রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোকে স্তব্ধ সারাদেশ। কাঁদছে নিহত ও আহতদের স্বজনরা। বিমান বিধ্বস্তের এই ঘটনায় এপর্যন্ত মোট ৩১ জন নিহত ও ১৬৫ জন আহত হয়েছেন। এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। নিহত ৩১ জনের মধ্যে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১৬, লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ২, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ১ ও ইউনাইটেড হাসপাতালে ১ জন রয়েছেন। আহত ১৬৫ জনের মধ্যে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৮, বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪৬, ঢাকা মেডিকেলে ৩, সিএমএইচে ২৮, লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ১৩, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১, শহিদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১, ইউনাইটেড হাসপাতালে ২ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গতকাল পালিত হয় রাষ্ট্রীয় শোক : রাজধানীর দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হয়েছে। এর আগে গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় রাষ্ট্রীয় শোক পালনের বিষয়টি জানানো হয়। বার্তায় বলা হয়, শোক পালনের উদ্দেশ্যে দেশের সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি সব সরকারি-বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এছাড়াও আহত ও নিহতদের জন্য দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
বিমান বিধ্বস্তে হতাহতদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে সরকার -প্রেস উইং : রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে মর্মান্তিক বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ও আহতদের প্রত্যেকের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, নিহতদের প্রত্যেকের নামণ্ডপরিচয় যাচাই ও তালিকা করা হচ্ছে। যে সব লাশ শনাক্ত করা যাচ্ছে না, সেগুলো ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে এ ঘটনায় আহতদের সুচিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, বিভিন্ন মহল থেকে হতাহতের তথ্য গোপন করা হচ্ছে দাবি করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই, এ দাবি সঠিক নয়।’ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘মর্মান্তিক এ ঘটনায় আহত-নিহতদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ সরকার, সেনাবাহিনী প্রশাসন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একযোগে কাজ করছে। আমরা সকলের প্রতি আহ্বান জানাই, এই দুর্ঘটনায় আপনার পরিচিত কেউ যদি নিখোঁজ থেকে থাকে তবে অতিদ্রুত স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, সেখানে একটি কন্ট্রোল রুম বসানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি, এখনও কেউ নিখোঁজ রয়েছে কি না তা বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রি খাতা ও অন্যান্য নথি থেকে যাচাই করে দেখা হচ্ছে।’
আহতদের চিকিৎসা দিতে বিকেলে ঢাকায় আসছে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক দল : সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কমান্ড্যান্ট এস এম সোলায়মান বলেছেন, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের চিকিৎসাসেবায় গতকাল ঢাকায় এসেছে সিঙ্গাপুরের একটি চিকিৎসক দল। রাতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যান তারা। প্রয়োজন হলে কাউকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ ও আহতদের চিকিৎসাসেবার আপডেট সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি। কমান্ড্যান্ট এস এম সোলায়মান বলেন, সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা দগ্ধ ও আহতদের চিকিৎসাসেবা দেবেন। প্রয়োজন হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যাপারে পরামর্শ দেবেন তারা। এছাড়া সিএমএইচ থেকে দুজনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হবে।
নিহতদের কবরের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা : প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের কবরস্থানের জন্য মাইলস্টোন স্কুলের কাছে উত্তরা ১২ নম্বরের সিটি কর্পোরেশনের কবরস্থানে জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে এই কবরস্থান তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে সংরক্ষণ করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান স্কুলটির চত্বরের একটি দোতলা ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত চীনের তৈরি এই যুদ্ধবিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উত্তরার ওই স্কুল ভবনে আছড়ে পড়েছিল। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বেলা ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বিমানটি স্কুল ভবনের ওপর এসে বিধ্বস্ত হয়। বেলা ১টা ১৮ মিনিটে এই খবর পায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই আগুন ধরে যায় স্কুল ভবনে। তখন দগ্ধ শিশুদের আর্তনাদ, সন্তানের খোঁজে পাগলপ্রায় মা-বাবা ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে চারপাশ।