
ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন সমন্বয়ক ও বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্যে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে। সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন নাহিদ ইসলাম।
সরকার পতনের একদফা ঘোষণা ও একইসঙ্গে জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানানো হয়। পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ জনতা রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সমবেত হন। এতে শহিদ মিনার চত্বর জনসমুদ্রে রূপ নেয়। সেখানেই একদফাসহ অসহযোগের কর্মসূচি ঘোষণা হলে উত্তাল জনসমুদ্রের ঢেউ ওঠে। দেশের সব নাগরিককে অসহযোগ কর্মসূচি সফল করার আহ্বানও জানান বক্তারা।
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে উপস্থিত শিক্ষার্থী-জনতা করতালি দিয়ে এ কর্মসূচিকে স্বাগত জানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা একদফা দাবির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। একদফা হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ এই সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদের বিলোপ।’ তিনি বলেন, ‘শুধু শেখ হাসিনা নয়, মন্ত্রিসভাসহ পুরো সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ করতে হবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে চাই, যেখানে আর কখনো কোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্র-ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে।’
এই সমাবেশে ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, খুনি সরকারকে টেনে নামাতে সারা দেশের মানুষকে অসহযোগ আন্দোলন সফল করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনারা আপনাদের পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিগুলো পালনের আহ্বান জানাবেন এবং এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেবেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা এক মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করেন। একপর্যায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা করে। কয়েকদিনের হামলায় দুই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। এরপরই শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। দেশের ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদে ও ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
ওই দিন রাজধানীর মিরপুর-১০, সায়েন্সল্যাব, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল, যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া, উত্তরা, খিলগাঁওসহ অনেক এলাকায় শান্তিপূর্ণ মিছিল, বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন হয় মহাখালী ও মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায়ও। এসব বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়াদের মাথায় লাল কাপড় ও জাতীয় পতাকা দেখা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় সমবেত হন। তারা সেখানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান শেষে ৩টার আগে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের দিকে যাত্রা শুরু করেন। ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের দিকে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগ দেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে একের পর এক মিছিল গিয়ে থামে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। সেখানে ছাত্র-জনতার ঢল নামে, একপর্যায়ে তা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। সেখানে অনেকের হাতে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে,’ ‘জাস্টিস জাস্টিস উই ওয়ান্ট জাস্টিস,’ ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিবো রক্ত,’ ‘স্বৈরাচারের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে,’ ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো,’ ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর,-শিক্ষার্থীদের এসব স্লোগানে শহিদ মিনার এলাকা প্রকম্পিত হতে থাকে। এখানে আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন শিল্পীদের একাংশসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। বিকাল ৫টার পর এই আন্দোলনের সমন্বয়করা বক্তব্য শুরু করেন। পরে একদফা দাবি আদায়ের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই সমাবেশেই নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আসিফ মাহমুদ অসহযোগ আন্দোলনের বিষয়ে ১৫ দফা নির্দেশনা ঘোষণা করেন।
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সমাবেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে সব হত্যা, গুম ও নিপীড়নেরও বিচার হবে বলে জানান অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের একদফা হলো এই সরকারের পতন এবং ফ্যাসিবাদের পতন। এই সরকারের লুটপাট, দুর্নীতিসহ সবকিছুর বিচার নিশ্চিত করা। আগের সব হত্যা, গুম ও নিপীড়নেরও বিচার করতে হবে। সব রাজবন্দির মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা প্রয়োজনে জেলমুক্ত করে আমাদের ভাইদের নিয়ে আসব। তিনি বলেন, আমরা জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি যে, স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থান শুরু হয়ে গেছে, তার সঙ্গে এসে যোগ দিন। পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় সংগঠিত হোন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আমরা খুব দ্রুতই ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের জন্য সর্বস্তরের নাগরিক, ছাত্র সংগঠন ও সব পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে মিলে সম্মিলিত মোর্চা ঘোষণা করব। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় রূপরেখা আমরা সবার সামনে হাজির করব। তার আগ পর্যন্ত জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে নামার আহ্বান জানায়।
কারফিউ প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, যদি কোনোভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়, কারফিউ দেওয়া হয়, জরুরি অবস্থা দেওয়া হয়, আমরা তা আজকে থেকেই প্রত্যাখ্যান করি। আমরা প্রয়োজনে গণভবন ঘেরাও করে সরকার উৎখাতের ব্যবস্থা করব। ইতিহাস বলছে, ছাত্র নাগরিককে এখন দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদেরকেই আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকার যদি জনগণের বিপক্ষে দাঁড়ায় তাহলে সেই জনগণের কথা শুনতে আপনারা আর বাধ্য নন। খুনি সরকারকে সমর্থন না দিয়ে ছাত্র-নাগরিকের পাশে দাঁড়ান।
ওই সমাবেশে সমন্বয়কদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে বক্তব্য রাখেন মানজুর আল মতিন, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. খান জহিরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রুহুল আমিন। আর এই অংশের সঞ্চালনা করেন গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাহফুজ আলম। অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, আমি এখানে এসেছি আপনাদের গণআন্দোলনে সংহতি প্রকাশে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে একটি কথা মনে রাখতে হবে যাতে জাতীয় ঐক্য কোনোমতেই ব্যাহত না হয়। সংস্কৃতিকর্মী আজমেরি হক বাঁধন বলেন, আপনাদের সঙ্গে অনেক মানুষ এসেছে। বিশ্বমাধ্যম শিল্প সংঘ থেকে আমরা আজকে আপনাদের সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছি। আপনারা দেখিয়েছেন কীভাবে অধিকার আদায় করতে হয়। আপনাদের সঙ্গে আমরা আছি। অধ্যাপক ড. খান জহিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক সমাজের কাছ থেকে আরও বেশি প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু আমি দুঃখিত তাদের পক্ষ থেকে তারা তা পারেননি। আন্তর্জাতিক আদালতে ছাত্র-জনতার হত্যার বিচার করতে হবে।
২০২৪ সালের ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- কুড়িল-বাড্ডা-রামপুরা : রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা থেকে কুড়িল এলাকা পর্যন্ত প্রগতি সরণির মূল সড়কের বিভিন্ন স্থানে শনিবার বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। একই সঙ্গে গুলশানেও অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। তাদের অবস্থানে এসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিভিন্ন পেশার মানুষকেও দেখা গেছে। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শিক্ষক-অভিভাবকরাও সংহতি প্রকাশ করতে আসেন। সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর আফতাবনগর ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় দলে দলে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে আফতাবনগরের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে থাকেন। ওই সময়ে পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য সড়কের পাশে অবস্থান নেন। দুপুর ২টার দিকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আফতাবনগরের প্রধান ফটকের সামনের সড়ক দখল নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। ‘কাঁদতে আসেনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি; আর দিব না করতে আঘাত, শক্ত করো প্রজার হাত; গণহত্যার বিচার করো নইলে গদি খালি করো; লাশের মধ্যে জীবন দে নইলে গদি ছেড়ে দে; আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না; আমার ভাই কবরে খুনি কেন বাহিরে, প্রশাসন জবাব চাই জবাব চাই- এমন স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল শিক্ষার্থীদের হাতে।
বিক্ষোভ চলাকালে আফতাবনগরের গেটের পাশেই ছিলেন পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য। এছাড়া মালিবাগ আবুল হোটেলের গলিতে অবস্থান নেন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে যেন কেউ নাশকতা করতে না পারে সেজন্য তারা অবস্থান নিয়েছেন বলে জানান বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সালাম। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কোনো নাশকতাকারী ঢুকে যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে এজন্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। তবে যাতে নাশকতা জড়িয়ে না পড়ে সেজন্য এ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এর আগে বেলা ১১টায় ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজ, গুলশান কমার্স কলেজ, রামপুরা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা আসেন। প্রায় ২ ঘণ্টার মতো ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়ার পর দুপুর ২টার দিকে সড়ক অবরোধের জন্য রাস্তায় চলে আসেন তারা।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা লাল কাপড় মাথায় বাঁধেন। বিকাল ৫টার দিকে তারা সড়ক ছেড়ে দেন। সম্মিলিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এরই অংশ হিসাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন নর্দান, নর্থ সাউথ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল, স্টেট, গ্রিন, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ও ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা।
অবরুদ্ধ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক : যাত্রাবাড়ী, কাজলা, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল ও সাইনবোর্ড এলাকায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এসব এলাকা ছোট ছোট মিছিল ও স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দেখা যায়। জোহরের নামাজের সময় হলে সড়কেই নামাজ আদায় করতে দেখা যায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ট্রাক-পিকআপ আড়াআড়ি রেখে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন তারা।
উত্তরা : রাজধানীর উত্তরায় জাতীয় পতাকা হাতে রাস্তায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন অভিভাবকরাও। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উত্তরার বিএনএস সেন্টারসংলগ্ন ৭ নম্বর সেক্টরের ৮নং রোডের সামনে দাঁড়িয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন।
তারা কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সরকারের অবস্থান ও কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা এবং প্রতিবাদ জানান। অবস্থান কর্মসূচি চলাবস্থায় বিএনএস সেন্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দিনভর সতর্ক অবস্থায় ছিলেন বিজিবি, পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
মায়ের সঙ্গে অবস্থান কর্মসূচিতে আসা ইস্পিতা নামের এক শিক্ষার্থী বলেছিলেন, আমাদের শিক্ষক-অভিভাবকরাও রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। একটা বাচ্চার মাথায় গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার মতো শিশুদের কেন মারা হলো-প্রশ্ন রাখেন তিনি। আলফাজ আনাম নামের একজন অভিভাবক বলেন, আমাদের ট্যাক্সের টাকায় কেনা গুলি আমাদের সন্তানদের বুকে আমরা দেখতে চাই না। আর একটি গুলিও যেন পুলিশ না চালায়। পরিস্থিতি এমন যে এখন আমরা আর ঘরে বসে থাকতে পারি না।