ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত ৫ আগস্ট প্রকাশ

জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত ৫ আগস্ট প্রকাশ

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালায়। এতে প্রায় দুই হাজার মানুষের মৃত্যু এবং ২৫ হাজারের কাছাকাছি আহত হয়েছেন। এরপরও আন্দোলন থেকে বিন্দুমাত্র পিছু হটেনি ছাত্র-জনতা। বরং মাসব্যাপী টানা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে গত বছরের ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালাতে বাধ্য হন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও ছাত্র-জনতার বিজয়ের এক বছরের মাথায় আগামী মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকাল ৫টায় জাতির সামনে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

গতকাল শনিবার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জুলাই পুনর্জাগরণ র‌্যালি শেষে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার রূপকল্প হচ্ছে জুলাই ঘোষণাপত্র। এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার দালিলিক প্রমাণ। আগামী ৫ আগস্ট বা তার আগেও জুলাই ঘোষণাপত্র হতে পারে। জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ তৈরির কাজ চলছে। আগামী ৫ আগস্ট বা তার আগে এই সনদ সই হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, ‘অভ্যুত্থানকে জনস্মৃতিতে রাখতে মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন ১৫টি দপ্তর-সংস্থার অধিকাংশই জুলাই গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক ঘটনাপ্রবাহের তথ্য প্রচার, ডকুমেন্টস (প্রমাণক) সংরক্ষণ এবং প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে কাজ করছে। বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভি গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক প্রামাণ্যচিত্র ও অনুষ্ঠান প্রচার করছে। তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি) ও প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) গণঅভ্যুত্থান নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ করছে। এর পাশাপাশি চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বেশ কিছু প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দলিলাদি সংরক্ষণে এরইমধ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত সাংবাদিকদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, দলমত-নির্বিশেষে মানুষ এই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন। গণঅভ্যুত্থানের শেষ পর্যায়ে সব পেশাজীবী বিশেষ করে শিক্ষক, সমাজকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মীরা রাজপথে নেমে এসেছিলেন। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারকে প্রতিবাদ ও বিজয়ের অনুষঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখান (কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার) থেকে গণঅভ্যুত্থান শুরু করেছিলাম, এখানে এসে বিজয় উদযাপন করতে পেরেছিলাম।’ মাহফুজ আলম বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের আমরা যতদিন স্মরণে রাখবো, আহতদের মর্মপীড়া যতদিন অনুভব করবো; ততদিন আমরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবো।’ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে সরকার অনেকগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; তার মধ্যে একটি বড়ো অংশের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথে সরকার এগোতে পেরেছে।’

গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমরা শহিদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে নতুনভাবে স্বাধীনতা পেয়েছি, নতুনভাবে দেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি। তিনি দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।’ এর আগে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা লিখেছেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র এখন বাস্তবতা। ৫ আগস্টের মধ্যেই ঘোষিত হবে ঘোষণাপত্র। ঘোষণাপত্র ইস্যুকে গণআকাঙ্ক্ষায় বাঁচিয়ে রেখে এটা বাস্তবায়নের পথ সুগম করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আগামী মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকাল ৫টায় গণঅভ্যুত্থানের সব পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত অবিলম্বে ঘোষণা করা হবে।’

জুলাই ঘোষণাপত্র আসছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ৩৬ জুলাই আন্দোলনে শিল্পীদের রাজপথের ভূমিকা তুলে ধরেন ফেসবুকে পোস্টে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া লিখেছেন, ‘হত্যার বিচার ও চলমান দমন-পীড়ন বন্ধের দাবিতে রাজপথে নামেন শিল্পীরা। সকাল ১১টায় সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি থাকলেও খামারবাড়ি মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ তাদের পথ আটকে দেয়। বাধা পেরিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে স্লোগান দিতে দিতে তারা পৌঁছান ফার্মগেট। যেখানে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে রাজপথেই প্রতিবাদ চালিয়ে যান।’

গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত বিষয় জুলাই ঘোষণাপত্র। অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি সামনে রেখে সম্প্রতি জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দলকে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ২৬টি দফা রয়েছে। প্রথম ২১ দফায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের পটভূমি বর্ণনা করা হয়েছে। পরের ৫টি দফায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।

জানা গেছে, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আসে। বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর ওই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচি দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ২৯ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নাৎসি বাহিনীর মতো অপ্রাসঙ্গিক এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের ‘কবর’ রচনা করা হবে।’

প্রথমে সরকার এর সঙ্গে যুক্ত না হলেও পরে সরকারের তরফ থেকে ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগের কথা বলা হয়। সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির কাজ চলে। চলতি মাসের প্রথমার্ধে জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির মতামত নেওয়া হয়। এরপর প্রণীত খসড়ার ওপর দলগুলোর ফের মতামত চায় সরকার। এখন সেই খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত