ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

তফসিলের আগে প্রবাসীদের ভোটাধিকার চায় এনসিপি

তফসিলের আগে প্রবাসীদের ভোটাধিকার চায় এনসিপি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় চালাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই মধ্যে গতকাল বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে দেখা করে আগামী সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বিশ্বের প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘ভোটাধিকার নিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যোগাযোগ করছেন। প্রবাসীরা উষ্মা প্রকাশ করছেন তাদের ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা নিয়ে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে; কিন্তু নির্বাচন কমিশন থেকে কোনো আপডেট মিলছে না। কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেছেন, প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন কি না, সেটা নিয়ে সংশয় আছে।’

অনলাইন ব্রিফিং নিয়ে খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যেন প্রতি সপ্তাহে অনলাইন ব্রিফিং করেন। যে অনলাইন ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসীরা আপডেট জানতে পারবেন। প্রবাসী ভাই-বোনরা ভোট দিতে চান। কিন্তু তারা ভোটার হওয়ার কোনো আপডেট পান না। আমাদের যে প্রবাসী ভোটার আছেন, তাদের মধ্যে অনেকের এনআইডি নেই। তারা ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত না। তাদের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশন বলছে, ১৪টা দেশে নিবন্ধন শুরু হচ্ছে। কিন্তু যেই দেশগুলোতে নিবন্ধন শুরু হয়েছে বলা হচ্ছে, সেই দেশ থেকে আমাদের অনেকে জানাচ্ছেন, তারা জানেন না কীভাবে ভোটার হবেন। এজন্য আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে এসে বলেছি, তারা যেন সুনির্দিষ্ট একটা রোডম্যাপ আমাদের জানান। যাতে করে প্রবাসীরা ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারেন। এছাড়া আরও ছোট ছোট কিছু বিষয়ে কথা হয়েছে।’

নিবন্ধন এবং প্রতীকের বিষয়ে এনসিপির নেতা বলেন, ‘আমরা প্রতীক হিসেবে শাপলা চেয়েছি, এটার আমাদের লিগ্যাল আরগুমেন্ট। আমরা মনে করি, এটা আমরা পাওয়ার যোগ্য। আমাদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য যে ডকুমেন্টগুলো আছে, সেই ডকুমেন্টগুলো আমরা এখানে দিয়েছি, যা ৪৩ হাজার পাতা। তবে ছোট ছোট টেকনিক্যাল কিছু বিষয় উনারা উল্লেখ করেছেন, যেই জায়গাগুলো আমরা ঠিক করে তাদের কাছে আবার জমা দেব। আমাদের ডেডলাইন ৩ আগস্ট; তার আগেই আমরা এটা জমা দেব।’ এর আগে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, এবার প্রবাসী বাংলাদেশিরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন। এজন্য একটা প্রকল্প নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে আমরা একটা প্রকল্প হাতে নেব। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হবে।

মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে প্রাথমিকভাবে ৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হবে। আগের পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিতে ভোট না আসলেও এই পদ্ধতিতে ভোট আসবে। এখন পর্যন্ত জানা গেছে, বেশিরভাগ প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবে।

জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১ কোটি ২৫ লাখ প্রবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। বিএমইটিএর তথ্যমতে, ১ কোটি ৪৮ লাখ প্রবাসী রয়েছে। এসব ভোটারদের ভোটার নিশ্চিত করে আগামী সংসদ নির্বাচন চায় এনসিপি। এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩৯টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষায়িত কারিগরি কমিটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনরায় নির্ধারণে সুপারিশ জমা দিয়েছে। সংসদীয় ৩০০ আসনের মধ্যে ৩৯টির সীমানা পরিবর্তন হচ্ছে। গাজীপুরে একটি আসন বাড়ছে এবং বাগেরহাটে একটি আসন কমছে। আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইন ২০২১ এর ধারা ৬ এর উপ-ধারায় বলা হয়েছে, সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং আদমশুমারি এ তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নির্ধারণ করতে হবে। তবে আদমশুমারি ২০২২ অনুযায়ী কিছু বিষয় আছে একটু অসামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের কাছে আছে হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা।

এছাড়া আমাদের ভোটার তালিকা ভিত্তিতে, ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে কমিটি গড়ে আসনভিত্তিক ভোটার সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন। সেটি হলো ৪ লাখ ২০ হাজার সামথিং, অর্থাৎ ৩০০ আসনের এবার ভোটার সংখ্যা হলো ৪ লাখ ২০ হাজার। উনারা ভোটারের সংখ্যার ভিত্তিতে একটা গ্রেডিং করেছেন, সেটি হচ্ছে- সবচেয়ে বেশি ভোটার কোন জেলায় এবং সবচেয়ে কম ভোটার কোন জেলায়।

কারিগরি কমিটি ফাইন্ড আউট করেছেন যে, সবচেয়ে বেশি ভোটার যে জেলায়, সেই জেলায় একটি আসন উনারা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন এবং সর্বনিম্ন ভোটার যে জেলায়, সেই জেলায় একটি আসন কমানোর প্রস্তাব করেছে। সেই আলোকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। টেকনিক্যাল কমিটির তথ্যানুযায়ী, সর্বোচ্চ ভোটার হচ্ছে গাজীপুরে। আর বাগেরহাট জেলায় সবচেয়ে কম। মানে বিশেষায়িত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী তারা ভোটার সংখ্যা এবং জনসংখ্যা অ্যানালাইসিস করে প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের প্রস্তাব হচ্ছে বাগেরহাট একটি আসন কমবে, গাজীপুরে জনসংখ্যা ও ভোটারের সংখ্যার ভিত্তিতে একটি আসন বাড়বে। যে ৩৯ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হবে সেগুলো হলো- পঞ্চগড়-১ ও ২, রংপুর-৩, সিরাজগঞ্জ-১ ও ২, সাতক্ষীরা-৩ ও ৪, শরীয়তপুর-২ ও ৩, ঢাকা-২, ৩, ৭, ১০, ১৪ ও ১৯, গাজীপুর-১, ২, ৩, ৫ ও ৬, নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪ ও ৫, সিলেট- ১ও ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ২ ও ৩, কুমিল্লা ১, ২, ১০ ও ১১, নোয়াখালী ১, ২, ৪ ও ৫, চট্টগ্রাম-৭ ও ৮ এবং বাগেরহাট-২ ও ৩ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে।

অন্যদিকে বুধবার ইসিতে জাতীয় পার্টির ২০২৪ সালের অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগের সময়ে ভোটে অংশ নেওয়া তার দলের অপরাধ হয়ে থাকলে ২০১৮ সালে নির্বাচন করা বিএনপি, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলন, গণফোরামসহ সব দলের নিবন্ধন বাতিলের দাবি করা উচিত। ওই সময় নির্বাচন করার কারণেই জাতীয় পার্টিকে এখন ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ তকমা দেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। আগের দিন মঙ্গলবার গণঅধিকার পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলীয় জোটভুক্তদের নিবন্ধন স্থগিতের দাবি জানায়।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, আরপিওর বিধান অনুযায়ী দল নিবন্ধন পায় নির্বাচন কমিশনে। সেক্ষেত্রে কে কী দাবি জানাল, তাতে জাপার কিছু দেখার বিষয় নয়; আমরা আইন লঙ্ঘন করিনি। নির্বাচন করার কারণে আমাদের যে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ তকমা দেওয়া হচ্ছে, এ কথার সঙ্গে আমরা একমত নই।

রেজাউল বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। ইসি নির্বাচন আহ্বান করেছে, দলের ইচ্ছে স্বাধীনতা রয়েছে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে আবার বর্জনও করতে পারে। তিন নির্বাচনে অনেকে বর্জন করেছে, অনেকে অংশ নিয়েছে। বিএনপি, ইসলামী ঐক্যজোট, গণফোরামসহ অনেকে ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। বিএনপি চার বছর ওই সংসদে ছিল। যদি সেই নির্বাচন অবৈধ হয়, বিএনপির অংশগ্রহণও অবৈধ। জাতীয় পার্টির নিবন্ধন বাতিলের দাবি যদি উঠে, তাহলে বিএনপি, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্তত ৩২টা দল অংশ নিয়েছিল। ভোটে অংশগ্রহণ অপরাধ হলে একই অপরাধে অপরাধী এসব দল।

সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র সংস্কারের চাহিদা চেয়ে প্রাইমারি স্কুলগুলোতে চিঠি : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে, এমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কারের লক্ষ্যে চাহিদা চেয়ে চিঠি দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মিরাজুল ইসলাম উকিলের সই করা চিঠিতে গত মঙ্গলবার এ তথ্য জানানো হয়। সকল জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, এই কার্যক্রমের জন্য আর্থিক বরাদ্দ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের রাজস্ব খাতের পরিচালন বাজেটের আওতায় দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৩ সালের ২০ মে জারি করা পরিপত্রের ক্ষুদ্র মেরামত সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। পরিপত্রে নির্ধারিত ছকে জেলার সকল উপজেলা-থানা শিক্ষা অফিস হতে তথ্য সংগ্রহ ও একত্রিত করে আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে হার্ডকপি (মূলকপি) এবং সফট কপি ই-মেইলে পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) বরাবর পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। তবে যেসব ভোটকেন্দ্রে (বিদ্যালয়ে) এ মুহূর্তে মেরামত-সংস্কারের প্রয়োজন নেই, সেসব বিদ্যালয়ের চাহিদা না পাঠানোর জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৪৪ হাজার ভোটকেন্দ্র ছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছিল ৪০ হাজারেরও বেশি এবং ভোটকক্ষ ছিল ২ লাখের বেশি। দশম সংসদ নির্বাচনে ৩৭ হাজার ৭০৭টি কেন্দ্র ও ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮টি ভোটকক্ষ এবং নবম সংসদ নির্বাচনে ৩৫ হাজার ২৬৩টি কেন্দ্র ও ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৭টি ভোটকক্ষ ছিল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত