
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের যোদ্ধারা। জুলাই অভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধারা গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে শাহবাগ অবরোধ করেন। জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং স্থায়ী বিধানে যুক্ত করা ও জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিতে ‘জুলাই যোদ্ধা সংসদ’ ব্যানারে এই কর্মসূচি করা হয়। এ সময় তারা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে ‘ ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘রক্ত লাগলে রক্ত নে, জুলাই সনদ দিয়ে দে’ এ ধরনের নানান স্লোগান দেন।
শাহবাগ মোড় অবরোধে অবস্থানরত আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হলে গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে নিতে চাইলে ধাক্কাধাক্কি ও বাগবিতণ্ডা তৈরি হয়। চট্টগ্রাম থেকে আসা মো. মিজান নামে একজন আন্দোলনকারী বলেন, আমাদের অবরোধ করা ব্যারিকেড পুলিশ টেনে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এবং তারা সেটা নিয়ে যায়। আমাদের কর্মসূচি বন্ধ করতে বলে তখন আমরা এগিয়ে গেলে বাগতিতণ্ডা হয়। উপস্থিত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা শুধু আমাদের ব্যারিকেড সরিয়ে নিয়েছি। তাদের ওপর কোনো লাঠিচার্জ বা তাদের কর্মসূচি বন্ধ করতে কোনো চাপ দেওয়া হয়নি। ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়ার কারণে মূলত তারা বাগবিতণ্ডা শুরু করে।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করে চারপাশ ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এতে ওই এলাকায় সৃষ্টি হয় যানজট। অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে যান। বাড়তি ভাড়া গুণতে হয় রিকশায়। শাহবাগ মেট্রো স্টেশনের সামনে পুলিশের জলকামান ও পরিবহন বাস দেখা গেলেও স্টেশনের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান করেন একাধিক আন্দোলনকারী। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে বলেও জানান তারা। অবরোধে অংশ নেওয়া আবু হাসান বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত জুলাই সনদ ঘোষণা করা না হবে তাদের কর্মসূচি চলবে।
অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি, শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা, শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা, আহতদের সকল চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা, আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা, শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তা কেন্দ্র গঠন করা, শহীদ ও আহতদের ওপর সংঘটিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদ-ে বিচারকার্য সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, অবরোধের ফলে শাহবাগ মোড় ও এর আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
দাবি না মানা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলতেই থাকবে বলে জানান মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা সৌরভ। তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্রের সঙ্গে বারবার আলোচনা করেছি, কিন্তু রাষ্ট্র বারবার আমাদের সঙ্গে টালবাহানা করেছে। এখন আমাদের কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েও কাজ হবে না, সমস্ত প্রতিশ্রুতির বাইরে গিয়ে আমাদের জুলাই সনদ আর ঘোষণাপত্র দিতে হবে। নাহলে আমরা এই কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। নাজির আহমেদ খান নামে আহত এক আন্দোলনকারী বলেন, উপদেষ্টামণ্ডলীকে বলে দিতে চাই, আমরা রক্ত দিয়েছি। আমরা আর রক্ত দিতে ভয় পাই না। যারা স্বৈরাচার হটাতে জীবন দিয়েছেন তারা জাতির সূর্যসন্তান। আমাদের মৃত্যুর ভয় দেখাবেন না। গুম, হত্যার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। সতেরটা বছর সব রাজনৈতিক দল ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু এই জাতির সূর্যসন্তানরা যখন রাস্তায় নেমে এসেছে তখন হাসিনা এক মাসের মাথায় পালাতে বাধ্য হয়েছে। দাবির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দুটি দাবির জন্য এখানে এসেছি। জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে এবং জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে। এই দুই দাবি না মানলে আমরা রাজপথ ছাড়বো না। বাবু ইসলাম নামে অন্য একজন আন্দোলনকারী বলেন, আমাদের জুলাইযোদ্ধার কার্ড দেওয়া হয়েছে। আমরা জুলাইযোদ্ধার কার্ড দিয়ে কী করবো? আমাদের আহত ভাইয়েরা হাসপাতালে গেলে তারা ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্যকার্ড দিয়ে আমাদের মুলা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, আমাদের জুলাই সনদ দেওয়া হোক। নাহলে পরে কোনো সরকার আসলে, তারা আমাদের বিরুদ্ধে যে কোনো মামলা-হামলা করতে পারে। আমরা সেই ঝামেলায় পড়তে চাই না। আমাদের জুলাই সনদ দিলে আমরা রাজপথ ছেড়ে দেবো।