
কয়েক দিন আগে শ্রীলঙ্কার মাটিতে স্বাগতিক লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক সেই জয়ের রেশ কাটতে না কাটতে আরেকটি ইতিহাস গড়লেন লিটন দাসরা। গতকাল মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ রানে হারিয়েছে টাইগাররা। রোমাঞ্চকর এই ম্যাচের শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ১৩ রান আর বাংলাদেশের ১ উইকেট। মোস্তাফিজুর রহমানের করা ওভারে প্রথম বলে ৪ মেরে সমীকরণটাকে ৫ বলে ৯ বানিয়ে দেন আহমেদ দানিয়াল। পরের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে দানিয়াল বাউন্ডারির কাছে ক্যাচ হলেন শামীম হোসেনের। পাকিস্তান ১২৫ রানে অলআউট। বাংলাদেশ জিতল ৮ রানে। এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচের সিরিজটা জিতে নিল বাংলাদেশ। একাধিক ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটাই প্রথম সিরিজ জয়। বাংলাদেশের দেওয়া ১৩৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় পাকিস্তান। শেখ মেহেদীর করা প্রথম ওভারের শেষ বলে রানআউট হন পাকিস্তানি ওপেনার সাইম আইয়ুব। পয়েন্টে বল ঠেলে এক রান নিতে গিয়ে দ্বিধায় পড়েন তিনি। রিশাদ হোসেনের থ্রোয়ে লিটন দাস স্টাম্প ভেঙে দেন। সাইম ফেরেন ৪ বলে ১ রান করে। পরের ওভারে বাংলাদেশ পায় দ্বিতীয় উইকেট। বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলামের প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ হন মোহাম্মদ হারিস। রিভিউ নিলেও সিদ্ধান্ত বদলায়নি। টানা দ্বিতীয় ম্যাচেই ব্যর্থ হলেন হারিস। তৃতীয় ওভারে আরও একটি আঘাত হানে বাংলাদেশ। শরিফুলের বলে উইকেটকিপার লিটন দাসকে ক্যাচ দেন ফখর জামান। ৮ বলে ৮ রান করেন তিনি। পাকিস্তানের স্কোর তখন মাত্র ১৪। এরপর চতুর্থ ওভারে জোড়া আঘাত হানেন তানজিম হাসান সাকিব। পরপর দুই বলে হাসান নেওয়াজ ও মোহাম্মদ নেওয়াজকে আউট করেন তিনি। দু’জনকেই উইকেটকিপার লিটনের গ্লাভসে ক্যাচ বানান তানজিম। হাসান করেন ৬ বলে ০ রান, মোহাম্মদ নেওয়াজ ফেরেন গোল্ডেন ডাক নিয়ে। তখন দলীয় রান ১৫। এরপর অধিনায়ক সালমান আগাকে দলীয় ৩০ রানে তাওহিদ হৃদয়ের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান শেখ মেহেদি। দলীয় ৪৭ রানের সময় সপ্তম উইকেট হারায় পাকিস্তান। এবার শেখ মেহেদির শিকার খুশদিল শাহ। আগের ওভারে জীবন পেয়েও বেশিক্ষণ থাকতে পারলেন না তিনি। পরের ওভারে মেহেদীর বলে এলবির শিকার হন। রিভিউ নিলেও শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারেননি এ পাক ব্যাটার। অষ্টম উইকেটে ফাহিম আশরাফ ও আব্বাস আফ্রিদি মিলে করেন ৪১ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি। তবে দলীয় ৮৮ রানে আব্বাস আফ্রিদিকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন শরিফুল। ম্যাচে এটি ছিল তার তৃতীয় উইকেট। পাকিস্তান হারায় তাদের ৮ম উইকেট।
এর আগে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টস হেরে আগে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ২০ ওভারে তারা অলআউট হয়েছে ১৩৩ রানে। তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে আছে স্বাগতিকরা। ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়া জাকের পাঁচে নেমে সর্বোচ্চ ৫৫ রান করেন। ৪৮ বল মোকাবিলায় তিনি মারেন একটি চার ও পাঁচটি ছক্কা। এই সংস্করণে এটি তার চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি। ছয়ে নামা শেখ মেহেদী দুটি করে চার ও ছক্কায় খেলেন ২৫ বলে ৩৩ রানের ইনিংস। এছাড়া, দুই অঙ্কে যান কেবল ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। তিনি ১৩ বলে একটি করে চার ও ছয়ে করেন ১৪ রান। টসের পর শোকের আবহে মাঠে গড়ায় খেলা। ম্যাচ শুরুর আগে পুরো স্টেডিয়ামে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। গতকাল উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণ করা হয় সেসময়। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই ৪ উইকেট খুইয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। সাজঘরে ফিরে যান ব্যাটিং লাইনআপের প্রথম চারজন। তখন স্কোরবোর্ডে দলটির সংগ্রহ স্রেফ ২৮ রান। দ্বিতীয় ওভার থেকেই শুরু হয় উইকেটের পতন। তানজিদ হাসান তামিমের জায়গায় ওপেনিংয়ে সুযোগ পাওয়া নাঈম শেখ হন ব্যর্থ। অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্কুপ করে উইকেটরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে পাঠাতে চেয়েছিলেন। তবে টাইমিংয়ে গড়বড় করে মোহাম্মদ হারিসের গ্লাভসবন্দি হন তিনি। ৭ বলে ৩ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ৫ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।
পঞ্চম ওভারে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে আন্তর্জাতিক অভিষেকের স্বাদ পাওয়া পেসার সালমান মির্জা নেন মেডেন, পড়ে দুটি উইকেট। প্রথম বলে ছক্কার চেষ্টায় ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দেন বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটন। ৯ বলে একটি চারে তিনি করেন ৮ রান। টিকতে পারেননি তাওহিদ হৃদয়ও। রানের খাতা খুলতে না পেরে ৩ বল পর রানআউট হয়ে যান তিনি। মিড অফ থেকে সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প এলোমেলো করে দেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আলী আগা। পাকিস্তানের অভিষিক্ত পেসার আহমেদ দানিয়াল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ওভারেই পান উইকেটের স্বাদ। টাইমিংয়ে গড়বড় করে মিড অনে ফাহিমের তালুবন্দি হন আরেক ওপেনার পারভেজ। এরপর চাপ সামলে নেওয়ার লড়াইয়ে নামেন জাকের ও শেখ মেহেদী। পঞ্চম উইকেটে তারা আনেন ৪৯ বলে ৫৩ রান। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে এই জুটিতে যা বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ। আগের রেকর্ড ছিল মিরপুরেই, ২০১৪ সালে সাকিব আল হাসান ও নাসির হোসেনের ৪৪ রানের।