিনটি ছক্কায় খেলেন ২৪ বলে ২২ রানের ইনিংস।

অফ স্পিনার শেখ মাহেদী বাংলাদেশের বোলিংয়ের সূচনা করেন। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই সাফল্য পেতে পারতেন তিনি। দুই বল আগে ইনিংসের প্রথম চার মারা ফখর সুইপ করেছিলেন। টপ এজ হয়ে বল চলে যায় শর্ট ফাইন লেগে। অনেক সময় পাওয়া সত্ত্বেও সহজ ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি তাসকিন। ফখর বেঁচে যান ৪ রানে। পরের ওভারে আক্রমণে গিয়েই অবশ্য ক্ষতে প্রলেপ দেন তাসকিন। বাংলাদেশকে উল্লাসের মুহূর্ত এনে দেন ডানহাতি পেসার। ফ্লিক করে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড লেগে মোস্তাফিজের তালুবন্দি হন আরেক ওপেনার সাইম আইয়ুব। তিনি করেন ৬ বলে ৪ রান। পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ১৮ রানে।

এই ব্রেক থ্রুকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরে স্বাগতিকরা। পাওয়ার প্লেতে আরও ৩ উইকেট তুলে নেয় তারা। ৬ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৪১ রান। বোলিংয়ে ফিরে খরুচে ওভার করলেও উইকেট শিকার করেন শেখ মাহেদী। প্রথম পাঁচ বলে তিনটি চার হজমের পর ঘুরে দাঁড়ান তিনি। শর্ট ডেলিভারিতে স্লগ করে ছক্কা মারার চেষ্টায় ডিপ মিডউইকেটে শামীম হোসেনকে ক্যাচ দেন মোহাম্মদ হারিস। ৩ বল খেলে তার রান ৪। ক্রিজে গিয়ে স্বস্তিতে ছিলেন না সালমান আলী আগা। পঞ্চম ওভারে বল হাতে পেয়েই তাকে বিদায় করেন তানজিম। স্কুপ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটনের গ্লাভসে জমা পড়েন পাকিস্তানের অধিনায়ক। ৯ বলে তার রান ৩। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজ যোগ দেন উইকেটের উৎসবে। বড় শট খেলার চেষ্টায় থার্ড ম্যানে রিশাদকে ক্যাচ দেন হাসান নওয়াজ। ৪ বল খেলে রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ তিনি।

অষ্টম ওভারে আক্রমণে ফিরে শেখ মাহেদী পাকিস্তানের বিপর্যয় আরও বাড়ান। তার থ্রো ধরে স্ট্রাইকিং প্রান্তে স্টাম্প ভেঙে দেন লিটন। মোহাম্মদ নওয়াজ ৫ বলে ৩ রানে হয়ে যান রানআউট। রান না আসায় চাপ ক্রমেই বাড়ছিল পাকিস্তানের ওপর। শেখ মাহেদীর বল লেগ সাইডে ঠেলেই সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলেন ফখর। কিন্তু নওয়াজ ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি। পঞ্চম থেকে অষ্টম— এই চার ওভারে স্রেফ ৮ রান খরচ করে বাংলাদেশ। ইনিংসের দশম ও নিজের শেষ ওভারে ফখরকে আবার ফেরানোর সুযোগ হাতছাড়া হয় শেখ মাহেদীর। বুলেট গতির ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি তিনি। ৩০ রানে জীবন পান ফখর। পরে শেখ মাহেদীকে মারেন ছক্কা ও চার।

ষষ্ঠ উইকেটে ফিরে আসার চেষ্টা ছিল পাকিস্তানের। তবে দ্বাদশ ওভারে ফখর হাস্যকর কায়দায় আউট হলে থামে ২৩ বলে ২৪ রানের জুটি। খুশদিল শাহ দ্বিতীয় রানের জন্য ডাক দিলেও পরে সিদ্ধান্ত পাল্টান। ততক্ষণে সাড়া দিয়ে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন ফখর। এরপর চেষ্টা করেও আর ফিরতে পারেননি। তাসকিনের থ্রো ধরে স্টাম্প ভেঙে ফেলেন লিটন।

ইনিংসের সর্বোচ্চ ২৯ বলে ৩৩ রানের জুটি পাকিস্তান পায় অষ্টম উইকেটে। রিশাদের করা ১৫তম ওভারে একটি করে ছক্কা হাঁকান খুশদিল ও আব্বাস। পরের ওভারে তানজিমকে দুটি ছক্কা মারেন আব্বাস। দলটির সংগ্রহ পেরিয়ে যায় শতরান। ১৭তম ওভারে আক্রমণে ফিরে মোস্তাফিজ ভাঙেন মাথাব্যথার কারণ হওয়া জুটি। উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে রিশাদকে ক্যাচ দেন তিনি। ওই ওভারে মোস্তাফিজ দেন ২ রান। এরপর তার শেষ ও ইনিংসের ১৯তম ওভারে আসে কেবল ১ রান। পাকিস্তান পুরো ওভার খেলতে পারেনি। তাসকিনের করা শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে ৩ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় তারা। শর্ট বলে থার্ড ম্যানে শেখ মাহেদীর তালুবন্দি হন ফাহিম আশরাফ। ৫ রান করতে তার লাগে ১০ বল। এরপর রানআউট হয়ে অভিষেকে গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ পান সালমান মির্জা। তারপর টপ এজ হয়ে লিটনের গ্লাভসে জমা পড়েন আব্বাস।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত